১৬ অক্টোবর থেকে চিরতরে বন্ধ হয়ে গেল মেদিনীপুর শহরের সবচেয়ে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী সিনেমা হল ‘হরি সিনেমা’!

পশ্চিম মেদিনীপুর সেখ ওয়ারেশ আলী : পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মেদিনীপুর শহরের সবচেয়ে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী সিনেমা হল ‘হরি সিনেমা’ বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর থেকে চিরতরে বন্ধ হয়ে গেল। শহরের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের এক অবিচ্ছেদ্য অধ্যায়ের ইতি ঘটল আজ। শহরবাসীর কাছে এটি এক গভীর বেদনা ও নস্টালজিয়ার মুহূর্ত।ভারতের স্বাধীনতার সময় কালেই শহরের বল্লভপুরে হরিচরণ সাউ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এই সিনেমা হলটি। ১৯৪৭ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ‘কৃষ্ণলীলা’ ছবির মাধ্যমে পর্দা ওঠে হরি সিনেমা’র। এরপর একে একে ‘চন্দ্রলেখা’, ‘নাগিন’, ‘আনারকলি’র মতো জনপ্রিয় চলচ্চিত্র মাসের পর মাস চলেছিল এই পর্দায়। দীর্ঘ সাত–আট দশক ধরে মেদিনীপুর শহরের মানুষের বিনোদনের একমাত্র ঠিকানা ছিল এই প্রেক্ষাগৃহ।

পরবর্তীকালে শহরে আরও দুটি সিনেমা হল খোলা হলেও হরি সিনেমা তার ঐতিহ্য, জনপ্রিয়তা ও আবেগ অটুট রেখেছিল। বহু প্রজন্মের স্মৃতিতে মিশে আছে এখানে সিনেমা দেখা, বন্ধুদের সঙ্গে বিকেল বেলার আড্ডা, কিংবা প্রিয় ছবির হাউসফুল টিকিটের লম্বা লাইন। বর্তমানে সিনেমা হলটির মালিকানা ছিল ফিল্ম ডিস্ট্রিবিউটর নওল কিশোর থারাডে-র হাতে। প্রযুক্তির পরিবর্তন, অনলাইন স্ট্রিমিং এবং মাল্টিপ্লেক্স সংস্কৃতির আগমনে ধীরে ধীরে ক্ষীণ হয়েছে এই একদা-জ্বলজ্বলে পর্দার আলো।প্রখ্যাত সিনেমা সমালোচক ও প্রাবন্ধিক সিদ্ধার্থ সাঁতরা বলেন, “হরি সিনেমা শুধু একটি হল নয়, এটি মেদিনীপুরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক। এই বন্ধ হওয়া মানে শহরের ইতিহাস থেকে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় মুছে যাওয়া।”এখন শহরবাসীর সিনেমা দেখার জন্য যেতে হবে কলকাতা বা খড়্গপুরে। যতদিন না নতুন কোনো মাল্টিপ্লেক্স বা ইনক্স চালু হচ্ছে, ততদিন মেদিনীপুরের চলচ্চিত্রপ্রেমীদের মনে অপূরণীয় শূন্যতা থেকে যাবে। শেষ আলো নিভে গেল, কিন্তু ‘হরি সিনেমা’র পর্দায় ফুটে থাকা স্মৃতি চিরকাল রয়ে যাবে শহরবাসীর হৃদয়ে।