শতবর্ষে বেলিয়া পঞ্চমী মেলা' র এবারের থিম বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ!

নিজস্ব সংবাদদাতা : মেদিনীপুর সদর ব্লকের চাঁদড়া ২নং গ্রাম পঞ্চায়েতের পঞ্চায়েতের অন্তর্গত বেলিয়া গ্রামে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বেলিয়া পঞ্চমী মেলা ও উৎসব-২০২৫।এই বছর এই মেলা শতবর্ষে পদার্পণ করেছে। ৬ দিনের এই মেলা চলবে ১০ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। শতবর্ষে পদার্পণ করা এই মেলার এবারের থিম বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ। এই মেলা উপলক্ষ্যে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। শোভাযাত্রাতে পা মেলান এলাকার অসংখ্য সাধারণ মেলাপ্রেমী মানুষ ও ছাত্র-ছাত্রীরা ।প্রত্যেকের হাতে ছিল সময় বাল্য বিবাহ সচেতনতার ও অন্যান্য বিষয়ের সচেতনতা মূলক স্লোগান। শোভাযাত্রাতে পা মেলানোর পাশাপাশি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড: সুশান্ত কুমার চক্রবর্তী, বিধায়ক সুজয় হাজরা, মেদিনীপুর রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের মহারাজ শশধরানন্দ, মেদিনীপুর সদর ব্লকের বিডিও কাহেকশান পারভীন,মেদিনীপুর সদর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি উর্মিলা সাউ সহ-সভাপতি গৌতম দত্ত, বিশ্বশুক মিলন মঠ ও সেবাশ্রম সংঘের হরি মহারাজ,বিশিষ্ট গবেষক ও প্রাবন্ধিক অতনু মিত্র,কবি ও প্রধান শিক্ষক ড.প্রসূন কুমার পড়িয়া, রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বীরেন পাল, বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী শিক্ষক নরসিংহ দাস, বিশিষ্ট আইনজীবী দেবকুমার পান্ডা, প্রাক্তন শিক্ষক পরিমল মাহাতো,রাজীব বাস্কে, মলয় সিট, শিক্ষক সুদীপ কুমার খাঁড়া, শিক্ষক মণিকাঞ্চন রায় সহ অন্যান্য গুণীজনেরা।

ছিলেন স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান সহ অন্যান্য জনপ্রতিনিধি সহ অন্যান্য গুণীজনরা। একশত বছরের প্রাচীন এই মেলার মূল থিম বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ। সেই লক্ষ্যের ট্যাবলো সাজিয়ে বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো হয় এবং মেলার মঞ্চের পাশেই বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের জন্য গণস্বাক্ষর অভিযানের অভিনব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।শোভাযাত্রা শেষে একটি বটবৃক্ষের চারা মেলা চত্বরে রোপন,চারাগাছে জল সিঞ্চন,একশত প্রদীপ প্রজ্জ্বলন এবং একশত আতশবাজির রোশনাইয়ের প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে মেলার আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়।অতিথিবৃন্দের হাত দিয়ে ১০০ জন ছাত্র-ছাত্রীকে উপহার প্রদানের মধ্য দিয়ে উৎসাহিত করা হয় এবং একশত বর্ষকে স্মরণ করে একশত দুঃস্থ মানুষকে নতুন বস্ত্র দান করা হয়। মেলা প্রাঙ্গণে অঙ্কিত বেশকিছু চিত্রের মাধ্যমে একশত বছরের মেলা বিবর্তনের রূপ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। অন্যান্য অতিথিবৃন্দের উপস্থিতিতে উপাচার্য ড.সুশান্ত কুমার চক্রবর্তী প্রকাশ করেন 'শতবীণা' নামক স্মরণিকা পত্রিকা। এই পত্রিকায় লিপিবদ্ধ হয়েছে বিগত একশত বছরের মেলার ইতিহাস। বিগত দুই মাস ধরে ওই এলাকার বিভিন্ন প্রবীণ মানুষজনের সঙ্গে কথা বলে এবং আলোচনার মাধ্যমে তথ্য অনুসন্ধান করে মেলার একশত বছরের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করেছেন প্রখ্যাত প্রাবন্ধিক অতনু মিত্র। গ্রামবাংলায় এত প্রাচীন মেলা খুবই কমই আছে। মেলা কমিটির আয়োজকদের পক্ষে গনেশ চন্দ্র মাহাতো জানান আরো অনেক কিছু করার ইচ্ছে থাকলেও অর্থাভাবে তা সম্ভব হয়নি। কমিটির পক্ষে দশরথ দাস বলেন, সুদূর অতীতে মেলার উপার্জনের জন্য জুয়া খেলার আশ্রয় নেওয়া হতো কিন্তু বর্তমানে এই রাহু গ্রাস থেকে তাঁরা বেরিয়ে আসতে পেরেছেন। শুধু তাই নয় মেলাতে সমস্ত রকম মাদকদ্রব্য কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মেলার অন্যতম আয়োজক সেখ আফসার মেলাটি কচিকাঁচা থেকে বয়স্ক সবার কাছে একটি আনন্দের পরিবেশ গড়ে তোলে। গ্রামবাসীদের ব্যাক্তিগত চাঁদা ও শুভানুধ্যায়ীদের সহযোগিতায় এই মেলার আয়োজন করা হয়। প্রতিদিন মেলায় থাকছে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। মেলা প্রাঙ্গণকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য বিশেষ লক্ষ্য রাখা হয়েছে। উল্লেখ্য এই পঞ্চমী মেলা প্রাঙ্গণে অবস্থিত অস্থায়ী মন্ডপে একসাথে পূজিতা হন দেবী সরস্বতী ও দেবী লক্ষ্মী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন পত্রিকা সম্পাদক সঞ্জীব বিষই।মেলাকে সর্বাঙ্গীন সুন্দর করে তুলতে চেষ্টার ত্রুটি রাখছেননা মেলা কমিটির সম্পাদক শ্যামসুন্দর মাল, সভাপতি গণেশ চন্দ্র মাহাতো, সদস্য সঞ্জীব বিষই, হারাধন মাহাতো,সেখ আফসার,দশরথ দাস,বাপী মাল, হিমাংশু মাহাতো,নরেশ মাহাতো, সুজিত মাহাতো, কৌশিক বেরা সহ অন্যান্যরা।