৫০ বছর ধরে মন্দির রক্ষায় লড়াই, মেলেনি জমির ক্ষতিপূরণ!

পশ্চিম মেদিনীপুর নিজস্ব প্রতিবেদন : ইয়াসিন পাঠান ,এক প্রাচীন মন্দির রক্ষা করেছেন তিনি।মন্দিরময় পাথরা। তিনি পশ্চিম মেদিনীপুরের বাসিন্দা। হিন্দুদের মন্দির রক্ষা করতে গোটা জীবন লড়াই চালিয়েছেন। সেই মানুষটির কিডনি বিকল হয়েছে। টাকা নেই বলে চিকিৎসা চালানোর জন্য ভিক্ষা করতে হয়। ইয়াসিন একসময় নিজের গ্রাম পাথরার বাসিন্দাদের বুঝিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে ২৫ বিঘে জমি তুলে দিয়েছিলেন। কিন্তু কুড়ি বছর পরও সে জমির জন্য ক্ষতিপুরণ পাননি গ্রামবাসীরা। মেদিনীপুর সদর ব্লকের এই এলাকায় হিন্দু মন্দির বাঁচিয়ে রাখতে এক মুসলমানের সংগ্রামের কথা ছড়িয়ে রয়েছে পরতে পরতে। পাথরা মানেই যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও ঐক্যের পীঠস্থান। পাথরা মানেই ইয়াসিন পাঠান। তাঁর আন্দোলনের জেরেই ২০০৩ সালে ৩৪টি মন্দির অধিগ্রহণের পরে ১৯টি মন্দির সংস্কার হয়। চলতি বছরের গোড়ায় কেন্দ্রীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ বিভাগের (আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার) প্রতিনিধি দল পাথরা পরিদর্শনে আসে। এখানে জমি অধিগ্রহণের একটা সমস্যা রয়েছে। সেই সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেয় দলটি। মন্দিরগুলো সংস্কার করে এলাকাকে সুন্দর করে সাজানোর আশ্বাসও দেয় ওই দল। পাথরা পুরাতত্ত্ব সংরক্ষণ কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ইয়াসিন। তিনি না এগিয়ে এলে হয়তো কালের গর্ভে তলিয়ে যেত মন্দিরগুলো। টেরাকোটার শিল্পসমৃদ্ধ মন্দিরগুলো সংরক্ষণের আবেদন নিয়ে ২০০০ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে গিয়েছিলেন তিনি। এ বার পাথরায় পর্যটন- পরিকাঠামো গড়ে তোলার কাজ শুরু করতে চলেছে রাজ্য সরকার। কেশিয়াড়ির মঞ্চ থেকে এই প্রকল্পের শিলান্যাস করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কংসাবতীর পাড়ে পাথরায় ঝোপের আড়ালে ক্ষয়ে যাচ্ছিল হিন্দু দেবদেবীর ৪২টি প্রাচীন মন্দির। ভগ্নপ্রায় স্থাপত্যগুলির এ হেন দশা নাড়িয়ে দিয়েছিল ওই গ্রামের বাসিন্দা কিশোর ইয়াসিনকে। এরপর ছেলেটি শুরু করে ‘মন্দির বাঁচাও আন্দোলন।’ যার জেরে কেন্দ্রীয় সরকার নড়ে বসতে বাধ্য হয়। ২০০৩ সালে পাথরার ৩৪টি মন্দির ও সংলগ্ন প্রায় ২৫ বিঘে জমি অধিগ্রহণ করে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (এএসআই)। তারপর গত কুড়ি বছরে কংসাবতীর বুক দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। কিন্তু এক টাকাও ক্ষতিপূরণ পাননি জমির মালিকরা। ৫০ বছর ধরে মন্দির রক্ষায় লড়াই করা ইয়াসিন এখন পৌঁছেছেন বার্ধক্যে। তাঁর বয়স ৭১। মন্দির বাঁচানোর লড়াই করে ১৯৯৪ সালে পেয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি পুরস্কার। সেই মানুষটি বিকল কিডনির চিকিৎসার টাকা জোগাড় করতে কার্যত দোরে দোরে ভিক্ষা করেন এখন। বৃদ্ধ বলেন, ‘মন্দির বাঁচানোর লড়াই করতে গিয়ে কাছের মানুষরা দূরে চলে গেলেন। মন্দিরের সমর্থকরা ভাবলেন আত্মপ্রচারের জন্য এসব করছি। যাঁদের বুঝিয়ে সরকারের হাতে জমি তুলে দিলাম, ক্ষতিপুরণ না পাওয়ায় তাঁদের কাছে খলনায়ক হয়ে গিয়েছি। এরপর রাষ্ট্রপতি পদক রেখে কী লাভ। ওই পদক ফেরত দিয়ে দেব।’ এএসআই সূত্রে জানা গিয়েছে, নবান্ন থেকে ফাইল না ছাড়ার ফলে টাকা আটকে আছে। নবান্নর এক কর্তা জানিয়েছেন, অর্থদপ্তরে ফাইল পৌঁছেছে। পাথরায় অধিগৃহীত জমির দাম ধার্য হয়েছে এক কোটি ৭৮ লক্ষ ৭৮ হাজার ৯৬৫ টাকা। অধিগ্রহণের সময় জমির মালিকের সংখ্যা ছিল ৪৫। দু’দশকে জমি মালিকদের পরিবার বেড়েছে। ভাগিদারের সংখ্যা এখন ১১৬। ইয়াসিন জানিয়েছেন, বারবার কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকে চিঠি দিয়েছেন তিনি। রাজ্য সরকারি কর্তাদের কাছেও গিয়েছেন। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি।