বাংলাদেশ জুড়ে চন্দ্রবোড়া সাপের উপদ্রব, আতঙ্কে ঘরবন্দি হয়ে পড়ছে মানুষ, বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল!
ঢাকা জাকির হোসেন : বাংলাদেশ জুড়ে বাড়ছে চন্দ্রবোড়া সাপের উপদ্রব৷ এটি 'রাসেলস ভাইপার' বা 'উলুবোড়া' নামেও পরিচিত। ইতিমধ্যেই এই সাপের কামড়ে বিশ্ববিদ্যালয়-মাদ্রাসা পড়ুয়া, কৃষক, বৃদ্ধা সহ মারা গিয়েছেন কয়েকজন। বাড়ছেই মৃত্যুর মিছিল৷ সাপের কামড় খেয়ে অনেকেই বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি, রয়েছেন মৃত্যুশয্যায়। এই অবস্থায় সাপ বিশেষ করে এই 'রাসেলস ভাইপার' নিয়ে বাড়ছে আতঙ্ক। বাংলাদেশের বেশ কিছু এলাকায় সাপ পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। একাধিক এলাকায় সাপকে পিটিয়ে মারার নিদান দেওয়া হয়েছে। এই অবস্থায় জনসচেতনতা বৃদ্ধির দিকে জোর দিচ্ছেন বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন। সাপ নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
কয়েক দিনের বৃষ্টি এবং সিলেট সহ কিছু এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির পরেই সাপের উপদ্রব বেড়েছে। গত ২১ জুন শুক্রবার সাপের ছোবলে মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে হোসেন ব্যাপারী নামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। সেখানের আরেক কৃষককে রাসেলস ভাইপার জাতের সাপ ছোবল মেরেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন। তিনি বলেন, ‘গত কয়েকদিনে হরিরামপুরের তিনটি চরে ৫-৬ জন এবং পাশের ফরিদপুরের চরাঞ্চলের ইউনিয়নেও ৮-১০ জন এই সাপের কামড়ে মারা গিয়েছেন। তাই এলাকার লোকজন খুবই আতঙ্কের মধ্যে আছেন।’
সাপের কামড়ে যশোরের শার্শায় ফোরকানুল ইসলাম নামে এক মাদ্রাসা পড়ুয়া এবং ঢাকার ধামরাইয়ে তহরিন নেছা নামের এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। সেই সমস্ত এলাকাতেও রাসেলস ভাইপারের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন জেলায় এই সাপ দেখা গিয়েছে চর এবং ফসলের মাঠে। তবে ভোলায় এই সাপের প্রকোপ উপদ্রব দেখা দিয়েছে বাড়িতেও।
গত ৭ মে মঙ্গলবার চারঘাটে শাকিনুর রহমান সাব্বির নামে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী মারা যান বিষধর এই সাপের ছোবলে। একসময় বিলুপ্তপ্রায় চন্দ্রবোড়া জাতের ওই সাপটি রাজশাহীর পদ্মা নদীতে পাওয়া গেলেও এখন আশপাশের জেলাগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে। সবমিলিয়ে চরম আতঙ্কিত চরাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষ।
