ঢোল-করতাল, মঙ্গলশাঁখে রথযাত্রায় মাতল বাংলাদেশ, ধামরাইয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রথযাত্রা শুরু, বগুড়ায় রথের মিছিলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে পাঁচজনের মৃত্যু!
ঢাকা জাকির হোসেন : সাড়ম্বরে বাংলাদেশে শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উৎসব শুরু হয়েছে ৭ জুলাই রবিবার৷ পুরো দেশজুড়ে ঢোল-করতাল বাদ্যের তালে তালে মঙ্গলশঙ্খ ও উলুধ্বনি দিয়ে নেচে-গেয়ে রথযাত্রা উপলক্ষে আয়োজিত শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছেন লাখো লাখো ভক্ত। সনাতনী রীতি অনুযায়ী, প্রতি বছর চন্দ্র আষাঢ়ের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে বিশ্ব কল্যাণ কামনায় অগ্নিহোত্র যজ্ঞানুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় রথের আনুষ্ঠানিকতা৷ পুরো দেশে চলছে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন। এর মধ্যেই শান্তিপূর্ণভাবে এই রথ উৎসব শুরু হয়েছে।
এ উৎসবের কেন্দ্রস্থল হচ্ছে ওড়িষ্যা বা ওড়শা রাজ্যের পুরীতে অবস্থিত জগন্নাথ দেবের প্রধান মন্দিরে৷ উৎসবটি ভারত, বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের অনেক দেশে পালিত হয়ে আসছে।
নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানমালার মাধ্যমে আনন্দমুখর পরিবেশে ৯ দিনব্যাপী শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা মহোৎসবের এই আয়োজন আগামী ১৫ জুলাই বিকাল তিনটায় উল্টো রথের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে শেষ হবে।
জগন্নাথদেব হলেন জগতের নাথ বা অধীশ্বর। জগৎ হচ্ছে বিশ্ব আর নাথ হচ্ছেন ঈশ্বর। তাই জগন্নাথ হচ্ছেন জগতের ঈশ্বর। তার অনুগ্রহ পেলে মানুষের মুক্তিলাভ হয়। জীবরূপে তাকে আর জন্ম নিতে হয় না। এই বিশ্বাস থেকেই রথের ওপর জগন্নাথ দেবের প্রতিমূর্তি রেখে রথ নিয়ে যাত্রা করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
শুভ রথযাত্রা উপলক্ষে ঢাকায় আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) ৯ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠান মালায় রয়েছে হরিনাম সংকীর্তন, বিশ্ব শান্তি ও মঙ্গল কামানায় অগ্নিহোত্র যজ্ঞ, মহাপ্রসাদ বিতরণ, আলোচনা সভা, শোভাযাত্রা, পদাবলী কীর্তন, আরতি কীর্তন, ভগবত কথা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শ্রীমদ্ভাগবত গীতা পাঠ, ধর্মীয় চলচ্চিত্র প্রদর্শন ও ধর্মীয় নাটক মঞ্চায়ন।
প্রতিবছরের মতো এবারও ঢাকার স্বামীবাগে এই রথযাত্রার আয়োজন করে ইসকন। এ উপলক্ষে ৭ জুলাই দুপুরে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সেখানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘ধর্মীয় সম্প্রীতির দেশ বাংলাদেশে সকলে নিজ নিজ ধর্ম নির্বিশেষে পালন করবেন এটাই এই সরকারের অন্যতম আদর্শ।’
আলোচনা সভা শেষে বিকেল তিনটায় রথযাত্রার উদ্বোধন করেন আসাদুজ্জামান খান কামাল। সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য সাঈদ খোকন, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনের কর্মকর্তা পবন কুমার তুলসীদাস দে সহ অনেকে।
