মিনিটখানেকের ভূমিকম্পে তছনছ বাংলাদেশ, মৃত অন্তত ৬!

ঢাকা, জাকির হোসেন: সকাল ১০টা ৩৮। আচমকা তীব্র ঝাঁকুনিতে কেঁপে উঠল রাজধানী ঢাকা-সহ বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ এলাকা। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের কম্পনেই তছনছ বহু এলাকা। পুরনো ঢাকার কসাইটুলিতে পাঁচতলা ভবনের রেলিং ভেঙে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু অন্তত তিন পথচারীর—নিশ্চিত করেছে বংশাল থানা পুলিশের ডিউটি অফিসারএসআই আশিস কুমার ঘোষ। মৃতদেহ রাখা হয়েছে মিটফোর্ড হাসপাতালেনারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে দেওয়াল ধসে প্রাণ গেল বছরখানেকের এক শিশুর। আহত শিশুর মা এবং প্রতিবেশী। এ ছাড়া সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল জানিয়েছে, মৃতদের মধ্যে একজন কলেজছাত্রীও রয়েছেন। আরেকজনের পরিচয় এখনও জানা যায়নি। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর জানাচ্ছে, রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ৫.৭। কেন্দ্রস্থল নরসিংদীর মাধবদী, ঢাকা থেকে মাত্র ৭০ কিলোমিটার দূরে। মার্কিন ইউএসজিএস বলছে, তীব্রতা ৫.৫; উৎপত্তিস্থল নরসিংদীর ঘোড়াশাল, ১০ কিলোমিটার গভীরে। কম্পন টের পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আতঙ্কে ঘর থেকে রাস্তায় ছুটে বেরিয়ে আসেন ঢাকা, চাঁদপুর, নীলফামারী, সীতাকুণ্ড, সিরাজগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, পটুয়াখালি, বগুড়া, বরিশাল, মাগুরা, মৌলভিবাজারের মানুষ। বহু এলাকায় ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে—জানিয়েছে দমকল বাহিনী। ঢাকার উত্তরা ১১ সেক্টরে ছয়তলা একটি ভবনের দ্বিতীয় তলায় চারদিকেই ফাটল। পঙ্গু হাসপাতালের সামনের অংশ থেকে ওপরে পর্যন্ত বড় ফাটল। খিলগাঁওয়ে নির্মাণাধীন ভবন থেকে দোতলা বাড়ির ছাদে ইট পড়ে এক ব্যক্তি জখম। স্বামীবাগে আটতলা একটি ভবন হেলে পড়েছে। কলাবাগানের আবেদখালি রোডেও সাততলা ভবন হেলে যাওয়ার খবর মিলেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আতঙ্কে হল থেকে লাফিয়ে পড়তে গিয়ে আহত হয়েছেন অন্তত কয়েকজন ছাত্র। বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের প্রথম বর্ষের ছাত্র নূরুল হুদার পা ভেঙেছে। মুহসিন হল ও জিয়াউর রহমান হল থেকে লাফিয়ে আরও কয়েকজন জখম হয়ে চিকিৎসাধীন।টঙ্গির বিসিক এলাকার একটি পোশাক কারখানায় হুড়োহুড়িতে প্রায় ২০০ শ্রমিক আহত হয়েছেন। মিরপুর স্টেডিয়ামেও টের পাওয়া যায় কম্পন। বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড টেস্ট ম্যাচ প্রায় তিন মিনিট বন্ধ থাকে। ইতিমধ্যেই রাজধানীর স্বামীবাগ, বাড্ডা লিংক রোড, টঙ্গি রেলস্টেশন রোড-সহ বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি হেলে পড়ার খবর পেয়েছে প্রশাসন। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ চলছে।অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “গত পাঁচ বছরে এমন কম্পন অনুভব করিনি। এটি সতর্কবার্তা। বহু পুরনো ভবন ভূমিকম্প-সহন নয়—৯০ শতাংশই ঝুঁকিপূর্ণ।” বাংলাদেশের ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ হুমায়ুন আখতার জানান, “এটি সমসাময়িক সময়ে সর্বোচ্চ মাত্রার কম্পন। যে অঞ্চলে উৎপত্তি, তা ইন্দো-বার্মা টেকটোনিক প্লেটের অংশ।” এখনও ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণ হিসেব মেলেনি। তবে স্পষ্ট—মিনিটখানেকের কম্পনেই চমকে উঠেছে গোটা দেশ।