মানসিক অবসাদের শিকার হন তাঁরাও, তাই তাদের জীবন নিয়ে সিনেমা করলেন ডাক্তারবাবুরা!
নিজস্ব সংবাদদাতা : বছরের ৩৬৫ দিন কাটে অন্যের যন্ত্রণার কথা শুনেই । একের পর এক রোগীর অসুখকে সারিয়ে সুখ খুঁজে দিতেই চলে যায় সময় । আর এই ব্যস্ততার মধ্যেই হারিয়ে যায় নিজস্ব সময় ৷ কিন্তু উপায় ? কে শুনবে তাঁদের সমস্যা ? কে দেবে ওষুধ ? কারণ সমাজে তাঁদের পরিচয় চিকিৎসক নামে । তাই অন্যকে সুস্থ করলেও নিজের কথা বলবেন কাকে ? এবার সেই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে এক নতুন উদ্যোগ নিলেন বেশ কিছু চিকিৎসক।ডাক্তারদের ছাত্রজীবনটা ঠিক কেমন, তারই জীবন্ত প্রতিচ্ছবি এই সিনেমা 'প্রত্যাবর্তন'। এর আগে দু'য়েকটি সিনেমায় ডাক্তারদের জীবন তুলে ধরার চেষ্টা হলেও এই ডাক্তারবাবুরা মনে করেন, তা যথেষ্ট হয়নি। তাই তাঁরা নিজেদের - উদ্যোগে তৈরি করলেন নতুন এই সিনেমা-প্রত্যাবর্তন।
মেডিক্যাল কলেজে তাঁদের নিজেদের সেই ছাত্রজীবনের কাহিনি উঠে এসেছে প্রত্যাবর্তনে। ২০-২৫ বছর আগের এক প্রজন্ম সেই মেডিক্যাল ছাত্ররা কীভাবে কাটিয়েছেন, এখন কেমন আছেন, কী করছেন, তুলে ধরা হয়েছে সেই জীবনই। আপাতদৃষ্টিতে একটা লাভস্টোরি, তবে তার মধ্যে দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে মেডিক্যাল কলেজের প্রতি প্রাক্তন ছাত্রদের আবেগের বহিঃপ্রকাশ। তাঁদের ত্যাগ, প্রতিষ্ঠানের জন্য তাঁদের মমত্ব। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য, এই ছবির পরিচালক থেকে অভিনেতা সকলেই ডাক্তার। সিনেমা নিয়ে কি বলছে চলচ্চিত্র পরিচালক। মেডিক্যাল কলেজের পুনর্মিলন সংগঠন করা নিয়ে মিটিং হবে কলেজের জিএলটি-তে। মিটিং-এ ওতোপ্রোত ভাবে জড়িত রণদীপ। মেডিক্যাল কলেজে এককালের ছাত্রনেতা, এখন স্বাস্থ্যভবনের কর্তা। সে ডাক দেয় তার প্রাক্তন সহপাঠীদের।সঞ্জয়, ঈপ্সিতা, অবিনাশ-সবাই মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তনী। এখন সবাই মাঝবয়সে। কেউ অ্যানাটমি পড়ায়, কেউ কর্পোরেট হাসপাতালে কার্ডিওলজি প্র্যাকটিস করে।
পরদিন বিকেলে মেডিক্যাল কলেজের রিইউনিয়ন অফিসে মিটিং।রণদীপের লন্ডন প্রবাসী ব্যাচমেট প্রসূন কলকাতায় এসেছে কলকাতার পৈতৃক বাড়িটার একটা বন্দোবস্ত করতে। প্রসূন একমাত্র সন্তান। তার বাবা-মা দুজনেই গত হযেছেন।প্রথমে গররাজী হলেও প্রসূন রণদীপের অনুরোধে শনিবার বিকেলে কলেজের রিইউনিয়ন নিয়ে মিটিংয়ে উপস্থিত হয়। সেখানে ব্যাচের বেশ কয়েকজন সহপাঠীর সাথে বহুকাল পরে দেখা হয় তার। সবাই মিলে কলেজ জীবনের স্মৃতি রোমন্থন চলতে থাকে।মিটিংয়ের পরে সবাই মিলে প্রাক্তন ছাত্রসমিতির ছোট্ট অফিসে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে বসে আড্ডা দিতে দিতে একটা বড়, সাজানো অফিসের জন্য আক্ষেপ করে। কথায় কথায় উঠে আসে কলেজের ক্লাস, খেলাধূলো, কলেজ ফেষ্টিভ্যালের মজা, প্রেম, বিরহ, খুনসুটি, হোস্টেলের দিনগুলোর হইচই, মজা আর কষ্টের কথা।