দোলযাত্রা!

নিজস্ব সংবাদদাতা : রঙের উৎসব হোলি ভারতের অন্যতম বড় উৎসব, দুই দিন ধরে পালিত হয়। হোলির দিনে মানুষ পুরনো ক্ষোভ ভুলে একে অপরের গায়ে রঙ লাগিয়ে দেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে দোল উৎসব পালিত হয়। তবে, এই উৎসব মূলত বাঙালিরাই পালন করে থাকেন। আর, তার সূচনা হয়েছিল গৌড়বঙ্গে বৈষ্ণব ভাবধারার বিস্তারের মধ্যে দিয়ে। বৈষ্ণব ভাবধারার বিশ্বাস অনুযায়ী, দোল পূর্ণিমার দিন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আবির ও গুলাল নিয়ে শ্রীরাধা ও অন্যান্য গোপীদের সঙ্গে রঙের খেলায় মেতেছিলেন। আর, সেই কারণে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ-শ্রীরাধা ও তাঁদের সখী গোপীরাই দোলযাত্রা উৎসবের কেন্দ্রবিন্দু। দোলনায় দোল খাওয়ার সঙ্গেই উৎসবে মেতে ওঠা। আর, তা থেকেই দোলযাত্রা উৎসবের উৎপত্তি। শ্রীকৃষ্ণের এই লীলবিলাস কবে শুরু হয়েছিল।যেমন হিন্দু পুরাণে প্রায় দুই হাজার বছর আগে গোকুলে এই উৎসবের প্রচলন ছিল বলে জানা গিয়েছে। বেদ, ভবিষ্য পুরাণ, ও নারদ পুরাণে এই উৎসবের বর্ণনা রয়েছে। আবার জৈমিনির ‘পূর্ব মীমাংসা সূত্র’-য় দোলযাত্রার কথা উল্লেখ আছে। সংস্কৃত সাহিত্য ‘মালতি মাধব’-এ রয়েছে এই উৎসবের কথা। বিন্ধ্য পার্বত্য অঞ্চলে প্রাপ্ত লিপি থেকেও অনুমান করা হয়, খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ অব্দে এই উৎসবের প্রচলন ছিল।মহাকবি কালীদাসের ‘ঋতুসংহার’ কাব্যের বসন্ত বর্ণনায় দেখা গিয়েছে, যুবতী ও রমণীরা কৃষ্ণ চন্দন, কুসুম রং ও কুমকুম মিশ্রিত রঙে নিজেদের রাঙিয়ে তুলছেন। খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে সম্রাট হর্ষবর্ধনের লেখা ‘রত্নাবলী’ নাটকেও এই উৎসবের উল্লেখ রয়েছে। দক্ষিণ ভারতের বিজয়নগরের হাম্পিতে এক মন্দিরের দেওয়ালে এক রাজকুমার ও রাজকুমারীর রঙের উৎসবে মেতে ওঠার দৃশ্য খোদাই করা আছে।গৌড়বঙ্গে বা বাংলায় এই দোল উৎসবের সূচনা করেছিলেন শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু। ১৪৮৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি দোলপূর্ণিমা তিথিতে শ্রীচৈতন্যদেব জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর ভক্তদের কাছে এই তিথি তাই গৌরপূর্ণিমা নামেও পরিচিত। আধুনিক বাংলায় দোলযাত্রার সূচনা করেছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১৯২০ সালে শান্তিনিকেতনে তিনি দোলযাত্রা উৎসবের সূচনা করেন। তবে, সেটা দোল উৎসব হিসেবে নয়। বসন্ত উৎসব হিসেবেই শান্তিনিকেতনে দোলপূর্ণিমার দিন পালিত হয়। 

২০২৪ সালের দোল পূর্ণিমা পড়ছে ২৪ মার্চ সকাল ৯.৫৪ মিনিটে। ২৫ মার্চ দুপুর ১২. ২৯ মিনিটে সেই তিথি শেষ হবে। উদয়া তিথি অনুসারে ২৫ মার্চ পালিত হবে দোল পূর্ণিমা।

হোলিকা দহনের কাহিনি - হোলিকা দহন মূলত অশুভ শক্তির ওপর শুভ শক্তির জয়কে চিহ্নিত করা হয়। এই হোলিকা দহনের নেপথ্যে রয়েছে একটি পৌরাণিক কাহিনি। পূরাণ অনুসারে, রাক্ষসরাজ হিরণ্যকশিপুর অমরত্বলাভের জন্য ব্রহ্মার তপস্যা করেন। তপস্যায় খুশি হয়ে ব্রহ্মা তাঁকে ৫ টি বর দেন। এই ৫ টি বর হল- কোনও মানুষ বা কোনও প্রাণি তাঁকে মারতে পারবেনা, তাঁর মৃত্যু হবে না , দিনেে বা রাতে, ঘরের ভিতর বা বাইরে তাঁর মৃত্যু হবে না, শস্ত্র দ্বারা কেউ হিরণ্যকশিপুকে মারতে পারবে না।