রাজ্যের গ্রামীণ রাস্তায় দুর্ঘটনা রুখতে আইআইটি খড়গপুরে ৩ দিনের বিশেষ কর্মশালা জেলা পরিষদ ও পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষদের নিয়ে!

নিজস্ব সংবাদদাতা :   রাজ্যের সমস্ত রাস্তাতেও ইদানীং বাড়ছে দুর্ঘটনার হার! দুর্ঘটনা কমাতে তথা যথাসম্ভব রুখে দিতে আইআইটি খড়্গপুরের দ্বারস্থ হল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। পথ দুর্ঘটনার সংখ্যা কমাতে এবার পলিসি রিপোর্ট বানাল খড়গপুরআইআইটি , এদিন রাজ্য সরকারকে তারা সেটা জমা দেয়। রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে ভুল দিক নির্দেশনা, ভুল রোড ইঞ্জিনিয়ারিং, গতির ফারাক, নজরদারির অভাব। অধ্যাপক ভার্গব মৈত্র‍্য জানাচ্ছেন, গতি হচ্ছে দুর্ঘটনার আসল কারণ৷ সেই গতি নিয়ন্ত্রণে একাধিক ব্যবস্থা রাখা উচিত। তাঁদের রিপোর্টে যে যে বিষয় উঠে এসেছে তা হল –
১) চালকদের অনেকেই আছেন, যাঁদের হাইওয়ে ধরে গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতা নেই।
২) রাস্তায় যথাযথ নির্দেশিকা নেই। ফলে পথচারী বা গাড়ি চালক কেউই জানেন না তাঁদের যাতায়াতের উপায় কী?
৩) গতি যথাযথ নয়। সেই গতি রাস্তা ধরে ধরে ঠিক করতে হবে।
৪) VIP বা VVIP গাড়ির ড্রাইভাররা ভাবছেন, তাঁদের পুলিশ ধরবে না। ফলে তাঁরা রিস্ক নিয়ে বেরোচ্ছেন।
৫) অ্যাম্বুলেন্স বা দমকলের গাড়ির চালকও জানেন, তাঁরা গতি নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু যেখান দিয়ে বেরোচ্ছেন, সেখানে আদৌ ওই গতিতে যাওয়া যাবে কিনা সেটা তাঁরা জানেন না।
৬) বারবার বলার পরেও পথচারীরা সচেতন নন। গাড়ির সামনে দিয়েই তাঁদের দৌড় চলে।
৭) জাতীয় সড়ক ধরে টোটো যাচ্ছে। জাতীয় সড়ক ধরে তীব্র গতিতে যাচ্ছে মোটরবাইক। এগুলো যে স্লো মুভিং ভেহিক্যালস করিডর নয়, সেটা তাঁরাও বুঝছেন না। এমনকী, ভ্যানও যাচ্ছে হাইওয়ে দিয়ে
৮) হাইওয়ে মানেই ১০০ কিমি/ঘণ্টা এই ধারণ হয়ে আছে। কিন্তু সেই হাইওয়ে জনবহুল এলাকা ধরে গেলে সেটা তো আর ১০০ কিমি/ঘণ্টা গাড়ি যাওয়ার নয়।
৯) জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ একাধিক জায়গায় রাস্তা চওড়া করছে। কিন্তু সেই হাইওয়ের পাশে একাধিক স্কুল থাকছে। তা নিয়ে ভাবনা নেই। (ডানকুনি থেকে খড়গপুর এই অংশে প্রায় ৮০টি স্কুল আছে)
১০) গ্রামে স্টেট হাইওয়ে দারুণ হয়েছে। ফলে গাড়ি চলছে দ্রুত। আর এই রাস্তাতেই উঠে পড়ছে সাইকেল। নজরদারি নেই। তাই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হচ্ছে।
১১) গাড়ির দেরি হচ্ছে এটাই ভাবনাচিন্তা। মানুষের কী কী ক্ষতি হচ্ছে সেটা দেখা হচ্ছে না।৩০ কিমি সর্বনিম্ন ও ৫০ কিমি সর্বোচ্চ। এলিভেটেড করিডরে গতি বাড়ানো যায়। কারণ ওখানে সাইকেল বা ট্রাক ওঠে না। টু-হুইলার ৫০ কিমি/গতি বেঁধে রাখা উচিত। রাতের দুর্ঘটনার কারণ হল দৃশ্যমান্যতা কম। আলো ও রিফ্লেক্টর যথাযথ প্রয়োজন।

সমস্যা একেবারে গোড়া থেকে নির্মূল করতে, আইআইটি-র তরফে রাজ্যের সমস্ত পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ, জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ এবংইঞ্জিনিয়ারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।জনপ্রতিনিধিদের এই প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে পথ নিরাপত্তা তথা সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটির বার্তা জনমানসে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে রাস্তাগুলি কিভাবে নির্মাণ করলে দুর্ঘটনার হার কমবে কিংবা দুর্ঘটনা প্রতিহত করতে কিভাবে রাস্তা তৈরি করা প্রয়োজন, সেই বিষয়েও পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ এবং ইঞ্জিনিয়ারদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। দুর্ঘটনা রুখতে প্রত্যন্ত এলাকাতেও পথ নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রচারের সাথে সাথেই, প্রতিটি রাস্তায় সচেতনতামূলক সাইন বোর্ড দেওয়া, রাস্তার উপর মার্কিং করে দেওয়া প্রভৃতি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ নির্মল ঘোষ।