কালীঘাট মন্দির সেকাল ও একাল.. পার্থপ্রতিম বন্দ্যোপাধ্যায়!
।।করালো বদ নং ঘোরাঙ মুক্ত কেশী চতুর ভুজাৄ্:ঙ ত্রিনেত্রম।। কি দিব মা ? কি আছে আমার আমি যে তোমার তুমি যে আমারি যত আশা ওই পাশ রি।।
ভারত মন্দিরে দেশ হিসেবে পরিচিত। ভারতে ২০ লক্ষ্ মন্দির রয়েছে। কালীঘাট মন্দির টি হিন্দু দেবী কালীর প্রতি নিবেদিত এবং ভারতের অন্যতম বিখ্যাত কালী মন্দির রূপে বিবেচিত। প্রতিদিন হাজার হাজার কালী ভক্ত মন্দিরে আসেন এবং পূজা করেন। এটি একটি শক্তিপীঠ সতীর একান্ন পিঠের অন্যতম একটি পীঠস্থান। কালীঘাট মন্দিরের সাথে সম্পর্কিত অসংখ্য গল্প রয়েছে সবচেয়ে জনপ্রিয় গল্প গুলির মধ্যে একটি হলো আত্মারাম ব্রহ্মচারী নামে এক যোগী পুরুষ ভাগীরথী নদীতে মানুষের পায়ের আঙ্গুল আকৃতির কাঠামো দেখেছিলেন লোকে বিশ্বাস করে যে জল থেকে আসা আলোর রশ্মি তাকে নির্দেশ করেছিল ব্রাহ্মণ পাথরের টুকরোটি প্রার্থনা করেছিলেন। তাকে স্বপ্নে জানানো হয়েছিল যে পায়ের আঙ্গুলটি দেবী সতীর স্বপ্নে তাকে একটি মন্দির স্থাপন করতে বলা হয়েছিল তাকে বলা হয়েছিল নকুলেশ্বর ভৈরবের স্বয় ্ভু লিঙ্গের সন্ধান করতে। ব্রহ্মচারী স্বয়ং ভু লিঙ্গ খুঁজে পেয়ে লিঙ্গ এবং পায়ের আঙ্গুল আকৃতির কাঠামোর পুজো শুরু করেছিলেন। কালীঘাট মন্দিরের উল্লেখ পঞ্চদশ শতাব্দীর মনসামঙ্গল কাব্য উল্লেখ রয়েছে। এবং সপ্তদশ শতাব্দীতে কবি চন্ডিতে উল্লেখ করেছেন লালমোহন বিদ্যানিধির লেখাতেও কালীঘাট মন্দিরের উল্লেখ রয়েছে। বর্তমান মন্দিরটি ২০০ বছরের পুরনো এবং উনবিংশ শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছিল যশোরের রাজা বসন্ত রায় আদি মন্দির নির্মাণ করেন।
পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী বিশ্বাস করা হয় কালীঘাট হল সেই স্থান। যেখানে সতীর ডান পায়ের আঙ্গুল পড়েছিল দেবী কালী কে হিন্দু ধর্মের একজন ব্যাতিক্রমী ভয়ঙ্কর দেবী হিসেবে দেখা হয়। দেবী কালিকা ত্রাণকর্তী এবং ধ্বংসকারী হিসেবেও উল্লেখ পাওয়া যায়। কালীঘাটের দেবী কালীর মূর্তি অন্যান্য মূর্তি থেকে আলাদা মূর্তিটিতে তিনটি প্রধান চোখ চারটি হাত এবং একটি দীর্ঘ জিহবা রয়েছে। আত্মারাম ব্রহ্মচারী এবং ব্রহ্মানন্দ গিরি দ্বারা নির্মিত এই মূর্তিটি বেলে পাথর দিয়ে তৈরি দেবীর এক হাতে শয়তান রাক্ষস শুম্ভের মাথা রয়েছে অন্য হাতে তিরস্কার রয়েছে , যা ইঙ্গিত করে স্বর্গীয় তথ্য দ্বারা মানুষের অহংকারকে হত্যা করা উচিত। এবং আমাদের আচরণ থেকে নির্মূল করা উচিত।