অন্যদিকে, বিভিন্ন এলাকায় আতঙ্কিত বাসিন্দারা সাপ পিটিয়ে মারতে শুরু করেছেন। ২১ জুন শুক্রবার সাতক্ষীরার কলারোয়া এলাকার চন্দনপুর ইউনিয়নের হিজলদী বাজারের কাছে রাসেলস ভাইপার দেখতে পেয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে এলাকাবাসী। এর আগেই সেখানের সোনাবাড়িয়া ইউনিয়নের বড়ালী গ্রামেও একটি চন্দ্রবোড়া সাপকে পিটিয়ে মারা হয়। চট্টগ্রাম এবং ফরিদপুরের নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের ঢোলার চর এলাকাতেও একটি রাসেলস ভাইপারকে পিটিয়ে মারা হয়।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ‘রাসেলস ভাইপার’ নিয়ে আতঙ্ক ছড়ানোর পরে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী। দেশের সব হাসপাতালে পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম মজুত রাখার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে আমি জনগণকে বলব, রাসেলস ভাইপার নিয়ে আপনারা আতঙ্কিত হবেন না। এর যে অ্যান্টিভেনম সেটা আমাদের হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুত আছে।’ সাপে কামড়ালে কী করতে হবে তা নিয়েও জনসচেতনতা তৈরিতে জোর দেওয়ার কথা বলেন বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
উল্লেখ্য, চন্দ্রবোড়া বা উলুবোড়া, যার বৈজ্ঞানিক নাম Daboia russelii, এটি ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম বিষধর সাপ এবং উপমহাদেশের প্রধান চারটি বিষধর সাপের একটি। চন্দ্রবোড়া ১৭৯৭ সালে জর্জ শ এবং ফ্রেডেরিক পলিডোর নোডার কর্তৃক আনুষ্ঠানিকভাবে বর্ণিত হয়। এর পূর্বে প্যাট্রিক রাসেল ১৭৯৬ সালে তার অ্যান অ্যাকাউন্ট অফ ইন্ডিয়ান সারপেন্টস, কালেক্টেড অন দ্য কোস্ট অফ করোমান্ডেল বইয়ে 'চন্দ্রবোড়া' সম্পর্কে লিখেছিলেন ও তার নাম অনুসারে এটি 'রাসেলস ভাইপার' বা 'রাসেলের ভাইপার' নামেও পরিচিত।
রাসেলস ভাইপার কতটা ভয়ঙ্কর: বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক সাপগুলোর মধ্যে অন্যতম এই রাসেলস ভাইপার। একটি পূর্ণাঙ্গ রাসেলস ভাইপারের কামড়ে প্রায় ১৩০ থেকে ২৫০ মিলিগ্রাম বিষ থাকে। ছোট সাপগুলোর মধ্যে থাকে প্রায় ৮ থেকে ৭৯ মিলিগ্রাম। এ ছাড়া অন্যান্য যেকোনো বিষাক্ত প্রাণীর তুলনায় এগুলো অনেক বেশি পরিমাণে বিষ নিঃসরণ করতে সক্ষম। বিভিন্ন প্রজাতিতে এই বিষ মূলত দুই ধরনের হয়ে থাকে; নিউরোটক্সিন ও হেমোটক্সিন৷ নিউরোটক্সিন বিষ স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রমণ করে এবং এর মাধ্যমে শরীরের প্রধান অঙ্গগুলোকে পর্যায়ক্রমে নিষ্ক্রিয় করে দিতে থাকে। একসঙ্গে অনেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের এই অবনতি বড়দের তুলনায় বাচ্চাদের ক্ষেত্রে দ্রুত ঘটে।
কামড়ের জায়গায় ব্যথার সঙ্গে নানা উপসর্গ দেখা দেয়। তারপর আক্রান্ত স্থান থেকে ধীরে ধীরে তা ছড়াতে থাকে সারা দেহে। কামড়ের ২০ মিনিটের মধ্যে মুখ থেকে থুথুর সঙ্গে রক্ত বের হওয়া শুরু করে। রক্তচাপের পাশাপাশি হৃদস্পন্দন কমে যেতে থাকে। চূড়ান্ত অবস্থায় বমি হতে পারে এবং মুখ ফুলে যেতে পারে। কামড়ের ক্ষত চিহ্নের চারপাশের জায়গা বিবর্ণ হয়ে যায় এবং ফুলে ওঠে। এক থেকে তিন ঘণ্টার মধ্যে বমির সঙ্গে ডায়রিয়া যুক্ত হয়ে সারা শরীর নিস্তেজ হয়ে যেতে থাকে। সর্বোপরি, অবিলম্বে চিকিৎসা না করা হলে এই দংশন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যু ঘটাতে পারে।
