বাংলাদেশে সেনা পেল ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা, ঢাকায় রাষ্ট্রসংঘ টিম!

ঢাকা, জাকির হোসেন : স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা সরকারের পতন-পরবর্তী বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও গত জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি চলাকালে মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্ত করতে ঢাকায় রয়েছে রাষ্ট্রসংঘের প্রতিনিধিদল। রাজনৈতিক পরিস্থিতি পুরোপুরি শান্ত, তা বলা যায় না একেবারে৷ দিনভর এসব নিয়েই চলে আলোচনা। এরই মধ্যে আচমকা খবর এল— বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে বিশেষ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দিচ্ছে বর্তমান সরকার৷ সেনাবাহিনীর কমিশন্ড কর্মকর্তাদের এ ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে। মানে, প্রয়োজনে তাঁরা গ্রেপ্তার, মামলা দায়ের কিংবা ছোটখাটো বিচারও করতে পারবেন। ঢাকা-সহ গোটা দেশে ১৭ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার রাত থেকেই এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়ে গেল নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের নির্দেশে। আগামী দু’মাস এই বিশেষ ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার ভোগ করবে সেনাবাহিনী। সরকারি সূত্রের দাবি, ‘দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর ১৮৯৮’-এর ১২ (১) ধারা অনুযায়ী, নিজ কর্মক্ষেত্রে আগামী দু’মাসের জন্য সেনা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা পাবেন। এই সময়ে তাঁরা ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮-এর ধারা ৬৪, ৬৫, ৮৩, ৮৪, ৮৬, ৯৫ (২), ১০০, ১০৫, ১০৭, ১০৯, ১১০, ১২৬, ১২৭, ১২৮, ১৩০, ১৩৩ ও ১৪২ ধারার ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন৷ জনগণের সুবিধার জন্য সেনাবাহিনীকে এই ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার (বিচারিক ক্ষমতা) দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী৷ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘সেনাবাহিনী যেহেতু অনেকদিন ধরে মাঠে আছে, তাদের তো একটা ক্ষমতার মধ্যে থেকে কাজ করতে হবে। আবার আমাদের অন্যান্য বাহিনীর মধ্যে স্বল্পতা রয়ে গেছে, এটা পূরণ করার জন্য সেনাবাহিনী আনা হয়েছে। আর এ সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রি পাওয়ারটা ভোগ করবে বাংলার জনগণ।’ এদিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রকের সিনিয়র সচিব ড. মোখলেস উর রহমান বলেছেন, ‘জননিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করতেই সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে সেনাবাহিনী।’ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন বিশেষজ্ঞ ইরফান রহমান মানুষ পত্রিকাকে বলেন, ‘দেশের স্বার্থেই এই সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে। সরকার যাতে প্রয়োজনে সেনাবাহিনীকে কাজে লাগাতে পারে। গার্মেন্টস কারখানা এলাকায় গত কয়েক সপ্তাহে যা ঘটেছে, তাতে আইনশৃঙ্খলা একদমই নিয়ন্ত্রণে নেই। পুলিশও কার্যত ফেল। তাই হয়তো সেনাকে এই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।’ প্রাক্তন সচিব এ কে এম আব্দুল আউয়াল মজুমদার বলেন, ‘অতীতেও জাতীয় সংকটে সেনাকে এই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। মন্দ কিছু দেখছি না। আসলে, নতুন সরকার আসার পর আমরা অতিরিক্ত আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছি। দাবি-দাওয়ার পাহাড় নিয়ে নেমে পড়েছি। এজন্য চরম বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হচ্ছে৷ এর ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করছে ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচারের দোসররা৷ নতুন সরকারের পক্ষে সব দাবি রাতারাতি পূরণ করা তো সম্ভব নয়। সময় দরকার৷ পোশাক শিল্প এবং বিভিন্ন খাতের পেশাজীবীদের এই বাস্তবতাটা বুঝতে হবে।’ তবে বাহিনীকে সতর্ক হয়েই এই দায়িত্ব পালন করতে হবে বলে মনে করিয়ে দেন তিনি।