২০২৫ সালে নতুন সরকার আসছে বাংলাদেশে!

ঢাকা, জাকির হোসেন: নতুন সরকার আসতে যাচ্ছে বাংলাদেশে৷ ২০২৫ সালের মধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেওয়া হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) ঢাকায় একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে এ কথা বলেন তিনি। নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় নিয়ে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান আভাস দেওয়ার পর এই প্রথম কোনো উপদেষ্টা বিষয়টি নিয়ে সরাসরি কথা বললেন। সেনাপ্রধান বলেছিলেন, আঠারো মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তাঁরা কাজ করছেন৷ উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল তুমুল বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন যেটি হাসিনা সরকারের আমলে করা হয়েছিল, তা বাতিল হবে বলেও জানালেন। এই ব্যাপারে তিনি বলেন, 'ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন আমরা পুরোটাই বাতিল করার প্রক্রিয়ায় আছি। মানুষ এই নামগুলোই শুনতে পারে না।' এছাড়া মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কোনো সাংবাদিকের বিচার হবে এমন কথা আগে বলেননি বলে তিনি উল্লেখ করেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচারের বিষয়ে বন্দী বিনিময় চুক্তির কথা উল্লেখ করে আইন উপদেষ্টা বলেন, 'এই চুক্তি ভারত মানলে তাদের শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে দেওয়া উচিত। এই চুক্তি সঠিকভাবে মানলে তারা শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য।' ঢালাও মামলা দায়েরের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, বিগত হাসিনা সরকারের সহযোগিতায় গায়েবি মামলা হতো। এগুলো পুলিশ করত। মামলাগুলি তৎকালীন বিরোধীদলের লোকদের বিরুদ্ধে হতো। এখন হচ্ছে ঢালাও মামলা। যারা পূর্বে নির্যাতনের শিকার হয়েছিল তারাই এই মামলা করছে। এই মামলাগুলিতে যাতে নিরাপরাধ লোক শাস্তি না পান সে বিষয়ে কাজ করছে অন্তর্বর্তী সরকার। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা হবে এটা বলেননি উল্লেখ করে তিনি বলেন, দায়ী না হলে তাদের বিরুদ্ধে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার হবে না। আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার আগ বাড়িয়ে কিছু করবে না। তবে তাদের নিষিদ্ধ করার দাবি বড় হয়ে উঠেছে। জনপ্রত্যাশা তৈরি হলে নিষিদ্ধ করা হবে। তারা অতীতে কী কাজ করেছে তা সব গণমাধ্যমে এসেছে। দেশবাসী দেখেছে। নির্বাচন কমিশনের জন্য কিছু দিনের মধ্যে সার্চ কমিটি গঠন করা হবে বলেও জানান আসিফ নজরুল। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য জনগণের কাছে ক্ষমা চেয়ে তিনি বলেন, তরকারির এত দাম যে বিক্রি কমে গেছে। বন্যার কারণে ডিমের সাপ্লাই কমে গেছে। গত সরকারের আমলে সব নিয়ন্ত্রণ হতো সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। তিনি বলেন, তবে এটুকু বলতে পারি সামনে পরিস্থিতি উন্নতি হবে। বহুক্ষেত্রে উন্নতি হয়েছে। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'বিগত সরকারের সময় একজন বিচারক বলেছিলেন তিনি শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ। আরও অনেকে অনেক কিছু করেছেন। দেশে এত গুম-খুন হলো, ভুয়া নির্বাচন হলো বিচারকরা কিছুই বললেন না। অনেক বিচারক বিচারবিভাগকে ধ্বংস করেছেন। আওয়ামী লীগের আইনজীবীরা প্রধান বিচারপতির উপর আক্রমণ করেছেন। যারা এসব করেছেন তাদের আওয়ামী লীগ প্রমোশন দিয়েছে৷ এই বিচারবিভাগকে শেখ হাসিনা সরকার যেখানে নামিয়েছে, বিচারবিভাগের সবচেয়ে বড় সর্বনাশ করেছেন উনি। বিচারবিভাগকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। বিচারবিভাগকে মানুষের ঘৃণা এবং ক্রোধের জায়গায় পরিণত করেছেন। এমন অবস্থা ছিল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কথা বলা যেত, কিন্তু বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে কথা বলা যেত না। এখন সেখানে যে বিশৃঙ্খলা হচ্ছে এগুলো আওয়ামী লীগের কাজের ফল৷ বিগত সরকারের কথা তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে যত সর্বনাশ হচ্ছে, সবকিছু ১৫ বছরের ফ্যাসিস্ট সরকারের বাই প্রোডাক্ট বা অনিবার্য রিফ্লেকশন হয়ে গেছে৷' প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলা প্রসঙ্গে আইন উপদেষ্টা বলেন, 'খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যখন এতিমের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আসে উনি অবাক হয়ে বলেছেন, এতিমের টাকা আমি আত্মসাৎ করেছি! অথচ সেটা নিয়ে বিচারক লিখলেন-উনি (খালেদা জিয়া) স্বীকার করেছেন। এই রকম একজন জনপ্রিয় নেত্রীকে দিনের পর দিন নির্মম কারাজীবনের মধ্যে থাকতে হয়েছে। উনারা কি বিচারক ছিলেন? উনাদের বিবেকের কাছে প্রশ্ন করলাম।' তিনি বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস একটা প্রতিকার চাইতে গেছেন, বিচারকরা নাকি ইমব্যারাসড, শুনবেন না। আমি কমপ্লেইন জানাতে গেলাম, তারা শুনবেনই না। অবশ্য এখানে ভালো বিচারক আছেন। আমাদেরকে নির্মোহভাবে, গভীরভাবে বিচার করতে হবে। ৭০ দিন হলো উপদেষ্টামণ্ডলীতে দায়িত্ব পালন করছেন, কোনো ভুল কি হয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'ভুল তো হতে পারে। কারণ আমার অভিজ্ঞতাও কম। কিন্তু এটা বলতে পারি- জেনে বুঝে অন্যায় করিনি। আমার নীতিগত ভুল হতে পারে। তবে ব্যক্তিগত স্বার্থে কোনো কাজ করিনি।'