অগ্নিযুগের বীর বিপ্লবী শহীদ সত্যেন্দ্রনাথ বসুর জন্মদিবসে বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি!

নিজস্ব সংবাদদাতা : সত্যেন্দ্রনাথ বসু বা সত্যেন বোস ভারতের মুক্তি যুদ্ধের বীর সেনা ছিলেন।অনুশীলন সমিতির একজন সদস্য ছিলেন ভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের বীর বিপ্লবী ছিলেন। সত্যেন্দ্রনাথ বসু অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলায় ৩০ শে জুলাই ১৮৮২ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন । তাঁর বাবা অভয়া চরণ বসু মেদিনীপুর কলেজের একজন অধ্যাপক ছিলেন । ১৮৫০ সাল থেকে, তিনি মেদিনীপুরে স্থায়ী ভাবে বসতি স্থাপন করেন পরবর্তী সময়ে সত্যেন্দ্রনাথের বস্তু হয়ে ওঠে মেদিনীপুর । অভয়া চরণের পাঁচ পুত্র জ্ঞানেন্দ্র নাথ, সত্যেন্দ্র নাথ, ভূপেন্দ্র নাথ, সুবোধ কুমার সহ আরেক এক ছেলে এবং তিন কন্যা ছিল । সত্যেন্দ্রনাথ শ্রী অরবিন্দের মামা ছিলেন , যদিও তিনি প্রায় দশ বছরের ছোটো ছিলেন ।
বসু পরিবারটি মূলত ২৪ পরগনার জেলার বোড়াল এবং বিখ্যাত বাবু রাজ নারায়ণ বসুর বংশধর । রাজ নারায়ণ বসুর পিতা বাবু নন্দ কিশোর বসু ছিলেন রাজা রাম মোহন রায়ের অনুসারী । তাঁর পরিবারের মধ্যে তিনিই প্রথম ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষিত হন । বাবু নন্দ কিশোরের তিন পুত্র ছিল , যার মধ্যে বড় বাবু রাজ নারায়ণ ভীষণ ধর্মভীরু ও মাটির মানুষ হিসাবে এলাকায় খ্যাতি ছিল ব্যাপক । এছাড়াও তিনি আদি ব্রাহ্মসমাজের বিশিষ্ট সদস্য ছিলেন এবং তৎকালীন সময়ে হিন্দু কলেজের সিনিয়র স্কলার ছিলেন । তাঁর দুই ছোট ভাই ছিলেন মদন মোহন এবং অভয়া চরণ । ১৮৫০ বা তার আশেপাশে বাবু রাজ নারায়ণ তাঁর দুই ছোট ভাইয়ের সাথে পৈতৃক গ্রাম ছেড়ে মেদিনীপুরে এসে স্থায়ী বসবাস করেন ।

সত্যেন সফলভাবে প্রবেশিকা এবং এফ. এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় । তারপর সত্যেন্দ্রনাথ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বি.এ. পড়বার জন্যে ভর্তি হয়েছিলেন কিন্তু ফাইনাল পরীক্ষা না দিয়ে পড়া শুনা ছেড়ে দিলেন । তিনি কলেজ ছেড়ে মেদিনাপুর কালেক্টরেটে প্রায় এক বছর কাজ করেছিলেন ।

তার অগ্রজ জ্ঞানেন্দ্রনাথ এবং রাজনারায়ণ বসুর প্রভাবে মেদিনীপুরে ১৯০২ সালে একটি গুপ্ত বিপ্লবী সংগঠন গড়ে উঠেছিলো । সেই সংগঠনের নেতা ছিলেন হেমচন্দ্র দাস কানুনগো এবং সত্যেন্দ্রনাথ ছিলেন তার সহকারী । ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় তিনি "ছাত্রভাণ্ডার" গড়ে তোলেন। এখানে তাঁত , ব্যায়ামচর্চা ইত্যাদির আড়ালে বিপ্লবীদের ঘাঁটি তৈরি হয়ছিল । বীর ক্ষুদিরাম বসু তার সাহায্যে বিপ্লবী দলভুক্ত হয়ে এখানে আশ্রয় নিয়ে ছিলেন । ক্ষুদিরাম তারই নির্দেশে "সোনার বাংলা" শীর্ষক বিপ্লবাত্মক ইশতেহার বিলি করেতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।

সত্যেন্দ্রনাথকে বন্দুক রাখার অভিযোগে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল। যে বন্দুক টি তার কাছে ছিলো সেই বন্ধুকটির লাইসেন্স তার ভাইয়ের নামে ছিল । পুলিশ রিপোর্ট অনুসারে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে দুই মাসের সশ্রম কারাদন্ডে দণ্ডিত করা হয়েছিল ।

ক্ষুদিরাম বোস ও প্রফুল্ল চাকী মুজফফরপুর বোমা হামলার মাত্র দু'দিন পরে ৩০ এপ্রিল ১৯০৮ কিংসফোর্ডকে হত্যার লক্ষ্য নিয়েছিল , পুলিশ ১৯০৮ সালের ২ রা মে বাংলায় বহু বিপ্লবীদের গ্রেপ্তার করেছিল । ৩৩ জন বিপ্লবীদের বিরুদ্ধে সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর অভিযোগ আনা হয়েছিল । কানাইলাল দত্ত এই ব্যক্তিদের মধ্যে একজন ছিলেন, তাকেও ১৯০৮ সালের ২ রা মে গ্রেপ্তার করে আলিপুর কারাগারে আটক করা হয়েছিল ।

পুলিশ ২ মে ১৯০৮ সালে কলকাতার ৩২ মুরারি পুকুর রোড চত্বরে অভিযান চালায় এবং একটি বোমা-কারখানার সন্ধান পান , পুলিশ হানা দিয়ে সেখান থেকে প্রচুর পরিমাণে অস্ত্র সহ গোলাবারুদ, বোমা এবং অন্যান্য সরঞ্জাম উদ্ধার করে । পুলিশ বিপ্লবীদের গ্রেপ্তার করে সাথে সাথে সমস্ত কিছু বাজেয়াপ্ত করে ।

সমগ্র বাংলা এবং বিহারের বিভিন্ন যায়গায় পুলিশি অভিযান শুরু হয় । খানা তালাসি চালানো শুরু করে এবং বিপ্লবীদের টার্গেট করা থেকে শুরুকরে তাঁদের সমস্ত কিছু বাজেয়াপ্ত করা শুরু করা হয়েছিলো । অরবিন্দ ঘোষ, বরেন্দ্র কুমার ঘোষ, উল্লাসকার দত্ত, ইন্দু ভূষণ রায় সহ আরও অনেককে এই সময় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ।

ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব এবং অগ্নিযুগের বিপ্লবী সত্যেন বসু আলিপুর বোমা মামলার রাজসাক্ষী নরেন্দ্রনাথ গোস্বামী বা নরেন গোঁসাইকে গুলি করে হত্যা করার জন্য ২৩ নভেম্বর, ১৯০৮ সালে সত্যেন্দ্রনাথ বসুর প্রেসিডেন্সি জেলে ফাঁসি হয় ।