বাংলাদেশে মোদীর দেওয়া উপহার সোনার মুকুট চুরিতে কড়া প্রতিক্রিয়া ভারতের, উদ্ধারে বিশেষ পুরস্কার ঘোষণা!

ঢাকা, জাকির হোসেন: চারদিন কেটে গেলেও বাংলাদেশের যশোরেশ্বরী কালী মন্দিরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপহার দেওয়া সোনার মুকুট উদ্ধার কিংবা দুষ্কৃতীদের শনাক্ত করার কাজ এখনও সম্ভব হয়নি। শনিবার (১২ অক্টোবর) এই চুরির ঘটনায় একটি মামলা রুজুর পরে সন্দেহভাজন চারজনকে আটক করা হয়েছে। সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার যশোরেশ্বরী কালীমন্দিরের সেবায়েত জ্যোতি প্রকাশ চট্টোপাধ্যায় বাদী পক্ষ হিসেবে এই মামলাটি দায়ের করেছেন। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জেলা গোয়েন্দা শাখাকে (ডিবি)। মামলার এজাহারে বাদী জ্যোতি প্রকাশ চট্রোপাধ্যায় উল্লেখ্য করেন, যশোরেশ্বরী মন্দির একটি তীর্থস্থান। ১৮০৯ সাল থেকে তাদের পূর্বপুরুষরা মন্দিরটি পরিচালনা করছেন। গত ২০২১ সালে নরেন্দ্র মোদী মন্দির পরিদর্শনকালে দেবীর মাথায় রুপার ওপর সোনার জলের রং করা মুকুটটি পরিয়ে দেন। প্রায় ৩০ ভরি ওজনের ওই মুকুটের মূল্য প্রায় লাখ টাকা। এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, পুরোহিত দিলীপ ব্যানার্জির কাছে মন্দিরের চাবি থাকে। তবে পরিচ্ছন্নতার জন্য মাঝেমধ্যে রেখা রানীকে পুরোহিত চাবি হস্তান্তর করেন। এমন এক অবস্থায় গত ১০ অক্টোবর আগত ভক্তদের সেবা দেওয়ার সময় মন্দিরের চাবি খুলে কাজের সময় পরিচ্ছন্নতা কর্মী রেখা অসাবধানতাবশত বাইরে চলে যায়। পরে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা দেবীর মাথা থেকে মুকুট খুলে নিয়ে পালিয়ে যায়। ইতিমধ্যে ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারে কাছে বিশেষ নোট পাঠিয়ে দুষ্কৃতীদের শনাক্ত করা ও মুকুটটি উদ্ধারে জোরালো পদক্ষেপের অনুরোধ করেছে। এ দিন ওই মন্দির পরিদর্শন করে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ দ্রুত দুষ্কৃতীদের গ্রেপ্তার ও চুরি যাওয়া মুকুট উদ্ধারের নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া মুকুট চুরির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে পারলে জেলা প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকে বিশেষ পুরস্কার দেওয়ার কথাও ঘোষণা করা হয়েছে। সোনার মুকুটটি যেন কোনও ভাবে বিক্রি অথবা কোনও অলঙ্কারের দোকানে গলানো বা ধরন পরিবর্তন করতে না করা যায়, সে জন্য দোকানগুলোয় বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে৷

বাংলাদেশের যশোরেশ্বরী মন্দির

সাতক্ষীরা জেলার পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম বলেন, 'এখনও মুকুট উদ্ধার হয়নি, তবে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।' এদিকে যশোরেশ্বরী কালী মন্দির থেকে সোনার মুকুট চুরি হয়ে যাওয়ার ঘটনায় কড়া প্রতিক্রিয়া জানাল ভারত। সেই সঙ্গে পুজোমণ্ডপে ও সংখ্যালঘুদের উপর হামলা নিয়েও গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার৷ শনিবার (১২ অক্টোবর) ভারতের বিদেশ মন্ত্রক থেকে এক বিবৃতিতে এই প্রতিক্রিয়া জানানো হয়৷ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা ঢাকার তাঁতীবাজারে একটি দূর্গাপুজো মণ্ডপে হামলা এবং সাতক্ষীরার যশোরেশ্বরী কালী মন্দিরে চুরির ঘটনাকে গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করেছি। এগুলি মর্মান্তিক ঘটনা এবং একটি নিয়মতান্ত্রিক প্যাটার্ন অনুসরণ করেই এমনটা হচ্ছে৷ মন্দির ও দেবতাদের অপবিত্র করা এবং ক্ষতি করার প্রবণতা বেশ কয়েকদিন ধরেই আমাদের নজরে আসছে।’ প্রসঙ্গত, শ্রী শ্রী যশোরেশ্বরী কালীমন্দির সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান, যা মা কালীর ৫১ পীঠের একটি। মন্দিরটি সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা সদর থেকে এক কিলোমিটার দূরে ঈশ্বরীপুর গ্রামে অবস্থিত৷ ২০২১ সালের ২৭ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ওই কালীমন্দির পরিদর্শনে এসে নিজ হাতে কালীপ্রতিমার মাথায় সোনার মুকুটটি পরিয়ে দিয়েছিলেন। গত বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে সেটি চুরি হয়ে যায়৷ ঘটনার একটি সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ্যে এলে ওই ভিডিয়োয় সাদা রঙের গেঞ্জি পরা এক যুবককে দুপুর ২টো ৪৯ মিনিট নাগাদ মন্দিরের ভিতরে প্রবেশ করতে দেখা যায়। এর পর তিনি দেবীমূর্তির সামনের পর্দা সরিয়ে হাত এগিয়ে দেন মূর্তির দিকে। কয়েক মুহূর্ত পরেই স্বর্ণমুকুট-সহ হাত বার করে আনেন। জামার পিছনের দিকে গুঁজে নেন মুকুটটিকে। এর পর আবার মন্দির থেকে বের হয়ে যান। গোটা ঘটনাটি ঘটে তিন মিনিটের মধ্যে। সিসিটিভি ফুটেজে দেখতে পাওয়া এই মূল চোর এখনও অবধি ধরা পড়েনি।সোনার মুকুটটি যেন কোনও ভাবে বিক্রি অথবা কোনও অলঙ্কারের দোকানে গলানো বা ধরন পরিবর্তন করতে না করা যায়, সে জন্য দোকানগুলোয় বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপার মহম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, 'এখনও মুকুট উদ্ধার হয়নি, তবে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।'

২০২১ সালে যশোরেশ্বরী কালী মন্দিরে পুজো দিতে গিয়ে কালীপ্রতিমার মাথায় সোনার মুকুট পরিয়ে দিচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