এদিকে রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি জোরদার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুরো সড়ক জুড়ে ছিল পুলিশ, র্যাবসহ গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যরা। উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী ধামরাই রথসহ আরও অন্যান্য রথযাত্রা উপলক্ষ্যে ঢাকার যান চলাচল নিয়ন্ত্রিত ছিল। স্বামীবাগ আশ্রম থেকে শুরু করা রথযাত্রায় লাখো মানুষের ঢল নামে৷ রথযাত্রা স্বামীবাগ আশ্রম থেকে জয়কালী মন্দির-ইত্তেফাক মোড়-শাপলা চত্বর-দৈনিক বাংলা মোড়-রাজউক ভবন-গুলিস্তান-পুলিশ হেডকোয়ার্টার-সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল-হাইকোর্ট মাজার-দোয়েল চত্বর-রমনা কালী মন্দির-টিএসসি মোড়-জগন্নাথ হল ও পলাশী হয়ে শ্রী শ্রী ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে গিয়ে শেষ হয়। ১৫ জুলাই বিকেলে উল্টো রথের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা একই পথে ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে স্বামীবাগ আশ্রমে আনা হবে।
ইসকনের সভাপতি সত্যরঞ্জন বাড়ৈ বলেন, 'এবারও উৎসবমুখর পরিবেশে রথযাত্রা শুরু হলো। শোভাযাত্রায় পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী নিয়োজিত ছিল। মহোৎসব সফল করতে সরকারের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শোভাযাত্রাসহ উৎসব উপলক্ষে নিরাপত্তায় নিজস্ব প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত ছিল।' তিনি বলেন, 'প্রতিবছরের ন্যায় এবারও রথযাত্রা সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের উপস্থিতিতে সার্বজনীন হয়ে উঠেছে৷'
রথযাত্রা বিভিন্ন নামে পরিচিত। পুরীর জগন্নাথ দেবের মন্দির থেকে জগন্নাথ দেবের রথযাত্রার প্রচলন৷ বাংলাদেশেও রথযাত্রা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একটি পবিত্র উৎসব। ঢাকার ধামরাইয়ে এটি পরিচিত যশোমাধবের রথযাত্রা নামে। গাজীপুরের জয়দেবপুরে মাণিক্যমাধবের রথযাত্রা। ভারতের ওড়িষ্যা রাজ্যের যশোমাধবের রথযাত্রা ও মহেশের জগন্নাথ দেবের রথযাত্রাও উপমহাদেশ বিখ্যাত। ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে রথযাত্রার ব্যাপক প্রচলন রয়েছে।
এ ছাড়া বাংলাদেশের পুরান ঢাকার তাঁতীবাজারের জগন্নাথ জিউ ঠাকুর মন্দির, জয়কালী রোডের রামসীতা মন্দির এবং শাঁখারীবাজার একনাম কমিটিসহ রাজধানীর অন্যান্য মন্দির ও দেশের বিভিন্ন মন্দিরেও রথটান অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশে রথযাত্রার ইতিহাস থাকলেও ইসকন এটিকে নতুন রূপ দিয়েছে। যা এখন দেশের সবচেয়ে বড়, এমনকি বিশ্বের অন্যতম রথযাত্রার উপাধি পেয়েছে।
কথিত আছে নগরী ঢাকার আধুনিক চারশ' বছরের সঙ্গে জড়িয়ে আছে রথ। জনপদ ধামরাই পদ্মাপারের বিস্তীর্ণ বাংলাভূমির দ্বিতীয় ‘মাহেশ’। সেই ধামরাইয়ে ৪০০ বছরের পুরনো শ্রী শ্রী যশোমাধবের রথ শুরু হয়েছে, যা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম। এই ঐতিহ্যবাহী রথ উৎসবকে কেন্দ্র করে গোটা ধামরাইয়ে এখন সাজ সাজ রব৷ মেলায় শত শত স্টল বসেছে। শ্রী শ্রী যশোমাধব মন্দির ও রথোৎসব পরিচালনা কমিটি কর্তৃক তৈরি রথের উচ্চতা ৪১ ফুট৷
