অনুষ্ঠিত হলো সুবর্ণ রৈখিক লোক উৎসব মশা খেদা!

ঝাড়গ্রাম নিজস্ব সংবাদদাতা : গ্রামবাংলার অন্যান্য স্থানের মতো দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত বাংলা ও সুবর্ণ রৈখিক অববাহিকা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে নানা ধরনের লৌকিক উৎসব। এই ধরনের লুপ্তপ্রায় একটি লৌকিক উৎসব হলো 'মশা খেদা" বা "মশা খেদানো"। এর আক্ষরিক অর্থে হলো মশা তাড়ানো। কালীপূজার অমাবস্যা রাতের পরে প্রতিপদের ভোরে অনুষ্ঠিত হয় এই 'মশা খেদা' উৎসব।ভোর রাতে ছেলে ছোকরা দের ঘুম থেকে তুলে দেন বাড়ির বড়রা। আবার কালীপূজা গোটা রাত জেগে ভোর রাতে 'মশা খেদা'-তে যান অনেকে।মূলত ছোটদের উদ্যোগে বড় দের সহযোগিতায় তৈরি হয়ে যায় মশা খেদানো দল।সবাই একজোট হয়ে শুরু হয় মশা খেদা। মশা খেদার সময় পুরানো খালি তেলের টিন, টিন ভাঙ্গা, লোহাভঙ্গা,কুলাভাঙ্গা,ভাঙ্গা ঝুড়িকে ছোট লাঠি বা লোহার ছোট দন্ড দিয়ে বাজোনো হয় সহ অন্য কিছু বাদ্যযন্ত্রও সাথে থাকে।সব মিলিয়ে কান ঝালাপালা করা শব্দের সাথে সাথেই মুখে মশা খেদা বিষয়ক নানা ছড়া কাটতে কাটতে চলে মশা খেদার কাজ।ছড়া তে বলা হয়,' মশা গেলা হু হু......,'মশা গেলা আড়ে বাড়ে......। রাস্তার দেখার জন্য মাটির হাঁড়ির ভিতর মোমবাতি জ্বালিয়ে হাঁড়ির মুখটাকে টর্চের আলোর মতো ব্যাবহার কর হয়। আবার কেউ কেউ মশাল সাথে নেনে। কোথায় কোথায় পুরানো টায়ারও জ্বালানো হয়। অনেক জায়গায় মুখে কোরোসিন নিয়ে অদ্ভুত কায়দায় মশালের উপর ছূঁড়ে দিয়ে আগুনের গোলা তৈরি করেন ছেলে ছোকরারা। লোকসংস্কৃতি বিষয়ে অনুসন্ধিৎসু,ঝাড়গ্রাম জেলার ভূমিপুত্র, মেদিনীপুর সদরের চুয়াডাঙ্গা হাইস্কুলের শিক্ষক সুদীপ কুমার খাঁড়া'র মতে," লৌকিক বিশ্বাস অনুযায়ী এভাবে মশা তাড়ালে মশার প্রকোপ কিছুটা কমে। আসলে বর্ষা শেষের পরে শীতের আগমনের সময় কালটাতে মশার প্রকোপ সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়ে থাকে বলে অনেকে মনে করেন। আবার মনে করা হয় মশা খেদা আসলে অলক্ষীকে বিদায় করা উৎসব। আগেকার দিনে গোবর দিয়ে অলক্ষীর কাল্পনিক মূর্তিও তৈরি করা হতো।অলক্ষীর সঙ্গী হলো মশা ও নানা ক্ষতিকারক পোকামাকড়। যারা কিনা মানুষ, গবাদিপশু ও ফসলের ক্ষতি করে।মশা খেদা'র মধ্য দিয়ে অলক্ষী ও তার সঙ্গীদের গ্রাম থেকে বিদায় করার চেষ্টা করা হয়।" তাঁর আক্ষেপ,বর্তমান আধুনিকতার ছোঁয়ায় মশা খেদা প্রায় লুপ্ত প্রায়। এসবের মাঝেও এবারে গোপীবল্লভপুর-১ ব্লকের ছাতিনাশোলের টিকায়েৎপুর,গোপীবল্লভপুর-২ ব্লকের জুনশোলা, সাঁকরাইল ব্লকের মৌভান্ডার সহ বেশ কিছু এলাকায় 'মশা খেদা" অনুষ্ঠিত হয়েছে।মশা খেদাতে অংশ নেন জুনশোলাতে অংশ নেন বিশ্বজিৎ পাল, সুব্রত পাল, রিদম পাল,রিপণ মান্না,সাগর দে ,সুদীপ্ত দে,অনীক জানা,অকেশ শর্মা,সায়ন পাঁজা, গৌরাঙ্গ রাউৎ,লম্বুধর বাগ,সঞ্জীব গিরি, সুদীপ খামকাট,শিল্পা দে,স্বাগতা দে,রণিতা প্রধান,সায়ন্তিকা দাস,পৌলোমী পাঁজা প্রমুখ। উল্লেখ্য উত্তর পূর্ব ভারতের অসম রাজ্যের কিছু কিছু মশা খেদা প্রচলিত রয়েছে ।তবে সেটা অগ্রাহায়ণ মাসের পূর্ণিমা রাতে অনুষ্ঠিত হয়। এখানেও বালকের লাঠি হাতে চক্রাকারে ঘুরতে ঘুরতে মশা খেদা গান গায়।গান গাইতে গাইতে গৃহস্থকে আশীর্বাদ করে।