কৌশিকী অমাবস্যা ২০২৪ কখন থেকে পড়ছে ও মাহাত্ম্য?

নিজস্ব সংবাদদাতা : ভাদ্র মাসের অমাবস্যা ঘিরে তন্ত্র সাধনার একটি বিশেষ মাহাত্ম্য থাকে। এই কৌশিকী অমাবস্যা পড়ছে খুব শিগগিরই। সোমবার এই অমাবস্যা পড়ছে। এই অমাবস্যা সোমবার পড়ায় এই অমাবস্যাকে সোমবতী অমাবস্যা বলা হয়। এই দিনে তারাপীঠে বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয়। কথিত রয়েছে সাধক বামাক্ষ্যাপা এই কৌশিকী অমাবস্যার দিনে সিদ্ধিলাভ করেছিলেন।
বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে:
কৌশিকী অমাবস্যা ২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ এ পালিত হবে। কৌশিকী অমাবস্যার তিথি পড়বে, ১ সেপ্টেম্বর মধ্যরাত পার করে অর্থাৎ ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ২ সেপ্টেম্বর ভোর ৫ টা ৫ মিনিট ৫১ সেকেন্ডে। অমাবস্যা তিথি থাকবে মঙ্গলবার ভোর ৬ টা ২৯ মিনিট ৫৮ সেকেন্ড পর্যন্ত।
কৌশিকী অমাবস্যার মাহাত্ম্য- পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, শুম্ভ-নিশুম্ভ দুই অসুর ভাইকে বধ করার জন্য কৌশিকী দেবী আবির্ভূতা হয়েছিলেন। দেবী পার্বতীর দেহকোষ থেকে তিনি আবির্ভূতা হয়েছিলেন বলে, তাঁকে কৌশিকী নামে অভিহিত করা হয়। দেবী কৌশিকী মহামায়ারই অন্যতম রূপ। কথিত রয়েছে, তিনি অযোনিসম্ভবার শক্তির আধার। এই দেবীর হাতেই অসুরদ্বয়ের বধের ভবিষ্যদ্বাণী ছিল। আর তাঁর হাতেই অসুরদ্বয়ের মৃত্যু হয়। বৌদ্ধ ও হিন্দু তন্ত্রশাস্ত্রে এই দিনের এক বিশেষ মাহাত্ম্য আছে। তন্ত্র মতে এই অমাবস্যার রাতকে তারা রাত্রিও বলা হয়। এ দিন এক বিশেষ মুহূর্তে স্বর্গ ও নরক দুইয়ের দ্বার মুহূর্তের জন্য উম্মুক্ত হয় ও সাধক নিজের ইচ্ছামতো ধনাত্মক অথবা ঋণাত্মক শক্তি নিজের সাধনার মধ্যে আত্মস্থ করে ও সিদ্ধি লাভ করে। তাই তন্ত্রসাধনার জন্য এই অমাবস্যা খুবই গুরুত্বপুর্ণ বলে মনে করা হয়। এদিন দেবী কালীর তথা তারা মায়ের বিশেষ পুজো করা হয়ে থাকে। অনেকেই বাড়িতে কালীপুজো করে থাকেন। সারাদিন-রাত একটা ঘিয়ের প্রদীপ ঠাকুরের সামনে জ্বালিয়ে রাখার নিয়ম। এই প্রদীপ যেন কোনওভাবেই নিভে না যায়। কালীপুজোয় কোনও খুঁত থাকতে নেই। তবে এই পুজোর আয়োজন খুব সাধারণ। নৈবেদ্য হিসেবে আতপ চাল, নারকেল, ১০৮টি জবা ফুল, ঘিয়ের প্রদীপ ও ঘি বনিবেদন করা যায়। ভাদ্রমাসের এই অমাবস্যায় সকল ভক্তের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ। তন্ত্র-মন্ত্র সাধনা যাঁরা করেন, তাঁদের কাছে এক পবিত্র দিন।

পৌরাণিক কাহিনি মতে, শক্তিশালী ও পরাক্রমশালী অসুর নিকুম্ভ হত্যা করতে দেবীর শরীরকোষ থেকে আরও এক দেবী সৃষ্টি হয়। শুরু হয় আদ্যাশক্তি ভগবতীর স্তব। সেই থেকে নাম হয় কৌশিকী। দেবী কৌশিকী সৃষ্টির পর ভগবতী কৃষ্ণবর্ণ ধারণ করেন। তারপর থেকে তিনি দেবী কালিকা বা কালী রূপে মর্ত্যে বন্দনা পেয়ে থাকেন। কৌশিকী অবতারে রূপ ধারণ করলে কালীর চার হাত, গলায় নরমুণ্ড, দেহে ব্যাঘ্রচর্ম পরিহিত থাকেন। কথিত আছে, এই তিথিতেই সিদ্ধিলাভ করেছিলেন সাধক বামাখ্যাপা।

কৌশিকী অমাবস্যায় তারা মায়ের সঙ্গে সঙ্গে বামাখ্যাপারও পুজো করা হয়ে থাকে। এই পুজোয় খাঁড়া ও কুশ-কাটা ব্যবহার করা হয়। রীতি অনুযায়ী, তারা মাকে দেওয়া হয় পাঁচ রকমের ফল, ফুল, মিষ্টির ভোগ। তারপরেই শুরু সারারাত জেগে পুজো ও তন্ত্রসাধনা। প্রথা অনুসারে দুপুরের ভোগে থাকে শোল মাছ পোড়া। সঙ্গে থাকে ভাত বা পোলাও, পাঁচ রকমের ভাজা, মিষ্টি, শাক, পায়েস ইত্যাদি।