এভাবেই মোক্ষ অর্জন করা সম্ভব। কালীঘাট মন্দিরের প্রধান উৎসব গুলির মধ্যে অন্যতম রামনবমীর উৎসব অন্য উৎসব গুলির মধ্যে দুর্গাপূজা অত্যন্ত উৎসাহ উদ্দীপনা র সাথে পালন করা হয়ে থাকে এই মন্দিরের স্নানযাত্রা ও খুব বিখ্যাত বর্তমান হালদার পরিবারের বংশধরেরা মন্দিরের দায়িত্বে আছেন এবং উনাদের পরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্য দের প্রতিনিধিরায় সতী অঙ্গ চোখ বাধা অবস্থায় স্পর্শ করেন এবং পূজা অর্চনার মাধ্যমে সোনায় বাঁধানো বেনারসি দিয়ে সতী অঙ্গ পুনরায় নিজস্থানে রেখে দেন। কালী ক্ষেত্রে দীপিকা অনুযায়ী ষোড়শ শতকের মধ্যভাগে ভুবেনেশ্বর ব্রহ্মচারী নামে এক সাধক দেবী কালীর পূজা করতেন তিনি তার জামাই ভবানী দাস চক্রবর্তীকে কালীঘাট মন্দির হস্তান্তরিত করেছিলেন। যশোরে রাজা প্রতাপাদিত্যর কাকা রাজা বসন্ত রায় এখনকার মন্দির তৈরি করে দিয়েছিলেন পরে দেবীর মন্দির জীর্ণ হয়ে যাওয়ায় 1809 সালে শ্রাবণ্য রায়চৌধুরীর পরিবারের তরফ থেকে এখানে মন্দির তৈরি করা হয়। এমন তাই বর্তমান মন্দিরের সেবায়ত হালদার পরিবারের দাবি।এই মন্দিরের দেবী ষষ্ঠী শীতলা এবং মঙ্গল চন্ডীর প্রতিনিধিত্বকারী তিনটি পাথর রয়েছে । যার পূজা মহিলারাই করে থাকেন। মন্দিরের পূর্ব দিকে কুন্ডু পুকুর খুবই পবিত্র একটি কুন্ডু ভক্তরা বিশ্বাস করেন যে এই কুন্ডে স্নান করলে অনেক উপকার হয় এবং নিঃসন্তান দম্পতিরা সন্তান লাভে সক্ষম হন। এই মন্দিরের রাধা কৃষ্ণের একটি মন্দিরও রয়েছে যা শ্যাম রায়ের মন্দির নামে পরিচিত জন্মাষ্টমী এবং রামনবমীর দিন মহা ধুমধামে অনুষ্ঠান পালন করা হয়। মন্দির প্রাঙ্গণে এবং বিশেষ করে রামনবমীর দিন রাধা কৃষ্ণ নগর পরিক্রমা য় সেবায়েত দের সাথে সকলের দর্শনে বের হন।কালীঘাট মন্দিরে নিত্য কালীপুজো হয় প্রতিদিন সেবায়েত বংশের প্রতিনিধিরা তাদের নিজস্ব পদ্ধতি অনুসারে মায়ের সেবার দায়িত্ব পেয়ে থাকেন এবং উনাদের তত্ত্বাবধানেই মায়ের নিত্য সেবা নিয়ম নীতি মেনে পালন করা হয়ে থাকে বর্তমানে সেবায়েত পরিবারের প্রতিনিধির সংখ্যা এক হাজারের কাছাকাছি। কালীঘাট মন্দির বর্তমানে একেবারে নতুন সাজে এসেছে ভক্তদের মাঝে। কালীঘাট মন্দিরের উপর সোনার চূড়া বসেছে। মায়ের মন্দিরের এই রূপ দেখে ভক্তরা আপ্লুত মন্দিরের সমস্ত ভিতর নতুনভাবে সুসজ্জিত করা হয়েছে মূল মন্দির এবং সমগ্র স্থাপত্য একই জায়গায় রেখে সুন্দরভাবে সুসজ্জিত হয়েছে মায়ের গর্ভ গৃহ থেকে নাট মন্দির ভোগ ঘর কুন্ডু পুকুর বলিদান স্থান এবং
রাধা কৃষ্ণর র মন্দির।
