অমর ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস

অপূর্ব মজুমদার : আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হলো একুশে ফেব্রুয়ারি সমস্ত বাংলাভাষী অঞ্চলে পালিত একটি বিশেষ দিবস, যা ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দের ১৭ নভেম্বরে জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিবছর ২১শে ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাপী পালন করা হয়। এক শ্রেণির নেতাদের লোভ দেশভাগের মধ্যে দিয়ে স্বাধীনতা এল। পূর্ববাংলা পূর্ব পাকিস্থান হলো। কায়েদ আজম জিন্না ঘোষণা করলেন, 'Urdu and only Urdu shall be the state language of Pakisthan' আগুনে ঘি পড়ল। বাঙালি জান দেবে তনু মান দেবে না। তখন পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশ বাঙালি। মৌলানা ভাসানিকে সভাপতি করে ১৯৪৮ সালে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদ গঠিত হলো। কিছুদিনের মধ্যে ভাসানি গ্রেপ্তার হলেন। প্রতিবাদের ঢেউ উঠতে লাগল। তিন বছর ধরে লড়াই সংগ্রামে উত্তাল হলেন পূর্ব বাংলার ছাত্র-যুবসমাজ, বুদ্ধিজীবী মানুষ। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের হস্টেল থেকে আনা হল ভাষা আন্দোলনের প্রথম শহীদ বরকত এর দেহ। শহীদ হলেন রফিক, সালাম, সফিউর, ম' জব্বার সহ অনেকে। আল মাহমুদ লিখলেন-
হ সে বি গ ফু কু এব রান ফুট ছি
'ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ
দুপুরবেলার অক্ত,
বৃষ্টি নামে বৃষ্টি কোথায়?
বরকতের রক্ত।'
কবি আবদুল গফ্ফার লিখলেন-
'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো
একুশে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি।'
২২ ফেব্রুয়ারি সংঘটিত হলো ঐতিহাসিক হরতাল। ঢাকার জগন্নাথ কলেজ থেকে মিছিল বেরিয়েছিল লক্ষাধিক লোকের।
দুই বাংলার কবিদের কলম থেকে আগুন বাড়তে লাগল। কবি আবদুল লতিফ
লিখলেন
'ওরা আমার মুখের ভাষা
কাইড়্যা নিতে চায়,
ওরা কথায় কথায় শিকল পরায়
আমার হাতে পায়।'
কবি অমিতাভ চট্টোপাধ্যায় লিখলেন-
"দুই বাংলার এক জননী একুশে ফেব্রুয়ারি
একুশ তারিখ মন্ত্র আমার কখনো ভুলতে পারি
রক্ত দিলাম, জন্ম নিলাম, একুশে ফেব্রুয়ারি।"
করি গোলাম কুদ্দুস লিখলেন-
"বুকের রক্তে রাঙায়েছে যারা
মায়ের মুখের ভাষা
ডাক দিল ভালোবাসা।
শামসুর রহমান লিখলেন-
'বাংলাভাষা উচ্চারিত হলে
নিকানো উঠোনে ঝরে রৌদ্র,
বারান্দায় লাগে জ্যোৎস্নার চন্দন।।
উত্তাল নদীর বাঁকে বাঁকে,
নদীও নর্তকী হয়।'
রফিকের বাড়ি পূর্ববঙ্গে হলেও বিদ্যালয় শিক্ষা কলকাতার মিত্র ইনস্টিটিউশনে। ফেনি জেলার সন্তান সালাম চাকরি করতেন ঢাকায়। বরকতের জন্ম মুর্শিদাবাদ জেলার ভরতপুর থানার বাবলা গ্রামে। সফিউরের জন্ম হুগলী জেলার কোন্নগরে। চাকরি করতেন ঢাকায় জব্বারের বাড়ি ময়মন সিংহে। মাতৃভাষার টানে ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলনে দুই বাংলার রক্ত মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। মাতৃভাষার সম্মান রক্ষার অধিকার সবার আছে। অনেক শাসন সেটা বুঝতে চায়না। ভারতের তামিলনাডুর আসামের শাসকরা সমস্যা সৃষ্টি করেছিল রেল স্টেশনে গায়ে আগুন ধরিয়ে এক যুবপকের উচ্চারিত ধ্বনি "ইডি ওড়িকা! তামিল বাড়কা।" ১৯৬১ সালের ১৯ শে মে আসামের বরাক উপত্যকায় প্রাণ দিলেন ১১ জন। কমলা ভট্টাচার্য, শচীন্দ্র পাল, চণ্ডীচরণ সূত্রধর, সুনীল সরকার, সুকোমল পুরকায়স্থ, কানাইলাল নিয়োগী, সত্যেন্দ্র দেব, নীরেন্দ্র সূত্রধর, তরণী দেবনাথ, মুকুন্দরঞ্জন দাস, হীতেন বিশ্বাস।
'বরাকে নিহত হয়েছিল যারা মাতৃভাষার টানে,
বহুলোক জানে অনেক কিছুই তাঁদের কজন জানে
ঢাকাতে, বরাকে ভেদ নেই কিছু সবার মাঝেই কই।
একুশে উনিশে মিলেমিশে সব এক জায়গাতে রই।'
২১শে ফেব্রুয়ারি-সবার মাতৃভাষাকেই সম্মান জানানোর দিন।