বিষ হেমোটক্সিক প্রকৃতির হলে রক্ত জমাট বা আভ্যন্তরীণ রক্তপাতের ঘটনা ঘটে। এতে শরীরের প্রধান অঙ্গগুলোতে রক্তের পরিবহণ ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ার ফলে অঙ্গগুলো নিষ্ক্রিয় হয়ে যেতে থাকে।
এই সরিসৃপটির সবচেয়ে ভয়ানক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর গায়ের রঙ ও রেখা, যেগুলো যেকোনো পরিবেশের সঙ্গে একদম মিশে যায়। এতে করে কাছাকাছি কোনো শিকার এর অবস্থান টেরই পায় না। এ ছাড়া শিকারকে পরিপূর্ণভাবে ধরাশায়ী করার জন্য এটি দীর্ঘক্ষণ যাবৎ ঘাপটি মেরে পড়ে থাকতে পারে। অতঃপর ইঞ্চি ইঞ্চি করে এগিয়ে সুযোগ বুঝে ক্ষিপ্র গতিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে শিকারের উপর। শিকার ধরার জন্য এদের সেরা সময় হচ্ছে রাতের বেলা। কিন্তু, শারীরিক বৈশিষ্ট্যের কারণে দিনের আলোতেও এদেরকে শনাক্ত করা মুশকিল।
রাসেলস ভাইপার সাপ চেনার উপায়: ভারতীয় উপমহাদেশে এই সাপ পাঁচ দশমিক পাঁচ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। ত্রিভুজাকার আকৃতির চ্যাপ্টা মাথা ঘাড় থেকে বেশ আলাদা। মুখের সামনের অংশটি গোলাকার, ভোঁতা ও ওপরের দিকে বাঁকানো। নাকের ছিদ্র বড় এবং মাথার শীর্ষবিন্দু স্বতন্ত্রভাবে খণ্ডিত আবরণে আচ্ছাদিত। মাথা আকারে বেশ বড় এবং রঙ হলুদ বা সোনালি হলুদ। আর এর চারপাশে থাকে ১০ থেকে ১৫টি বৃত্তাকার আঁশের বেষ্টনী। দুই জোড়া চোয়ালের ঢালের মধ্যে সামনের জোড়াটি একটু বেশি প্রসারিত। মুখের ভেতর দুটি ম্যাক্সিলারি হাড়ের সঙ্গে এক জোড়া করে মোট ছয়টি বিষদাঁত। তবে, একদম সামনের জোড়া দাঁতগুলো বেশ প্রকাণ্ড এবং সক্রিয় থাকে। দেহের পেছনে ছোট লেজের দৈর্ঘ্য গোটা দেহের মাত্র ১৪ শতাংশ। এদের শরীরের রঙের প্যাটার্নে রয়েছে গভীর হলুদ এবং বাদামী মাটির রঙ। শরীরের দৈর্ঘ্য বরাবর তিন সারি গাঢ় বাদামী দাগ। এই দাগগুলোর প্রত্যেকটির চারপাশে রয়েছে একটি করে কালো বলয়। এর বাইরের সীমানা সাদা বা হলুদ হয়ে প্রান্তের দিকে গাঢ় হয়ে গেছে। মাথায় রয়েছে এক জোড়া গাঢ় ছোপ, যার প্রত্যেকটি একটি করে গোলাপি বা বাদামী রঙের ‘V’ বা ‘X’ আকৃতি হয়ে মাথার শীর্ষবিন্দুতে যেয়ে মিলেছে। চোখের পিছনে অন্ধকার স্তরটি সাদা বা গোলাপি প্রান্তরেখায় পরিবেষ্টিত। শরীরের সামনে ও পিছনে সর্বাঙ্গ জুড়ে সাদা, হলুদ বা গোলাপি রঙের সঙ্গে কালো দাগের অনিয়মিত ও বিক্ষিপ্ত নকশা।
রাসেলস ভাইপারের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে—এরা যেকোনো স্থানের সঙ্গে অবিকল ভাবে মিশে যেতে পারে। কোনো শত্রুর কাছ থেকে হুমকি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এরা একটি ‘S' আকৃতি গঠন করে। অতঃপর শরীরের উপরের এক-তৃতীয়াংশকে উত্থাপন করে উচ্চ শব্দে আক্রমণের ঘোষণা দিতে থাকে। এইভাবে শরীরের নির্দিষ্ট অংশকে উপরে তুলে ধরাটা প্রতিটি সাপেরই আক্রমণের একটি সাধারণ ভঙ্গিমা। তবে, অন্যান্য সাপের তুলনায় রাসেলস ভাইপার তার শরীরের বেশির ভাগ অংশ মাটি থেকে তুলতে পারে।
