রেল ইউনিয়নের ধর্মঘটে বাংলাদেশে স্তব্ধ রেল পরিষেবা, বাতিল শতাধিক ট্রেন, যাত্রীদের তুমুল ভোগান্তি; অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক!
ঢাকা, জাকির হোসেন: ব্যর্থ হয়েছে বৈঠক৷ অবশেষে দেশজুড়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ডাক দিল বাংলাদেশের রেলকর্মীদের ইউনিয়ন৷ দেশজুড়ে রেল ধর্মঘটের ফলে হওয়ায় সমস্যায় পড়েছেন হাজার হাজার যাত্রী, থমকে গিয়েছে মাল পরিবহন৷ উচ্চ পেনশন ব্যবস্থা-সহ একাধিক সুযোগ সুবিধার দাবিতে সোমবার বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে বসেন রেল ইউনিয়নের সদস্যরা৷ বৈঠক ফলপ্রসূ না-হওয়ায় ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা৷ বাংলাদেশের রেল কর্মী ও শ্রমিকদের নিয়ে তৈরি এই ইউনিয়নের সভাপতি সাইদুর রহমান জানান, তাঁদের দাবি মানা না-হলে এই ধর্মঘট চলবে ৷ তিনি বলেন, অতিরিক্ত সময় কাজ করলে আগে ভাতা দেওয়া হতো। তাঁরা মূল বেতনের সঙ্গে মাইলেজ ভাতা এবং রানিং অ্যালাউন্স যোগ করে পেনশন ও অন্যান্য সুবিধা দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন। এই দাবিতে গত তিন বছর ধরে আন্দোলন করছেন রেলের কর্মীরা। কিন্তু তাঁদের দাবি না মানায় বাধ্য হয়ে কর্মবিরতির ডাক দেওয়া হয়। কর্মীদের কর্মবিরতি শুরু না করার আবেদন করেছিলেন রেল মন্ত্রকের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান। কর্মচারী সমিতির সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি। তবে, রেলের আধিকারিকদের অনুরোধ মানতে নারাজ কর্মচারি সমিতি। শেষ অবধি এই আলোচনা ব্যর্থ হয়েছে৷ উল্লেখ্য, ১৭ কোটি জনসংখ্যার ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৬ কোটি ৫০ লক্ষ যাত্রী রেলের মাধ্যমে যাতায়াত করেন৷ সে দেশের রেলকর্মীর সংখ্যা হল প্রায় ২৫ হাজার৷ ঢাকার কমলাপুর স্টেশন সে দেশের ব্যস্ততম স্টেশনগুলির মধ্যে অন্যতম৷ ফলে, রেল ধর্মঘটের কারণে সবথেকে বেশি সমস্যায় পড়েছেন এই স্টেশনের নিত্যযাত্রীরা৷ শুধু ঢাকাতেই নয়, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনা, পঞ্চগড়, দিনাজপুর-সহ বিভিন্ন এলাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা।
তাঁরা জানান, ট্রেন চলাচল যে একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে তা তাঁরা কেউই জানতেন না৷ ট্রেন যে চলবে না, তা স্টেশনে এসেই তাঁরা জানতে পারেন৷ বিলকিস আরা বেগম, কামরুল হাসানের মতো যাত্রীরা বলেন, "আগে থেকেই ট্রেনের টিকিট কাটা ছিল। স্টেশনে এসে জানতে পারি যে ট্রেন চলবে না। আমরা এখন কীভাবে গন্তব্যে পৌঁছব বুঝতে পারছি না।" শীতের মধ্যে অনেকেই শিশুদের নিয়ে স্টেশনে এসেছেন। তাঁদের সমস্যা আরও বেশি। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে অনেকেই বিকল্প পথে যাত্রা শুরু করেছেন বলেও জানা গিয়েছে। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে মঙ্গলবার কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছন অন্তর্বর্তী সরকারের রেল উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান৷ তিনি বলেন, দেশজুড়ে এই ধর্মঘট মোটেই কাম্য নয়৷ সাধারণ মানুষের সমস্যা সমাধানের জন্য তিনি ধর্মঘট প্রত্যাহারের আবেদন জানান৷ সেই সঙ্গে তিনি জানান, আলোচনার পথ এখনও খোলা রয়েছে৷ সুতরাং, ইউনিয়নের সদস্যরা চাইলে তাঁদের দাবি নিয়ে ফের আলোচনায় বসতে প্রস্তুত সরকার৷ বাংলাদেশের বৃহত্তম বন্দরটি দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত৷ সেই এলাকা থেকে পোশাক শিল্পের জন্য পণ্য নিয়ে আসা যওয়ার জন্য মূলত রেল পরিষেবার উপর নির্ভর করতে হয়৷ এই শিল্পের মাধ্যমে আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলিতে বছরে প্রায় ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকার রফতানি করে বাংলাদেশ৷ কূটনীতিকদের মতে, শুধু যাত্রী দুর্ভোগ নয়, রেল ধর্মঘটের বিরূপ প্রভাব পড়তে চলেছে পোশাক শিল্পেও৷