মহাভারতের কাহিনী ও ইতিহাস ঘিরে দাঁতনের ঐতিহাসিক শরশঙ্কা দিঘির মেলা !

নিজস্ব সংবাদদাতা : একদিকে মহাভারতের কাহিনী ও ইতিহাস ঘিরে লোককথা আর অন্য দিকে পির মাজার ঘিরে অলৌকিক বিশ্বাস। সঙ্গে পৌষ সংক্রান্তি পরব ও বিশাল দিঘির মহিমা। এই নিয়ে কয়েক শতাব্দী প্রাচীন শরশঙ্কা আজও নজর টানছে লক্ষ লক্ষ ধর্মানুরাগী ও পর্যটকদের। সরকারি উদ্যোগে সদ্য সংস্কার হয়েছে রাজ্যের বৃহত্তম এই দিঘি। ইতিহাসবিদ ও দাঁতনের শিক্ষক সন্তু জানা বলেন, “এই দিঘি, তার পাড়ের মন্দির ও মাজার ঘিরে এলাকার মানুষের মধ্যে সম্প্রীতির যে ছবি কয়েকশো বছর ধরে রয়েছে সেটাই এখানের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য।” বাংলার বৃহত্তম দিঘি শরশঙ্কা । খননে সৃষ্ট এত বড় সরোবর ভূ-বাঙলায় আর কোথাও নেই । সেই সুবিশাল দিঘিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে যুগ-যুগান্তরের ইতিহাস, কিংবদন্তী, লোকশ্রুতি, লোকায়ত সংস্কৃতি ।সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আকর প্রত্নসম্ভার এবং পরিবেশের নানাবিধ দিক-দিগন্ত । আর এই সব মিলিত হয়ে গড়ে উঠেছে আস্ত একটি বই ! প্রাচীন ইতিহাস, প্রবাদ, কিংবদন্তী ও জনশ্রুতি মিলেমিশে একাকার হয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিম সীমানা বাংলার এক সুবৃহৎ জলাশয়ে। ভরা বর্ষায় থই-থই জলে তরঙ্গায়িত ঢেউ যুগের সাথে তালমিলিয়ে বয়ে গেছে কতকাল। রেখে গেছে শুধু কথা, উপকথা, কথকতা। কালের করাঘাত সহ্য করেও বুকে জল ধরে রেখেছে যুগ-যুগান্তর ; বেঁচে আছে একটি অত্যাশ্চর্য ‘মিথ’ হয়ে।

বর্তমানে আকারে-আয়তনে সীমান্ত বাংলার দাঁতনে অবস্থিত প্রাচীন শরশঙ্কা দীঘিটি অবিভক্ত বাংলার মধ্যে যে বৃহত্তম সেকথা আর বলার উপেক্ষা রাখে না। স্যাটেলাইট থেকে বার্তা আসছে, এর জলভাগের আয়তন ১৪২ একর ৩৭ ডেসিমেল । এই আয়তনের কাছাকাছি দীঘি রয়েছে দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন দীঘি (আয়তন প্রায় ১১৭ একর) । শরশঙ্কার সম্পূর্ণ ক্ষেত্রটির পরিসীমা হল প্রায় ৩০০৯ মিটার ২৪৮ সে.মি. এবং দীঘির তীরবর্তী সুউচ্চ পাড়সমেত সমগ্র অঞ্চলটির আয়তন প্রায় ১৫০ একর। এই বৃহদাকার জলাধারটি প্রকৃতপক্ষে দুটি মৌজা জুড়ে অবস্থান করেছে। দীঘিটির চারপাশে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ২৬-২৮ টি পুকুর অবস্থান করছে । ১৯৮২ সালে একটি সরকারী প্রকল্পের আওতায় এগুলি খনন করা হয়েছিল। পুকুরের পাড় বরাবর নারকেল গাছের সারি দীঘিটিকে কণ্ঠহারের ন্যায় স্বর্গীয় সৌন্দর্য্য প্রদান করেছে। আবার লোককাহিনী, সপ্তম শতকের গোড়ায় মায়ের নির্দেশে এই দিঘি খনন করান রাজা শশাঙ্ক। যদিও কোনোওটিরই বাস্তব ভিত্তি নেই। কিন্তু এই কাহিনীগুলির সূত্রই এই দিঘিকে অনন্য মহিমা দান করেছে। বংশপরম্পরায় পির মাজারটির সেবক মোলায়েম শা। তিনি বলেন, “এই পুণ্য দীঘির পাড়েই সাধনা করতেন পীর লস্করগঞ্জ দেওয়ান। মকর সংক্রান্তির আগের রাতেই তাঁর মৃত্যু হয়। সেই থেকেই হিন্দু মুসলিম সকলেই এই মাজারে চাদর চড়ান ও ভোগ দেন। আর দুই পরব মিলিয়ে মেলার টানে ভিন রাজ্য থেকেও আসেন পুণ্যার্থীরা।