কালীঘাট মন্দির একটি প্রাচীন এবং অন্যতম শক্তিপীঠ। মন্দিরটি হুগলি নদীর তীরে অবস্থিত ছিল কিন্তু কালের বিবর্তনের ফলে পিছিয়ে গেছে নদীটি এবং বর্তমানে এটি একটি সরু খালের রূপ নিয়েছে। কিন্তু এই নদীটিতেই প্রথা অনুযায়ী মায়ের পূজার সমস্ত কাজকর্ম অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে কালীঘাট কলকাতা শহরের দক্ষিণাঞ্চলের প্রাচীনতম এবং সবচেয়ে জনবসতিপূর্ণ এলাকার মধ্যে অবস্থিত। সারা দেশ থেকে অসংখ্য ভক্ত মন্দির পরিদর্শনে সারা বছর ধরেই মাতা , কালীর দর্শনে আসেন। মন্দির সকাল পাঁচটা থেকে দুটো পর্যন্ত খোলা থাকে এবং বিকেল পাঁচটা থেকে সাড়ে দশটা পর্যন্ত দর্শনের জন্য খোলা থাকে।
মন্দিরটির দক্ষিণ কলকাতায় অবস্থিত এবং শহরের সমস্ত এলাকার বাস এবং নিকটবর্তী মেট্রো স্টেশনের মাধ্যমে মন্দিরে প্রবেশ করা সহজসাধ্য।কালীঘাট মন্দিরের বর্তমান উন্নয়নের মধ্যে রয়েছে হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীদের জন্য সু বন্দোবস্ত পরিকল্পিত টয়লেট ব্যবস্থা পার্কিং এবং কালীঘাট মন্দির কমিটি এবং কালীঘাট সেবায়েত কাউন্সিল এক্সিকিউটিভ বডি সদস্যরা সর্বদাই স্থানীয় প্রশাসনকে সাথে নিয়ে দর্শনার্থীদের সাহায্যে কাজ করে চলেছেন। সবচেয়ে স্বস্তিদায়ক একটি ব্যবস্থা মন্দিরে প্রবেশ বা পূজার জন্য অগ্রিম টিকিট কেনার প্রয়োজন নেই।
বর্তমানে বিশিষ্ট শিল্পপতি আম্বানি গোষ্ঠীর সহযোগিতা এবং রাজ্য সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় মন্দির কমিটি এবং সেবায়ক কাউন্সিলের সহযোগিতায় কালীঘাট মন্দির নব রূপে সুসজ্জিত হয়েছে এবং দর্শনীয় এবং উন্নয়নমূলক কাজের পালকে স্কাইওয়াক একটি অন্যতম উন্নয়ন দর্শনার্থীদের জন্য কালীঘাট মন্দির কে শুধুমাত্র একটি ঐতিহ্যবাহী তীর্থস্থান হিসেবেই নয় বরং আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন একটি দর্শনীয় স্থান হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত করেছে। কালীঘাট মন্দির কমিটি এবং কালীঘাট মন্দির কমিটির সেবায়েত কাউন্সিলরের এক্সিকিউটিভ বডি সর্বদাই কালীঘাট মন্দিরের ঐতিহ্য ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর।
বর্তমানে কালীঘাট মন্দিরের সেবায়ত বংশের নবতম প্রজন্ম র সাথে সাথে প্রবীন সেবায়তদের সহযোগিতায় মন্দিরের মন্দিরের সমস্ত পুজো সুন্দরভাবে আয়োজিত হয়। বর্তমান সেবকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বড় ঘরের সেবায়েত ইন্দ্রজিৎ হালদার , দিব্যজিত হালদার অশোক বন্দ্যোপাধ্যায়,বিপ্লব মুখোপাধ্যায়,অমিতাভ মুখোপাধ্যায় এবং প্রবীণতম সেবায়েত,বিদ্যুৎ হালদার প্রমুখ। উপস্থিত এবং অনুপস্থিত সমস্ত সেবায়দদের সহযোগিতায় কালীঘাট মন্দির কমিটি এবং কালীঘাট মন্দির সেবায় কাউন্সিলের এক্সিকিউটিভ বডির ওইকান্তিক সহযোগিতায় ভক্তদের কাছে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র রূপে বিরাজ করছে। যার অধিষ্টাত্রী স্বয়ং দক্ষিণা কালী নকুলশ্বর ভৈরব।