প্রতিরক্ষামূলক পরিধেয়: সবচেয়ে বিপজ্জনক অঞ্চলগুলোর অধিবাসীদের লম্বা ও মোটা চামড়ার বা রাবারের বুট পরিধান করা উচিৎ। এ ছাড়া মোটা গ্লাভ্সও অতিরিক্ত নিরাপত্তা দিতে পারে। রাসেলস ভাইপারের বিষদাঁত যে কোনো সাপের থেকে বেশ লম্বা, কিন্তু সেগুলো গামবুট ভেদ করতে পারে না।
অন্ধকার এলাকা এড়িয়ে চলা: এই সাপগুলো শিকার ধরার জন্য রাতের বেলা এবং অন্যান্য সময় অপেক্ষাকৃত অন্ধকার জায়গা বেছে নেয়। তাই রাতসহ দিনের অন্যান্য সময়ে পথ চলার সময় সঙ্গে একটি টর্চলাইট রাখা ভালো।
শিশু-কিশোরদের সাবধান করা: এসব বিষাক্ত প্রাণীদের এড়িয়ে গেলে সাধারণত এরা বিপদের কারণ হয় না। কিন্তু দুর্ঘটনাসহ মানুষের কোনো আচরণকে হুমকি ভেবে এরা আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। গ্রামে-গঞ্জে অনেক ক্ষেত্রে শিশু-কিশোরদের এরকম বিভিন্ন প্রাণী নিয়ে খেলতে দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে কোনো বিপজ্জনক পরিস্থিতির উপক্রম হওয়ার আগেই তাদেরকে সাবধান করা দরকার। এমনকি, সাপ মরে পড়ে আছে ভেবে সেটা সরানোর সময়ও সাবধান থাকা উচিৎ।
রাসেলস ভাইপার সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি: যে যে এলাকাগুলোতে এই সাপের উপদ্রব বেশি, সেখানে অবিলম্বে যথাযথ সাবধানতা জোরদার করা উচিৎ। এর জন্য কৃষক, জেলেসহ প্রতিটি মানুষকে এই সরিসৃপের প্রজাতি ও তাদের আবাসস্থল সম্বন্ধে সহজ ভাষায় জানাতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারিভাবে নিরাপত্তামূলক উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। সেই সঙ্গে উপজেলা পর্যায়সহ দেশের অতি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে যত দ্রুত সম্ভব অ্যান্টিভেনম বিতরণ করা উচিৎ।
রাসেলস ভাইপার কামড়ালে করণীয়: এই সাপের দংশনের শিকার হলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে বাঁচানোর জন্য অ্যান্টিভেনমের কোনো বিকল্প নেই। তাই যত দ্রুত সম্ভব তাকে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। দক্ষ সেবা পাওয়ার আগ পর্যন্ত তাৎক্ষণিকভাবে প্রাথমিক যে ব্যবস্থাগুলো নেওয়া যেতে পারে তা হলো : আক্রান্ত ব্যক্তির পরিহিত যেকোনো আঁটসাঁট অলঙ্কার বা পোশাক খুলে আরামদায়ক অবস্থানে তাকে বসিয়ে বা শুইয়ে রাখা, সাবান এবং পানি দিয়ে ক্ষত স্থান পরিষ্কার করে দেওয়া, কামড়ের স্থান এবং তার চারপাশের জায়গায় ব্যান্ডেজ লাগানো। তবে, ব্যান্ডেজ যেন খুব বেশি শক্ত না হয়। নড়াচড়া এড়াতে ব্যান্ডেজের সঙ্গে একটি ছোট লম্বা বাঁশজুড়ে দিতে হবে। হাতে কামড়ের ক্ষেত্রে হাত ব্যান্ডেজ করে তা কাঁধের সঙ্গে গুলতির মতো করে ঝুলিয়ে যুক্ত করে দেওয়া যায়। আক্রান্ত ব্যক্তির এ অবস্থায় কোনোভাবেই দ্রুত হাঁটা বা দৌড়ানো ঠিক নয়৷ ক্ষতস্থানসহ দেহের অন্যত্রে কোনো রকম