প্রসূনের কলেজ জীবনের পরের পর্ব, বিশেষ করে তার বিলেতে পাড়ি দেওয়া এবং তারপরের ঘটনাক্রম সবার কাছেই অজানা ছিল। আজ প্রসূন সেসব বলতে থাকে। অনিন্দিতার সাথে প্রসূনের সম্পর্ক, তাদের কিছুটা অসম প্রেম, কলেজ জীবনে প্রসূনদের বাড়িতে কাটানো মূহুর্তগুলো ফিরে ফিরে আসে।
প্রসূন স্মৃতি রোমন্থন করে অনিন্দিতার রাশভারী চিকিৎসক বাবার চাপে প্রসূনের সাথে তার ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়া এবং উচ্চশিক্ষার জন্য ইংল্যান্ড চলে যাওয়া।বাবা-মায়ের মৃত্যুর পরে দিশাহীন প্রসূন-ও একসময় লন্ডন পাড়ি জমায়। তারপর প্রায় কপর্দকশূন্য অবস্থা থেকে ভাগ্য ও কর্মদক্ষতায় সে বিদেশে চিকিৎসক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।এখন কলকাতার পুরোনো বাড়িতে থাকে শিক্ষকজীবন থেকে অবসরপ্রাপ্ত তার পিসি। তিনি এখানে একা থাকেন। প্রসূন পরিকল্পনা করে এসেছে যে, বাড়িটা বিক্রি করে কলকাতায় একটা ফ্ল্যাট কিনে রেখে দেবে এবং পিসিকে নিয়ে স্থায়ীভাবে বিলেতে তার কাছে নিয়ে যাবে।রণদীপের উদ্যোগে বাড়ি বিক্রি হয়। প্রসূনের ফেরার দিন এগিয়ে আসে। বিমান ধরার ঠিক আগে এয়ারপোর্টে সে একটা থামবন্ধ চিঠি আর আর একটা মোটা প্যাকেট বন্ধুদের হাতে ধরিয়ে দেয়। তার অনুরোধ অনুযায়ী সেদিন বিকেলে তার বন্ধুরা চিঠিটা খুলে পড়ে জানতে পারে যে, অনিন্দিতার সাথে প্রসূনের দেখা হয়েছিল ইংল্যান্ডে, তবে অনেক বছর পরে। অনিন্দিতা তখন বিবাহবিচ্ছিন্না ও ব্রেষ্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত। সে তখন প্রসূনকে অনুরোধ করে যে তার মৃত্যুর পরে প্রসূন যেন অনিন্দিতার একমাত্র মেয়েকে নিজের কাছে রাখে এবং অভিভাবক হিসেবে দেখাশোনা করে। প্রাক্তন প্রেমিকার জন্য ভাই করে প্রসূন। সেদিন বিকেলে বন্ধুরা বড় প্যাকেটটা খুলে অবাক বিস্ময়ে দেখে প্যাকেটে বাড়ি বিক্রি-র জন্য 'পাওয়ার অফ অ্যাটনী' নয়, রয়েছে একটা দানপত্র।
বাবা-মায়ের স্মৃতিবিজড়িত নিজেদের পুরোনো বাড়িটা মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন ছাত্রসমিতিকে দান করে দিয়ে গেছে প্রসূন- যেখানে তারা একটা বড় অফিস আর মিউজিয়াম করতে পারে। শুধু অনুরোধ তার- বাড়িটার নাম যেন দেওয়া হয় 'অনিন্দিতা ভবন'। পরিচালনায় ডাঃ শুদ্ধসত্ত্ব চট্টোপাধ্যায়। মূল ভাবনা ও প্রযোজনা ডাঃ অভীক ঘোষ। কাহিনি ডাঃ চিন্ময় নাথ। সঙ্গীত পরিচালনায় ডাঃ শিবালিক ব্যানার্জি। অভিনয় করেছেন ৮ থেকে ৮০ নানা বয়সের ডাক্তাররা। প্রাক্তন সাংসদ ডাঃ মমতা সংঘমিত্রার বয়স এখন ৭৯। মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন প্রিন্সিপাল ডাঃ সিদ্ধার্থ চক্রবর্তীও অভিনয় করেছেন।