জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, শারীরিক অবস্থা নিয়ে ২৪ ঘণ্টার আগে কিছু বলা যাচ্ছে না!
ঢাকা জাকির হোসেন : হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বাংলাদেশের সাবেক ও প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে আগামী ২৪ ঘণ্টার আগে কিছু বলা যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও তাঁর মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
২৩ জুন রবিবার রাতে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের গেটে সাংবাদিকদের কাছে এ তথ্য জানান তিনি।
ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, তাঁর হৃদরোগের সমস্যা আগে থেকেই ছিল। হার্টে ব্লক ছিল, একটা স্টেন্টও (রিং) লাগানো ছিল। সবকিছু পর্যালোচনা করে মেডিকেল বোর্ড তার হার্টে পেসমেকার বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরে বিশেষায়িত কক্ষে (ক্যাথল্যাবে) নিয়ে পেসমেকার স্থাপন করা হয়।'
তিনি বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টা না গেলে, এই মুহূর্তে তাঁর (খালেদা জিয়া) শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করলে তা বিব্রতকর হয়ে যেতে পারে।'
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য ২৩ জুন রোববার ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে বিএনপি। দোয়ার এক পর্যায়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন দলটির মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কান্নারত অবস্থায় তিনি বলেন, 'খালেদা জিয়া জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন। আসুন, আমরা সবাই তার জন্য দোয়া করি। আমরা যেন তার নেতৃত্বে আবার জেগে উঠতে পারি।'
বিএনপির এই নেতা বলেন, 'আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে খালোদা জিয়া দীর্ঘকাল ধরে কারারুদ্ধ। রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার জন্য তাকে কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছে। তাকে বাসায় থাকার সুযোগ দেওয়া হলেও তিনি পুরোপুরি বন্দি আছেন।'
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, কারাগার থেকেই তিনি অসুস্থ হয়েছেন। তার কোনো চিকিৎসা হয়নি। বাংলাদেশের বর্তমান শাসকদলের প্রধান ব্যক্তিগত রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে খালেদা জিয়াকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত রেখেছেন।
প্রসঙ্গত, বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের একজন, বাংলাদেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ও সাবেক বিরোধীদলীয় নেতা৷ তিনি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার অন্যতম ঘোষক মরহুম বীর উত্তম জিয়াউর রহমানের সহধর্মিণী৷ ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি একজন সাধারণ গৃহবধূ থেকে রাজনীতিতে এসেছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ স্বৈরশাসক জেনারেল এরশাদ ক্ষমতার জোরে বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন। জোরপূর্বক রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের বিরুদ্ধে ও গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলনে নামেন বেগম খালেদা জিয়া। রাজপথের নেত্রী হিসেবে বেগম খালেদা জিয়া ১৯৮৪ সালের ১০ মে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিএনপির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর অকুতোভয়, সাহসী, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বেগম খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের পতাকা সমুন্নত রাখতে আপসহীন ভূমিকা নেন। দীর্ঘ নয় বছর তিনি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেন। তার আপসহীন নেতৃত্ব স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়ে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের সূর্যকে নতুনভাবে উদিত করে৷ স্বৈরশাসনবিরোধী আপসহীন ভূমিকার জন্য সে সময় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম তাঁকে ‘মোস্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার অব দ্য ইস্ট’ হিসেবে আখ্যায়িত করে৷ বাংলাদেশের জনগণ তাকে অভিহিত করে দেশনেত্রী অভিধায়। ১৯৯০ সালে সামরিক স্বৈরশাসক হিসেবে এরশাদের পতনের পূর্ব পর্যন্ত খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের জন্য চলমান আন্দোলনে নেতৃত্বদানের মাধ্যমে সহায়তা করেন। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জয়ী হওয়ায় তিনি প্রধানমন্ত্রী হন। ১৯৯৬-এর স্বল্পস্থায়ী সরকারেও তিনি দায়িত্বপালন করেন৷ ১৯৯৬ সালের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে৷ খালেদা জিয়ার দল পুনরায় ক্ষমতায় আসে ২০০১ সালে। ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি নিজস্ব ৫টি সংসদীয় আসনের সবগুলোতেই জয়ী হন। ফোর্বস সাময়িকীর বিশ্বের ১০০ ক্ষমতাবান নারী নেতৃত্বের তালিকায় ২০০৪ সালে খালেদা জিয়ার অবস্থান ছিল ১৪তম, ২০০৫ সালে ২৯তম ও ২০০৬ সালে ৩৩তম৷ ২০১১ সালের ২৪ মে নিউ জার্সি স্টেট সিনেটে খালেদা জিয়াকে ’ফাইটার ফর ডেমোক্রেসি’ পদক প্রদান করা হয়৷ যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট সিনেট কর্তৃক কোন বিদেশিকে এ ধরনের সম্মান প্রদানের ঘটনা এটাই ছিল প্রথম৷