বাংলাদেশে সোমবার শেখ হাসিনার রায়; করা হবে সরাসরি সম্প্রচার, সর্বোচ্চ সতর্কতায় দেশ!
ঢাকা, জাকির হোসেন: বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ (আইসিটি-১) সোমবার (১৭ নভেম্বর) প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর দুই ঘনিষ্ঠ সহযোগীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার রায় ঘোষণা করতে যাচ্ছে। এই রায় ঘিরে পুরো দেশজুড়েই সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করেছে ইউনূস সরকার৷রবিবার ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী মনোয়ার হোসেন তামিম জানান—রায়ের যে অংশ আদালতে পড়া হবে, তা বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি চ্যানেলে সরাসরি প্রচার করা হবে “চূড়ান্ত অনুমোদন সাপেক্ষে।” ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে বড় আকারের স্ক্রিনে লাইভ প্রদর্শনের পরিকল্পনাও করেছে সংস্কৃতি মন্ত্রক। সরকারি আধিকারিকদের দাবি—এই সম্প্রচার বিশ্বব্যাপী দর্শক পাবে।
অভিযুক্ত তিনজন—হাসিনা, প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও প্রাক্তন পুলিশপ্রধান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন—পাঁচটি অভিযোগের মুখোমুখি: খুন, নির্যাতন, প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার, জুলাই-আগস্ট ২০২৪ ছাত্র আন্দোলনের সময় আন্দোলনকারীদের হত্যা এবং দেহ পুড়িয়ে ফেলা। এদের মধ্যে মামুন বিচার চলাকালীন রাজসাক্ষী হয়ে যান। ৮,৭৪৭ পৃষ্ঠার চার্জশিটে ৫৪ জন প্রসিকিউশন সাক্ষ্য দিয়েছেন।
২৩ অক্টোবর রাষ্ট্রপক্ষের চূড়ান্ত যুক্তিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান আন্তর্জাতিক নজির উল্লেখ করে হাসিনা ও কামালের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন। মুখ্য প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন—হাসিনাই “দমন-পীড়নের মূল পরিকল্পনাকারী ও প্রধান স্থপতি।” প্রসঙ্গত, হাসিনা আগেই ট্রাইব্যুনালকে “ক্যাঙ্গারু কোর্ট” বলে বর্ণনা করেছিলেন। হাসিনা ও কামাল উভয়েই পলাতক। ৫ আগস্ট ২০২৪-এ ছাত্র আন্দোলনে সরকার পতনের দিনই হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। কামালও সেখানেই আছেন বলে মনে করা হচ্ছে। ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার তাদের প্রত্যর্পণের অনুরোধ জানিয়েছে, কিন্তু নয়াদিল্লি এখনও সাড়া দেয়নি। রায়ের আগের সপ্তাহজুড়ে অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনার পর সারা দেশে নিরাপত্তা জোরদার হয়েছে। ঢাকা, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর ও মাদারীপুরে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান—“আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রস্তুতি নিয়েছে,” লক্ষ্য “অপ্রিয় পরিস্থিতি ঠেকানো।” মামলাটি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বহু আন্তর্জাতিক সংস্থা। রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার দফতর যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, তাতে জুলাই আন্দোলনে ১,৪০০ জন পর্যন্ত নিহত হওয়ার কথা বলা হয়। আইসিটি মূলত ১৯৭১-এর যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত হলেও বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সংশোধনের ফলে হাসিনা-সহ প্রাক্তন ক্ষমতাসীনদের বিচার সম্ভব হয়েছে। হাসিনার বিরুদ্ধে দেশে আরও একাধিক মামলা রয়েছে; তাঁর অভিযোগ—সবই রাজনৈতিক নিপীড়নের অংশ। অন্যদিকে গত মাসে আওয়ামী লীগ হেগের আইসিসি-তে অভিযোগ জানিয়েছে—অন্তর্বর্তী সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। রায় ঘোষণার আর কয়েক ঘণ্টা বাকি। দেশজুড়ে টানটান উত্তেজনা—এই রায় বাংলাদেশের রাজনীতিকে কোন দিকে ঠেলে দেবে, তা নিয়ে দৃষ্টি এখন বিশ্বজুড়ে।