শ্রী শ্রী যশোমাধব দেবের রথযাত্রার ইতিহাস থেকে জানা যায়, বাংলা ১০৭৯ সালে বিগ্রহ প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১২০৪ সাল পর্যন্ত সুদীর্ঘ ১২৫ বছর পর্যন্ত রথযাত্রা চলে এসেছে। তারপর বালিয়াটি জমিদারদের পৃষ্ঠপোষকতায় রথযাত্রা অব্যাহত থেকেছে আরও ১৪৬ বছর। বাংলা ১৩৫০ সালে জমিদারি প্রথা বিলোপের পর মির্জাপুরের দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা এগিয়ে আসেন রথযাত্রার উৎসব আয়োজনে যা আজও অব্যাহত আছে। তারই উত্তরসূরি শ্রী রাজীব প্রসাদ সাহা, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং শ্রী শ্রী যশোমাধব মন্দির কমিটির সহযোগিতায় শ্রী শ্রী যশোমাধব দেবের সেবা ও রথ পরিচালনায় দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
রথযাত্রা উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ভারতের পুরী ও মাহেশের রথ আর বাংলাদেশের ধামরাই রথ বিশেষ আলোচ্য। ঊনবিংশ শতাব্দীতে স্থানীয় জমিদারেরা বার্ষিক রথযাত্রার সময় ৬০ ফুট দীর্ঘ রথ নির্মাণ করিয়েছিলেন। যুক্ত পাকিস্তান আমলে ধামরাই রথ ছিল স্বমহিমায়। তবে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাক বাহিনী এই রথটি পুড়িয়ে দেয়। পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পর একটি নতুন রথ পরে নির্মিত হয়। এই রথযাত্রাটি বাংলাদেশ ভূখণ্ডের সর্বাধিক প্রাচীন ও বৃহত্তম রথযাত্রা। সারা দেশ থেকে পূণ্যার্থীরা এই রথযাত্রায় অংশগ্রহণ করতে আসেন। রথের উৎসব ধামরাইয়ের প্রধান সড়কের পাশে অনুষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন ধরনের পণ্য বিক্রির জন্য বিভিন্ন স্টল স্থাপনের পাশাপাশি সার্কাস, নাগরদোলা, পুতুল নাচ, চুড়ি নিয়ে হাজির হয় বেদেনীরা।
এদিকে বগুড়া জেলা শহরে জগন্নাথ দেবের রথযাত্রায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত ৪০ জন; তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বগুড়া সদর থানার ওসি সাইহান অলিউল্লাহ বলেন, 'বিকাল সোয়া ৫টার দিকে শহরের সেউজগাড়ী আমতলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এখন পর্যন্ত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। আরও কয়েকজন আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আছে।'
নিহতরা হলেন- সারিয়াকান্দী উপজেলার সাহাপাড়ার বাসিন্দা বাসুদেবের স্ত্রী সবিতা (৪০), আদমদীঘি উপজেলার কন্দুগ্রাম থানার ভবানী মোহন্তের ছেলে নরেশ মোহন্ত (৬০), পুরান বগুড়ার হিন্দু পাড়ার বাসিন্দা ননী কেশর সরকারের স্ত্রী অতসি রানী সরকার (৪৫), সদর উপজেলার গোহাইল মাসিন্দা এলাকার বাসিন্দা সুদেব মোহন্তের স্ত্রী রঞ্জিতা মোহন্ত (৫৫) এবং ছোট বেলঘড়িয়া এলাকার মৃত নরেন্দ্রনাথের ছেলে অলক কুমার (৪০)।
প্রত্যক্ষদর্শী সেউজগাড়ী এলাকার বাসিন্দা চিত্ত পাল বলেন, 'সেউজগাড়ী পালপাড়া ইসকন মন্দির থেকে প্রতিবছরের মত এবারও বিকেল ৫ টায় রথযাত্রা শুরু হয়। শোভাযাত্রাটি বনানীর শিব মন্দিরে যাওয়ার কথা ছিল। মন্দির থেকে বেরিয়ে সেউজগাড়ী আমতলায় পৌঁছালে রথের উঁচু মাথা বিদ্যুতের উচ্চ ভোল্টের তারের সঙ্গে লেগে যায়। এতেই দুর্ঘটনা ঘটে।'
তিনি বলেন, যারা রথের উপর দাঁড়িয়েছিল এবং ঝুলে যাচ্ছিল তারাই দুর্ঘটনার স্বীকার হন বেশি। আহতদের দ্রুতই বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। রথযাত্রায় অংশগ্রহণকারী কয়েকজন জানান, যে রাস্তা দিয়ে রথটি যাচ্ছিল তার উপরের ছিল সেই বিদ্যুতের তার। রথের মাথা বিদ্যুতের তারে লাগার সঙ্গে সঙ্গে আগুন জ্বলে ওঠে। চারদিক ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। কেউ কিছু বোঝার আগেই নারী-পুরুষ-শিশু মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
