বাংলাদেশে সাংবাদিককে নির্মমভাবে কুপিয়ে ‘খুন’, তোলা আদায়ের ভিডিও রেকর্ডিং করতেই ঘনিয়ে এল মৃত্যু!

ঢাকা, জাকির হোসেন: মুহাম্মদ ইউনূসের বাংলাদেশে নিরাপত্তাহীন সাংবাদিকরা! তোলাবাজির খবর করতে গিয়ে মর্মান্তিক পরিণতি সাংবাদিকের, এমনটাই খবর। ঢাকার অদূরে গাজীপুরের সাংবাদিককে কুপিয়ে খুনের অভিযোগে তোলপাড় গোটা বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় তোলা আদায়ের ভিডিও রেকর্ড করতেই দুষ্কৃতীদের হাতে প্রাণ দিতে হল আসাদুজ্জামান তুহিন নামে এক সাংবাদিককে। তাঁকে হত্যার একটি ভিডিও সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। ঘটনায় তদন্তে নেমেছে গাজীপুর মহানগর পুলিশ। নিহত সাংবাদিকের নাম আসাদুজ্জামান তুহিন, বয়স আটত্রিশ বছর। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামে। ‘দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ’ নামে সংবাদপত্রের গাজীপুরের সাংবাদিক হিসেবে কাজ করতেন তুহিন। বুধবার চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় দুষ্কৃতীদের তোলা আদায়ের ভিডিও রেকর্ডিং করেছিলেন তিনি। এরপরই পাঁচ-ছ’জন দুর্বৃত্ত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটা নাগাদ চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় তাঁকে ধারালো অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, তুহিন দৌড়ে ইদগাঁ মার্কেটের একটি চায়ের দোকানে আশ্রয় নেন। পরে দুষ্কৃতীরা তাঁকে দোকানের ভিতরে ঢুকে এলোপাথাড়ি কোপাতে থাকে। উপুর্যপরি কোপানোয় তুহিনের মৃত্যু হলে দুষ্কৃতীরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। স্থানীয় ব্যবসায়ী খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমি দোকানে বসেছিলাম। হঠাৎ তুহিন দৌঁড়ে এসে আমার দোকানে ঢুকে পড়েন। পরে তিনজন আমার দোকানের ভেতরে ঢুকে তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করে। এসময় দোকানের বাইরে দুজন রামদা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আমি বাঁধা দিতে গেলে তাঁরাও আমাকে কুপিয়ে হত্যা করার হুমকি দেয়। ওই সময় অনেক লোক তাকিয়ে দেখেছে, কিন্তু কেউ বাঁচাতে আসেনি।’’ সাংবাদিক আসাদুজ্জামানের ফেসবুক প্রোফাইল ঘেঁটে দেখা গিয়েছে, এদিন রাত আটটার দিকে চৌরাস্তা এলাকার একটি ভিডিও শেয়ার করে লেখেন, ‘‘যেমন খুশি তেমন রাস্তা পার হওয়ার দৃশ্য, গাজীপুর চৌরাস্তা।’’ গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার রবিউল হাসান বলেন, ‘‘আমরা এই ঘটনায় কিছু ভিডিও ফুটেজ হাতে পেয়েছি। কিছু ইঙ্গিতও পেয়েছি। আমরা এ ঘটনার জড়িতদের ধরতে অভিযান শুরু করেছি।” এদিকে সাংবাদিক তুহিনকে হত্যার চাঞ্চল্যকর ঘটনায় পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় তুহিনের বড় ভাই মোহাম্মদ সেলিম বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন৷ বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) দিবাগত রাতে বাসন থানায় মামলা দায়ের করা হয়। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পাঁচজনকে আটক করা হয়। আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করলেও ‘তদন্তের স্বার্থে’ তাদের পরিচয় প্রকাশ করেনি পুলিশ।
বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তথা ওসি শাহীন খান জানান, সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যার ঘটনায় তার বড় ভাই মোহাম্মদ সেলিম বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে মামলাটি রেকর্ড হয়েছে। রাতেই বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
এর আগে আরেক তোলাবাজির খবর সংগ্রহ করতে গিয়েই গাজীপুরে দুষ্কৃতীদের মারধরের জেরে আহত হন আরেক সাংবাদিক। তাঁর নাম আনোয়ার হোসেন, বয়স ৩৫ বছর। গুরুতর আহত অবস্থায় বর্তমানে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আহত সাংবাদিকের মা আনোয়ারা সুলতানা গাজীপুরের সদর থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগ বলা হয়েছে, আসামিরা নগরের সাহাপাড়া এলাকায় প্রতিটি অটোরিকশা থেকে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ টাকা চাঁদা উত্তোলন করেন। এই ঘটনায় আনোয়ার সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে আসামিরা টের পেয়ে যান। পরে স্থানীয় তোলাবাজদের সহযোগিতায় ১৫ থেকে ১৬ জন তাঁর উপর হামলা করে। এই ঘটনায় এখন অবধি ফরিদ নামের একজনকে আটক করার খবর পাওয়া গেছে৷