ভয়াবহ প্রাণঘাতী দূষণের দায়ে অবশেষে কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম দফার ১ ও ২ নম্বর ইউনিটের রবিবার চিমনি ভাঙা হল!

পূর্ব মেদিনীপুর নারায়ণ চন্দ্র নায়ক : ভয়াবহ প্রাণঘাতী দূষণের দায়ে অবশেষে কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম পর্যায়ের ১ ও ২ নম্বর ইউনিটের চিমনি উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে রবিবার ১৩ই এপ্রিল দুপুর ১-৩০ টায় ভাঙা হল। কোলাঘাট-মেচেদা এলাকার হাজার হাজার মানুষ বাড়ির ছাদ বা উঁচু জায়গা থেকে তা প্রত্যক্ষ করে। কয়েক মাস আগে ওই দুটি ইউনিটের বয়লারও ভেঙে ফেলা হয়েছিল। ১৯৮৪ সালে রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু এশিয়ার বৃহত্তম কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম পর্যায়ের তিনটি ইউনিটের উদ্বোধন করেছিলেন। ১৯৯২ সালে দ্বিতীয় পর্যায়ের চার,পাঁচ,ছয় এই তিনটি ইউনিট চালু হয়। প্রতি ইউনিটে ২১০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে মোট ১২৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হত একসময় প্রতিদিন। এই বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রায় ১২ হাজার মেট্রিক টন কয়লা লাগত প্রত্যহ। অত্যন্ত নিম্নমানের কয়লা পুড়িয়ে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র চলত বলে প্রত্যহ প্রায় ৬ থেকে ৭ হাজার মেট্রিক টন ছাই উৎপন্ন হত কেন্দ্রটিতে। ফলস্বরূপ তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে থেকে নির্গত ছাই দূষনে কোলাঘাট,মেছেদা সহ পার্শ্ববর্তী পূর্ব মেদিনীপুর ও হাওড়া জেলার প্রায় ৫০০ বর্গ কিমি এলাকা ভয়াবহ দূষণের শিকার হত কয়েক বছর আগে। এই অবস্থায় ওই ছাই দূষনের প্রতিকার চেয়ে এলাকার ভুক্তভোগী বাসিন্দারা 'কৃষক সংগ্রাম পরিষদ' ও "কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ কমিটি"র পক্ষ থেকে লাগাতার আন্দোলনের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদে অভিযোগ জানায়। এমনকি গ্রীন বেঞ্চেও অভিযোগ দায়ের হয়। যে কারণে পর্ষদ প্রায় ২৫ টি হেয়ারিং করে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষের কয়েক দফায় প্রায় ১ কোটি টাকা জরিমানা করে।

নির্দেশ দেওয়া হয়- ৬ টি ইউনিটেই অতি আধুনিক ছাঁকনি যন্ত্র(ইলেট্রো স্ট্যাটিক প্রেসিপিটেটর অর্থাৎ ই.এস.পি.)বসিয়ে ছাই দুষনের মাত্রা নিয়ন্ত্রনে আনতে হবে।কৃষক সংগ্রাম পরিষদের সম্পাদক তথা কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ কমিটির মুখপাত্র নারায়ণ চন্দ্র নায়ক বলেন,ওই নির্দেশের পর তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ দ্বিতীয় দফার তিনটি ও প্রথম দফার তৃতীয় চিমনির মুখে আধুনিক ই.এস.পি মেশিন বসালেও পুরানো মডেলের তৈরি ১ম দফার প্রথম ও দ্বিতীয় চিমনি আধুনিকীকরণ করতে পারেননি। সে কারণে পর্ষদ ওই দুটি চিমনিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেয়। অন্যদিকে রাজ্যের অন্যান্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে কম উৎপাদন খরচে বিদ্যুৎ পরিমান মত উৎপাদন করার কারণে ডব্লিউ বি পি ডি সি এল কর্তৃপক্ষ এই কেন্দ্রের প্রথম দফার দুটি ইউনিটে কয়েক বছর ধরে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রাখে। সব মিলিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ গত কয়েক মাস আগে এক ও দু নম্বর ইউনিটের বয়লার ভেঙে ফেলার পর,আজ চিমনি দুটি ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন।তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে,আগে থেকেই নোটিশ ইস্যু করে ওই এলাকায় বহিরাগতদের প্রবেশ নিষেধ সহ ক্যান্টিনের খাওয়ার সরবরাহের ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল।