মেদিনীপুরে তরুণ থিয়েটার আয়োজিত পাঁচ দিনের নাট্যোৎসব শেষ হলো!
পশ্চিম মেদিনীপুর নিজস্ব সংবাদদাতা : মেদিনীপুরের তরুণ থিয়েটারের উদ্যোগে মেদিনীপুর শহরের শহীদ প্রদ্যোৎ স্মৃতি সদনে আয়োজিত পাঁচদিনের নাট্যোৎসব শেষ হলো বৃহস্পতিবার রাতে। রবিবার সন্ধ্যায় 'এপার বাংলা, ওপার বাংলা' শীর্ষক এই নাট্যোৎসবের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব রওশন জান্নাত রুশনী। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুশান্ত চক্রবর্তী। ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব অশোক প্রামাণিক,খোরসেদুল আলম প্রমুখ।এর পূর্বে এদিন সকালে অভিনয় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পার্থ মুখোপাধ্যায় সহ মোট৭ জন নাট্যকর্মীকে সম্বর্ধনা জানানো হয়। প্রথমদিনে মঞ্চস্থ হয় সুরজিৎ সেন রচিত ,নির্দেশিত তরুণ থিয়েটারের বহুল আলোচিত নাটক 'বৃত্তের বাইরে' । অভিনয়ে নজর কাড়েন শম্পা মুখার্জি, বিশ্বজিৎ কুন্ডু, স্বাতী ব্যানার্জী, তপন সেনগুপ্ত, সুরজিৎ সেন প্রমুখ।দ্বিতীয় নাটক ছিল বাংলাদেশের ঢাকার দল অভিনীত 'কী চাহ শঙ্খচিল' নাটকটি। এই নাটকে ওপার বাংলার খোরসেদুল আলম, রওশন জান্নাত রুশনীর সাথে এপার বাংলার তরুণ থিয়েটারের শিল্পী দীপশিখা চক্রবর্তী দাপিয়ে অভিনয় করেন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনে পরিবেশিত হয় তরুণ থিয়েটারের 'ফেসবুক ম্যারেজ', বাংলাদেশ শব্দ নাট্য চর্চা কেন্দ্রের 'বীরাঙ্গনার বয়ান,' কলকাতার ব্লাইড অপেরার 'টেলস্কোপ ও 'মুখ চাই মুখ" মহিষাদল শিল্পকৃতির 'মুখ চাই মুখ' তমলুকের আনন্দলোক ড্রামটিকের 'আমার আমি' নাটক গুলি। নাট্যকারের জীবনের টানা পোড়েন নিয়ে শান্তনু মজুমদারের 'আমার আমি" নাটকে অসাধারণ অভিনয় করেন আনন্দলোক ড্রামাটিকের অরিন্দম প্রধান ,সুচরিতা মাইতি কবি মিশ্র সহ অন্যান্যরা।ব্লাইড অপেরার দুটি নাটকেও দুরন্ত অভিনয় করেন শিল্পীরা। ফেসবুক ম্যারেজ সহ অন্যান্য নাটক গুলিও দর্শকদের হৃদয় জয় করে নেয়। চতুর্থ দিন তরুণ থিয়েটারের মঞ্চস্থ করে চুয়াড় বিদ্রোহের প্রেক্ষাপটে এক ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে সুরজিৎ সেনের লেখা 'বীরাঙ্গনা রাণী শিরোমনি' নাটক'টি।' মেদিনীপুরের লক্ষীবাঈ' নামে পরিচিত 'রাণী শিরোমনি'র জীবনগাথা নির্ভর এই নাটটিকতে, সুরজিৎ সেনের নির্দেশনায় ও দীপশিখা চক্রবর্তীর নৃত্য পরিকল্পনায়,৭৪ জন শিল্পী সমন্বয়ে নাচে,গানে,অভিনয়ে একটি জমজমাট ও দুঃসাহসিক নাটক উপস্থাপনা করেন তরুণ থিয়েটারের শিল্পীরা।রাণীমার চরিত্রে দীপশিখা চক্রবর্তীর সাথে সাথেই অভিনয়ে নজর কাড়েন বিশ্বজিৎ কুন্ডু, অসীম বসু, সত্যব্রত দোলই, হেদয়াতুর খান, শান্তি দত্ত, হিমাদ্রী মণ্ডল, দয়াময় প্রামাণিক, অভিজিৎ দে, অনুপম চন্দ,স্বস্তি মুখার্জি, মধুমিতা শীল, উপাসনা ভট্টাচার্য, তাপসী দে,পূর্ণ নাগ প্রমুখ।ঐ দিনের অন্য দুটি অসাধারণ প্রযোজনা ছিল গড়বেতাথ আমরা নবীনের নাটক 'রাস্তা' ও খড়গপুর আলকাপর নাটক 'মন'। পাঁচ এদিন অভিনয় প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ করা হয়।অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবন্ধক জয়ন্ত কিশোর নন্দী, জেলা বিচারক সুরঞ্জনা চক্রবর্তী, জেলা তথ্য আধিকারিক বরুণ মণ্ডল প্রমুখ। নাট্যোৎসবের শেষ বৃহস্পতিবার মঞ্চস্থ হয় ঈশিতা মুখোপাধ্যায়ের লেখা নাটক 'ভূত'। এই নাটকে কলকাতার 'উষ্ণিক' নাট্য দলের হয়ে অভিনয়ে দর্শকদের মন জয় করে নেন বিশিষ্ট দুই অভিনেতা দেবশঙ্কর হালদার,শুভাশিস মুখার্জি। উৎসবের শেষ নাটক হিসেবে পরিবেশিতয় হলদিয়া সংশপ্তকের নাটক 'রাজদন্ড'। গুঞ্জন প্রসাদ গাঙ্গুলীর লেখা এই নাটকটি যুগজিৎ নন্দের নির্দেশনায় দুরন্ত ভাবে উপস্থাপন করেন নাট্যশিল্পী কুনাল নন্দ ও সহ শিল্পীরা। এই নাটকে অসাধারণ সঙ্গীত পরিবেশন করেন সোমা পন্ডা নন্দ। ব্যঙ্গাত্বক এই নাটকটি নাট্যপ্রেমী দর্শকের হৃদয় জয় করে নেন। পূর্ণ প্রেক্ষাগৃহে উপস্থিত দর্শকদের মুহুর্মুহু উচ্ছ্বাস প্রমাণ করে দেয় তরুণ থিয়েটার এর এই নাট্যোৎসব সর্বাঙ্গীন রুপে সফল। পাঁচ দিন ব্যাপী এই নাট্যোৎসব সঞ্চালনায় ছিলেন অরুণাভ প্রহরাজ, হিমাদ্রী মণ্ডল, করবী বিশ্বাস ও স্বাতী বন্দ্যোপাধ্যায়। এত বড় মাপের একটি নাট্যোৎসব সাফল্য মন্ডিত হওয়া তরুণ থিয়েটারের পক্ষে অংশগ্রহণকারী নাট্যদল সমূহ, দর্শকমন্ডলী,প্রশাসন, বিজ্ঞাপন দাতা,শুভানুধ্যায়ী, উপদেষ্টা মন্ডলী, পৃষ্ঠপোষক মন্ডলী, আজীবন সদস্য সহ সমস্ত সদস্য-সদস্যা সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিনন্দন, ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন সুরজিৎ সেন ও বিশ্বজিৎ কুন্ডু।