এ সময় লোকজন দৌড়াদৌড়ি শুরু করেন। পরে আবার তারা রথের কাছে এসে মাটিতে পড়া থাকা লোকজনকে উদ্ধার করেন। কিছু মানুষ তখন রথটি টেনে বনানী শিব মন্দিরের দিকে চলে যায়।
প্রতিবছরই এখানে এভাবে রথ হয়। কিন্তু এমন দুর্ঘটনা কখনও ঘটেনি। এবার কেন ঘটল তা খতিয়ে দেখা দরকার বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।
বগুড়ার সিভিল সার্জন মো. শফিউল আযম বলেন, 'পাঁচজন মারা গেলেও এখন ৪০ জন চিকিৎসাধীন রয়েছে। এর মধ্যে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩৫ জন এবং সরকারি মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে পাঁচজন ভর্তি আছেন। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক।'
বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, 'রথের চূড়ায় ধাতব পদার্থ ছিল। ১১ কিলোভোল্টের লাইনে লেগে বিদ্যুতায়িত হয়ে যায়। রথে উঠে যারা ধাতব পদার্থ ধরে ছিল তারাও আহত হয়। ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।' এ ঘটনা পুলিশ তদন্ত করবে বলে জানান তিনি।
বগুড়ার জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, এ ঘটনা তদন্তে এরই মধ্যে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, 'দুর্ঘটনায় যারা মারা গেছেন তাদের পরিবারপ্রতি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়া হবে। আর আহতদের উন্নত চিকিৎসার জন্য যা যা করা দরকার প্রশাসন করবে।' তিনি আরও বলেন, 'বছরে দুই দফা রথযাত্রা ও উল্টোরথযাত্রা বের হয়। শহরের রাস্তার ওপরে থাকা বৈদ্যুতিক তারের অবস্থান অনুযায়ী ঠিক কত ফুট উচ্চতায় রথ ওঠানো যাবে, তা আয়োজকদের আগে থেকেই সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু প্রশাসনের সেই সতর্কতা সত্ত্বেও ২৫ ফুট উচ্চতায় রথের চূড়া ওঠানো হয়। রথের চূড়া ওঠানো-নামানোর দায়িত্ব ছিল একজনের হাতে। কিন্তু তাঁর ভুলেই ঘটে গেল মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনা।'
জেলা প্রশাসক দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবার ও স্বজনদের প্রতি গভীর সহমর্মিতা ব্যক্ত করেছেন।
বগুড়ার রথযাত্রা উৎসব আয়োজক কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি (অধ্যক্ষ) খরাজিতা কৃষ্ণদাস ব্রহ্মচারী বলেন, 'বহুকাল থেকে বগুড়া শহরে রথযাত্রা ও উল্টোরথযাত্রা উৎসব হয়ে আসছে। অতীতে কখনো এ রকম মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেনি।' তিনি বলেন, 'রথযাত্রার সবকিছু দেখভাল করতে কমিটির পক্ষ থেকে ১০০ জন সেবক নিয়োগ ছিল। সড়কের ওপর বৈদ্যুতিক তারে যাতে রথের স্পর্শ না লাগে, এ জন্য রথের চূড়া ওঠানো-নামানোর জন্য দুজনকে দায়িত্ব দেওয়া ছিল। আমতলা মোড়ে ভুলক্রমে রথের চূড়া নিচে নামানোর আগেই বৈদ্যুতিক তারের স্পর্শ লেগে আগুন ধরে যায়। রথে হাত রাখা সবাই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন।' তিনি জানান, চূড়া ওঠানো-নামানোর দায়িত্বে থাকা অলোক কুমার ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন। সুশান্ত দাসের অবস্থা আশঙ্কাজনক।