আজ ৪ জুলাই স্বামী বিবেকানন্দের মৃত্যুবার্ষিকী!
নিজস্ব সংবাদদাতা : আজ ১২২-তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হচ্ছে। স্বামী বিবেকানন্দ ১৮৬৩ সালের ১২ জানুয়ারি কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি নরেন্দ্র দত্ত হিসেবে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব থেকেই, তিনি জিনিসগুলি পড়তে এবং উপলব্ধিতে অসাধারণভাবে পারদর্শী ছিলেন। এছাড়াও, তিনি ছোটবেলা থেকেই খুব অনুসন্ধানী ছিলেন। কথিত আছে যে তিনি পুরো বইটি একবার পড়েই মনে করতেন। বিবেকানন্দের ছোটবেলা থেকেই ঈশ্বরকে জানার আগ্রহ ছিল। এই আগ্রহ দূর করার জন্য বিবেকানন্দ মহা ঋষি দেবেন্দ্র নাথকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন "আপনি কি কোন সময়ে ঈশ্বরকে দেখেছেন"? মহা ঋষি দেবেন্দ্র যখন এই প্রশ্নটি শুনেছিলেন, তখন তিনি এটি সম্পর্কে ভাবতে শুরু করেছিলেন এবং উত্তর পাওয়ার জন্য স্বামী বিবেকানন্দকে রামকৃষ্ণ পরমহংসের কাছে যেতে বলেছিলেন। পরে স্বামী বিবেকানন্দ রামকৃষ্ণ পরমহংসকে তাঁর গুরু হিসেবে বেছে নেন। মাত্র ২৫ বছর বয়সে , তিনি সন্ন্যাসী ধর্মে ধর্মান্তরিত হন এবং বহির্বিশ্বের প্রতি ভালবাসা ছেড়ে দেন। তারুণ্যকে যে কোনো জাতির উন্নয়নের মেরুদন্ড হিসেবে দেখা হয়, অনেকটা যেমন শরীরের মেরুদণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হলে শরীর সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না, তেমনি জাতির তরুণরা যদি কোনো অগ্রহণযোগ্য পথে চলতে শুরু করে, দেশের সমৃদ্ধির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। বিবেকানন্দ বিশ্বাস করতেন, দেশের উন্নতির জন্য তরুণদের শালীন মানসিকতা থাকা জরুরি। মাত্র ৩৯ বছর বয়সে দেহত্যাগ করেন স্বামী বিবেকানন্দ। তবে মানুষ বেঁচে থাকেন তাঁর চিন্তার মাধ্যমে, বাণীর মাধ্যমে। দেহ তো নশ্বর। জরা-ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে তা নষ্ট হবেই। ঠিক এই ভাবেই আমাদের মধ্যে আজও বেঁচে রয়েছেন স্বামী বিবেকানন্দ। যিনি ধর্মের বিচার না করে শুধুমাত্র মানুষের সেবা কথা বলে গিয়েছেন। আজকের এই ধর্মীয় হানাহানি-অসহিষ্ণুতার দিনে তাঁর বাণী আরও বেশি করে মনে করা উচিত। স্বামীজির মৃত্যুবার্ষিকীতে স্বামীজির এমনই দশ বাণীর দিকে চোখ রাখুন, যা নিঃসন্দেহে আপনাকে জীবনে এগোতে সাহায্য করবে।
৪ জুলাই ,১৯০২। আষাঢ়ের বর্ষণসিক্ত দিন সেদিন। ঘন মেঘে আঁধার হয়ে ছিল চারদিক। রোজের মতো ভোরবেলা ঘুম ভেঙেছিল স্বামীজির । উঠে নিত্যকর্ম সেরে বেলুড়মঠের প্রার্থনাগৃহে ধ্যানে বসলেন। টানা তিন ঘণ্টা পর তাঁর ধ্যানভঙ্গ হল। প্রাতরাশ খেয়ে ছাত্রদের নিয়ে পড়াতে বসলেন স্বামীজি। ব্যকরণ,দর্শন,বেদ পড়াতে পড়াতে বেলা হল। স্বামী প্রেমানন্দকে ডেকে নিয়ে গঙ্গার ধারে পায়চারি করতে করতে দরকারি কাজকর্মের কথা আলোচনা করলেন। রামকৃষ্ণ মঠের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে কিছু জরুরি নির্দেশ দিলেন।এমন সময় বেলুড়ের ঘাটে এসে ভিড়ল জেলে নৌকো। ইলিশ ভর্তি নৌকো দেখে স্বামীজি বেজায় খুশি। ইলিশ মাছ কেনা হল। উৎসাহভরে রান্নাঘরে গিয়ে ইলিশের ঝাল ঝোল অম্বল- নানা পদ রান্না করালেন বিবেকানন্দ। তারপর গুরুভাইদের সঙ্গে বসে বেশ খুশি মনে খেলেন মধ্যাহ্নভোজ। দুপুরে বিশ্রাম নেওয়ার অভ্যেস তাঁর ছিল না। চলে গেলেন লাইব্রেরিতে। কিছুক্ষণ অধ্যয়ন করে স্বামী প্রেমানন্দকে সঙ্গে নিযে ঘুরে এলেন বেলুড় বাজার। এরপর প্রার্থনাঘরে সন্ধ্যারতি দেখে সন্ধে সাতটার সময় ঢুকলেন নিজের ঘরে। বলে গেলেন কেউ যেন তাঁকে বিরক্ত না করে। ধ্যানে বসলেন স্বামী বিবেকানন্দ। ঘণ্টাখানেক পর হাঁক দিয়ে শিষ্যদের ডেকে বললেন ,'খুব গরম হচ্ছে। জানলা খুলে দাও।' কপালে তাঁর বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছিল। দেখে শিষ্যরা হাতপাখা দিয়ে বাতাস করতে লাগলেন। সেই ধ্যান আর ভাঙল না। স্বামীজি শুয়ে পড়লেন। মুখ থেকে কান্নার মতো একটা শব্দ বেরল। মাথা গড়িয়ে পড়ল বালিশ থেকে। মুখে লেগে রইল তৃপ্তির হাসি। রাত ন'টা দশে অমৃতলোকে পাড়ি দিলেন বীর স্বামী বিবেকানন্দ ।
১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দের বিশ্ব ধর্ম মহাসভায় ভারতবর্ষ ও হিন্দু ধর্মের প্রতিনিধিত্ব করেন এবং আমেরিকার শিকাগোতে তাঁর বিখ্যাত বক্তৃতা দেন স্বামীজি। তাঁর তেজময়ী ভাষণে মুগ্ধ হয়ে যান উপস্থিত শ্রোতারা। আমেরিকাতে বহু মানুষ এই হিন্দু সন্ন্যাসীর পরম অনুরাগী হয়ে ওঠেন।
জীবনে তিনটি আদর্শ চোখ বন্ধ করে মেনে চলার কথা বলেছেন স্বামীজী। তিনি বলেছেন, 'যারা তোমায় সাহায্য করেছে, তাঁদের কখনও ভুলে যেও না। যারা তোমাকে ভালোবাসে, তাদের কোনওদিন ঘৃণা করো না। আর যারা তোমাকে বিশ্বাস করে, তাদের কখনও ঠকিয়ো না।'