১৯৭১ প্রশ্নের সমাধান করে পাকিস্তানের সাথে জোরদার সম্পর্ক চায় বাংলাদেশ: উপদেষ্টা নাহিদ!

ঢাকা, জাকির হোসেন: ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে পাকিস্তানকে পরাজিত করার মধ্য দিয়ে পৃথিবীর বুকে জন্ম নেয় নতুন দেশ 'বাংলাদেশ'। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের সেখান থেকেই পথচলা শুরু। মুক্তিযুদ্ধ ঘিরে পাকিস্তানি বাহিনী যে গণহত্যা চালিয়েছিল, তা নিয়ে এখনও অবধি আনুষ্ঠানিক কোনো দুঃখ প্রকাশ করেনি দেশটি। এবার ‘একাত্তরের প্রশ্নটির’ সমাধান চায় পাকিস্তান। এ নিয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার এবং ডাক, টেলিযোগোযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামকে আলোচনার প্রস্তাবও দিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমদ মারুফ৷

১ সেপ্টেম্বর রোববার বাংলাদেশ সচিবালয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের সভাকক্ষে দ্বিপাক্ষিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে অনুষ্ঠিত আলোচনায় এ প্রস্তাব দেন পাকিস্তানের হাইকমিশনার। উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামকে পাকিস্তানের হাইকমিশনার আহমদ মারুফ বলেন, ‘আমরা ১৯৭১-এর প্রশ্নটির সমাধান করতে চাই। কিন্তু গত সরকার (আওয়ামী লীগ) আমাদের আলোচনার কোনো সুযোগ দেয়নি এবং ইচ্ছা করেই ৭১ ইস্যুটাকে জিইয়ে রাখতো। চাইলে বহু আগেই এটির সমাধান করা যেত। আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে আগ্রহী।’ জবাবে উপদেষ্টা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‌‌‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ১৯৭১ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আওয়ামী লীগের আদর্শে ১৯৭১ ছিল ইতিহাসের শেষ অধ্যায়। কিন্তু আমরা মনে করি, এটি ইতিহাসের ধারাবাহিকতা। ১৯৪৭ বা পাকিস্তান আন্দোলন ছাড়া বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হতো না। আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে ৭১-এর প্রশ্নটির সমাধান করতে চাই।’

দুই মন্ত্রকের দায়িত্বপ্রাপ্ত এই উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘একটি গণতান্ত্রিক দক্ষিণ এশিয়ার জন্য আমাদের পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করা প্রয়োজন। আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় স্বার্থকে সমুন্নত রেখে যে কোনো দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে আগ্রহী।’

বাংলাদেশে পাকিস্তানি টেলিভিশন চ্যানেল দেখা যায় না জানিয়ে বিষয়টি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামকে অবগত করেন পাকিস্তানের হাইকমিশনার। এ বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি। এছাড়া পাকিস্তানের হাইকমিশনার বাংলাদেশের বন্যাদুর্গতদের জন্য সহযোগিতার প্রস্তাব দেন। জবাবে উপদেষ্টা নাহিদ বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। এই মুহূর্তে কোনো সাহায্যের প্রয়োজন নেই৷ প্রয়োজন হলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হবে।’ পাকিস্তানের হাইকমিশনার আরও বলেন, ‘সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে ১৫ বছর পাকিস্তানিদের নানানভাবে হয়রানি করা হয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে আসার জন্য ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে এবং বিমানবন্দরে পাকিস্তানিরা হয়রানির শিকার হয়েছেন।’ এ সমস্যা সমাধানে তিনি উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। সৈয়দ আহমদ মারুফ বলেন, ‘পাকিস্তান সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন করে। তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান দুই দেশই খুব ভালো করছে। তাই এক্ষেত্রে উভয় দেশ যৌথভাবে কাজ করতে পারে।’ এ সময় নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘উপনিবেশবিরোধী লড়াই থেকে শুরু করে পাকিস্তান আন্দোলন পর্যন্ত বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের জনগণের দীর্ঘ ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। ইন্দো-মুসলিম সভ্যতার অংশ হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ-পাকিস্তানের সাংস্কৃতিক ও সভ্যতাগত সম্পর্ক রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘একটি গণতান্ত্রিক ও ভারসাম্যপূর্ণ দক্ষিণ এশিয়া গড়তে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করা প্রয়োজন। মুসলিমপ্রধান দেশ হিসেবেও পাকিস্তানের জনগণের সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণের গভীর বন্ধন রয়েছে। যদিও বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি বাংলাদেশকে বিশেষত্ব দিয়েছে।’

পারস্পরিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করে আলোচনা শেষ হয়৷ সাক্ষাৎকালে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- পাকিস্তান হাইকমিশনের কাউন্সিলর কামরান দাঙ্গাল, বাণিজ্যিক আধিকারিক জায়িন আজিজ‌, বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচার এবং ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের ঊর্ধ্বতন আধিকারিকরা৷