বাংলাদেশে স্নানে যাবার পথে কিশোরীকে ধর্ষণের পর হত্যা, এক তরুণীকে চলন্ত ট্রেনে ধর্ষণ!
ঢাকা জাকির হোসেন : বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলায় এক কিশোরীকে স্নান করতে যাওয়ার পথে তুলে নিয়ে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। এদিকে ফের চলন্ত ট্রেনে ধর্ষিত হল এক তরুণী! সিলেট থেকে চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেসে এই ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বরখাস্ত করা হয়েছে ওই ট্রেনের গার্ডকে। জানা গিয়েছে, ওই তরুণী ট্রেনের প্যান্ট্রি কারে ছিলেন। সেখানেই তিনি যৌন নির্যাতনের শিকার হন।
কিশোরী ধর্ষণের পর হত্যা করার বিষয়ে খবর, ২৮ জুন শুক্রবার সন্ধ্যায় ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার পৌর সদরের ৮ নম্বর হোগলাডাঙ্গী সদরদী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত কিশোরী হোগলাডাঙ্গী সদরদী গ্রামের রেখা আক্তার৷ তার বয়স ১৫ বছর। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে স্নান করার জন্য বাড়ির পাশে পুকুরে যায় রেখা। সেখানে আগে থেকে ওত পেতে থাকা দুষ্কৃতকারীরা তাকে পুকুর পাড়ের পাটক্ষেতে ধরে নিয়ে ধর্ষণ করে। পরে দুষ্কৃতকারীরা রেখার ওড়না দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে পাটক্ষেতে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। বিকাল পাঁচটার দিকে রেখার চাচা টুকু মাতুবর পাটক্ষেতের পাশ দিয়ে ধান বুনতে মাঠে যাওয়ার পথে রেখাকে দেখে চিৎকার দেন। পরে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দিলে ভাঙ্গা পুলিশের একটি দল রেখার মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। ভাঙ্গা থানার এসআই খালিদ হাসান জানান, 'প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে কিশোরী গোসল করতে যাওয়ার সময় দুষ্কৃতকারীরা পাটক্ষেতে ধরে নিয়ে ধর্ষণ করার পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় আসামি শনাক্ত করে ধরার চেষ্টা চলছে এবং মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।'
এদিকে চলন্ত ট্রেনে তরুণী ধর্ষণের ব্যাপারে রেলওয়ে পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, নির্যাতিতা তরুণী উদয়ন এক্সপ্রেসের প্যান্ট্রি কারে ছিলেন। সেই সময় ট্রেনে খাবার সরবরাহকারী সংস্থা এসএস করপোরেশনের কয়েকজন কর্মী তাঁকে প্রথমে উত্ত্যক্ত করে। তার পর ওই বগিতে ২৬ জুন বুধবার ভোররাতের দিকে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন নির্যাতিতা। ঘটনার পরই এসএস করপোরেশনের তিন কর্মীকে গ্রেপ্তার করে রেলওয়ে পুলিশ। পরে আরও একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। মহম্মদ জামাল (২৭), মহম্মদ শরিফ (২৮), মহম্মদ রাশেদ (২৭) ও আব্দুর রব রাসেল (২৮)কে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
এ নিয়ে চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার ওসি এসএম শহিদুল ইসলাম বলেন, 'অভিযুক্তদের আদালতের নির্দেশে জেলে পাঠানো হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। নির্যাতিতা বর্তমানে পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন। তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে রাখা হয়েছে।' রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মহম্মদ নাজমুল ইসলাম জানিয়েছেন, 'চলন্ত ট্রেনে ধর্ষণের ঘটনা মর্মান্তিক ও অনাকাঙ্ক্ষিত। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি ইতিমধ্যে জিআরপি থানায় ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ট্রেনের গার্ডকেও বরখাস্ত করা হয়েছে। রেলওয়ে এসএস করপোরেশনের ক্যাটারিং লাইসেন্স অনির্দিষ্টকালের জন্য বাতিল করেছে। এ বিষয়ে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে।'
এদিকে এই ঘটনায় ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। কমিটির সদস্যরা বৃহস্পতিবার সেই ট্রেনে কর্মরত বেশ কয়েকজন কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলেছেন। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক আনিসুর রহমান বলেন, 'আমরা তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছি। সেদিন উদয়ন এক্সপ্রেসে কর্মরত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেছি। আগামী সপ্তাহের মধ্যে তদন্তের রিপোর্ট জমা দেব। এর পর মূল ঘটনার বিস্তারিত জানা যাবে।'
প্রসঙ্গত, এর আগেও বাংলাদেশে চলন্ত ট্রেনে বিভিন্ন সময় শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণের শিকার হয়েছেন মহিলা যাত্রীরা। গত ৫ বছরে এরকম ১০টি ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। এর মধ্যে ৮টিতেই জড়িত রেল কর্মীরা।