কাটাছেঁড়া বা আঁচড় দেওয়া যাবে না৷ ক্ষত স্থানে মুখ দিয়ে রক্ত টানার চেষ্টা করা একটি ব্যর্থ প্রচেষ্টা। এটি কুসংস্কার ছাড়া আর কিছুই নয়। কামড়ানো জায়গায় বরফ লাগানো যাবে না৷ আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যথা উপশমের জন্য অ্যাসপিরিন, আইবুপ্রোফেন বা নেপ্রোক্সেন সোডিয়ামের মতো কোনো ব্যথানাশক ওষুধ দেওয়া যাবে না। এতে ব্যক্তির রক্তপাতের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
বিষধর সাপ রাসেলস ভাইপার থেকে নিরাপদে থাকার সর্বোত্তম উপায় অগ্রিম সতর্কতা অবলম্বন করা। বিপজ্জনক অঞ্চলগুলোর ক্ষেত্রে প্রতিরক্ষা বুট এবং রাতের বেলা টর্চ লাইট ব্যবহার করা উচিৎ। সাপ শনাক্তকরণের ব্যাপারে এগুলোর দৈহিক বৈশিষ্ট্য যতটা সম্ভব সুক্ষ্ম ভাবে জেনে রাখা ভালো।
আর সাপের কামড়ের পর অ্যান্টিভেনম দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। তাই যত দ্রুত সম্ভব নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। উপরন্তু, তাৎক্ষণিক চিকিৎসার সময় প্রচলিত কুসংস্কার এড়াতে আগে থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা সম্বন্ধে সঠিক জ্ঞান থাকা অতীব জরুরি।
রাসেলস ভাইপার সাপের কামড়ে তাৎক্ষণিক ক্ষতস্থানে ব্যথা শুরু হয় ও কিছুক্ষণের মধ্যে ক্ষতস্থান ফুলে যায়। রক্তক্ষরণ এর একটি সাধারণ লক্ষণ৷ এছাড়া রক্তচাপ ও হৃৎস্পন্দনের হার কমে যায়৷ প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রে বমি হয় ও মুখমণ্ডল ফুলে যায়৷ যথাযথ চিকিৎসা না নিলে ২৫-৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে কিডনি অকার্যকর হয়ে যায়৷ চন্দ্রবোড়ার বিষ হেমোটক্সিক, অর্থাৎ এর প্রভাবে দেহের লোহিত রক্তকণিকা ধ্বংস হয় ও বিভিন্ন অঙ্গ যেমন ফুসফুস, কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দ্রুত চিকিৎসা নিলে ও সত্ত্বর অ্যান্টিভেনম প্রয়োগে বিষক্রিয়া সম্পর্কিত নানা শারীরিক জটিলতার হার বহুলাংশে কমানো যায়।
অ্যান্টিভেনম চিকিৎসা: ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা প্রভৃতি দেশে বিষধর সাপের বিষ প্রতিরোধের জন্য যে polyvalent antivenom (ভারতের Haffkine Institute এ তৈরি) প্রয়োগ করা হয়, তার দ্বারা চন্দ্রবোড়ার বিষেরও প্রতিরোধ সম্ভব। ২০১৬ সালে কোস্টারিকার Clodomiro Picado Institute একটি নতুন অ্যান্টিভেনম তৈরি করেছে এবং শ্রীলঙ্কায় তা পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে।
চিকিৎসাক্ষেত্রে প্রয়োগ: চন্দ্রবোড়ার বিষ রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে, এ কারণে হাসপাতালের ল্যাবরেটরিতে রক্ত জমাট বাঁধা সংক্রান্ত পরীক্ষায় এর ব্যবহার রয়েছে। রক্ত জমাট বাঁধা, গর্ভধারণ বিষয়ক জটিলতা যেমন গর্ভপাতকারী এক রোগ নির্ধারণের পরীক্ষায় (ডাইলিউট রাসেল'স ভাইপার ভেনম টাইম) লুপাস অ্যান্টিকোয়াগুল্যান্টের উপস্থিতি নির্ণয়ে চন্দ্রবোড়ার বিষ ব্যবহৃত হয়।