৫ লাখ না দিলে দুর্গাপুজো হবে না, বাংলাদেশে মন্দিরে মন্দিরে উড়োচিঠি, বাংলাদেশে হুমকি চিঠি মৌলবাদীদের!
ঢাকা, জাকির হোসেন: দুর্গাপুজো করতে হলে প্রতিটি মন্দিরের পক্ষ থেকে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দিতে হবে—এরকম উড়োচিঠি পেয়েছেন বাংলাদেশের খুলনার দাকোপ উপজেলার বিভিন্ন মন্দিরের পুজো উদ্যাপন কমিটির নেতারা। এই কথা প্রশাসন বা সাংবাদিকদের জানালে ‘কচুকাটা’ করা হবে বলে চিঠিতে হুমকি দেওয়া হয়েছে। চিঠি পাওয়ার পর থেকে এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে তীব্র উদ্বেগের উন্মেষ হয়েছে। কোনো কোনো মন্দির পুজো না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) ওই এলাকার বিভিন্ন মন্দিরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের কাছে এই চিঠি আসা শুরু হয়েছে। গত শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) এই ঘটনায় উপজেলার ভিন্ন চারটি মন্দিরের পক্ষ থেকে দাকোপ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। দাকোপের কামারখোলা সর্বজনীন দুর্গাপুজো উদ্যাপন কমিটির সভাপতি শেখর চন্দ্র গোলদার বলেন, ‘এই বছর জাঁকজমক করে পুজো না করে খুব ছোট পরিসরে পুজো আয়োজনের আলোচনা চলছিল। তবে এ ধরনের চিঠি পাওয়ার পর আমাদের সদস্যরা আর আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এই বছর আমাদের পুজোটা বন্ধ রাখতে হচ্ছে। দাকোপের একটি মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানালেন, ডাকযোগে চিঠি পাওয়ার পর থেকে তাঁদের মধ্যে একধরনের উদ্বেগ কাজ করছে। বুধবার চিঠি পাওয়ার পর তাঁরা রাতে এলাকার মানুষজনের সাথে সভা করেছিলেন। সেখানে বেশির ভাগ মানুষ এরকম হুমকি আসায় পুজো না করার পক্ষে মত দেন। পরে সবাই মিলে পুজো করার সিদ্ধান্তেই অটল থাকেন। এখন থেকেই এলাকায় প্রতিদিন পাহারা দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। তবে কিছু মন্দির কমিটি পুজো না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে৷ এসব চিঠির কপি গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিটি চিঠি কম্পিউটারে মুদ্রিত। তিনটি মন্দিরে পাঠানো চিঠি থেকে দেখা গেছে, সব ক'টি চিঠির বক্তব্য এক। হলুদ খামের ওপর প্রাপক মন্দির কমিটির ঠিকানা দেওয়া হয়েছে। মন্দিরের সভাপতি–সম্পাদকের উদ্দেশে এসব চিঠি লেখা হয়েছে। চিঠির এক জায়গায় উল্লেখ করা হয়েছে, ‘হানিফের প্রজেক্টে যেমন করেছি, তোদের পরিণতিও তেমন হবে৷' হানিফের প্রজেক্ট বিষয়টা কী—জানতে চাইলে শ্রীনগর গ্রামের কয়েকজন জানান, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর হাসিনার দল আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের চিংড়িঘেরে ব্যাপক লুটপাট চলে। কয়েক দিন ধরে চলে সে লুটপাট। এখনো সেখানে থাকা ছোটখাটো জিনিসপত্র লুটপাট চলছে। দাকোপ থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক (ওসি) সিরাজুল ইসলাম বললেন, ‘ওই উড়োচিঠিগুলোর বিষয়ে শুক্রবার চারটি মন্দির থেকে জিডি করা হয়েছে। আমরা তদন্ত করছি। আমাদের পক্ষ থেকে মন্দির সুরক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে। সেনাবাহিনীর টিমসহ আমরা থানা থেকে নিয়মিত টহল দিচ্ছি। গ্রাম পুলিশ ও ইউনিয়নভিত্তিক পুলিশ আধিকারিকরা সার্বক্ষণিক টহলে আছেন।’ বিষয়টি নিয়ে এই প্রতিবেদকের কথা হয় বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা ড. আবুল ফয়েজ মুহাম্মদ খালিদ হোসেন এর সাথে৷ তিনি বললেন, 'আগেই বলে দিয়েছি কোনো ক্রিমিনাল দুর্গাপুজোয় বাধা দিতে পারবে না৷ এই ব্যাপারে সরকারের সজাগ দৃষ্টি রয়েছে৷ বিভেদ সৃষ্টি করে দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছে যারা, তারাই এরকম উড়োচিঠি দিয়ে মানুষের মাঝে ভীতির সঞ্চার করছে৷ ভয়ের কোনো কারণ নেই৷ আমরা পূর্ণ নজরদারিতে রাখছি বিষয়গুলো৷ দুর্গাপুজোর এই উৎসব ঘিরে পুরো দেশজুড়ে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা আমরা নিশ্চিত করবো৷ নির্বিঘ্নে উৎসবের সাথেই বাংলাদেশে দুর্গাপুজো উদ্যাপন করা হবে নিশ্চয়তা দিচ্ছি৷'