৫ দফা দাবিতে ইউনূস সরকারকে ‘চরম হুঁশিয়ারি’ জামায়াতের, সময়সীমা আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত!
ঢাকা, জাকির হোসেন: নির্বাচনের আগে ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ নিয়ে গণভোট আয়োজন না করলে আরও কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। বৃহস্পতিবার ঢাকার পল্টন মোড়ে এক জনসভায় দলটির নায়েবে আমির (উপপ্রধান) সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম জুলাই ও আগস্টের রক্তই শেষ রক্ত হবে। কিন্তু আমরা হতাশ। প্রয়োজনে আবারও রক্ত দেব, কিন্তু জুলাই বিপ্লবকে ব্যর্থ হতে দেব না।”তাহেরের দাবি, অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘রেফারি’র ভূমিকা নিতে হবে, যাতে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে আলোচনার সুযোগ তৈরি হয়। তিনি বলেন, “আমরা ইতিমধ্যে আলোচনার জন্য দুই সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছি। সরকারকেও তার পক্ষ থেকে কমিটি ঘোষণা করতে হবে।” তাহের আরও জানান, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তিনি সফল হননি।
তিনি সতর্ক করে বলেন, “আমাদের পাঁচ দফা দাবি ১১ নভেম্বরের মধ্যে মেনে নিতে হবে। তা না হলে আমরা ‘ঢাকা অভিমুখে লং মার্চ’ কর্মসূচি দেব।” একই সুরে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “নভেম্বরের মধ্যেই গণভোট আয়োজন করুন, নইলে আপনারা যে সম্মান অর্জন করেছেন, তা ধ্বংস হয়ে যাবে।”জামায়াতের পাঁচ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে— নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজন ও জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের ঘোষণা, রাজনৈতিক গ্রেপ্তার ও হয়রানি বন্ধ, নির্বাচনে সব দলের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা, ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, এবং রাজনৈতিক সংগঠনগুলির কার্যক্রমে বাধা না দেওয়া।এই দাবিগুলি তুলে ধরে বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে জামায়াত ও তার নেতৃত্বাধীন আট-দলীয় জোটের প্রতিনিধি দল। স্মারকলিপিটি গ্রহণ করেন সরকারের শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান।মিয়া গোলাম পরওয়ার সাংবাদিকদের বলেন, “আজ বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক বৈঠক চলছিল। সেই বৈঠক থেকেই প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান আমাদের সঙ্গে দেখা করেন।” আদিলুর রহমান পরে সাংবাদিকদের জানান, “সরকার রাজনৈতিক দলগুলোকে সাত দিনের সময়সীমা দিয়েছে। এই সময়ের মধ্যে যদি তারা সম্মিলিত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সরকার নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেবে।” এর আগে দুপুর পৌনে ১টার দিকে আট দলের প্রতিনিধিরা রাষ্ট্রিয় অতিথি ভবন যমুনায় পৌঁছে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমানের কাছে স্মারকলিপি জমা দেন। এদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতা গাজী আতাউর রহমান সভায় বলেন, “গণভোট অবশ্যই নির্বাচনের আগে হতে হবে। একসঙ্গে দুইটি আয়োজন কখনই গ্রহণযোগ্য নয়।”ঢাকার রাজনৈতিক মহলে জামায়াতের এই হুঁশিয়ারি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়সীমা যখন শেষের দিকে, তখন এই দাবিগুলি দেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও রাজনৈতিক সংলাপের উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে।