বিশ্বকাপের যোগ্যতার নাইজেরিয়া–কঙ্গো ম্যাচে কোচের জাদুটোনা বিতর্ক!

নিজস্ব সংবাদদাতা: ফুটবল মাঠে তন্ত্র-মন্ত্রের এবং ম্যাচ জেতার জন্য তন্ত্র মন্ত্র এর সাহায্য। শুনে অবাক হলেন তো !  কিছুদিন আগে আমরা এই নিয়ে একটি প্রতিবেদন করেছিলেন। আজকে শোনা গেল আন্তর্জাতিক খেলা এসব হয়ে থাকে। ফুটবল মাঠে কালাজাদু! আফ্রিকান ফুটবলে প্রায়শই এমন অভিযোগ উঠে আসে। এবার বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের লড়াইয়ে এমনই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ আনলেন নাইজেরিয়ার কোচ এরিক চেল্লে। বিশ্বকাপের মূলপর্বে টানা দ্বিতীয়বার পৌঁছাতে ব্যর্থ নাইজেরিয়া। আফ্রিকান প্লে–অফ ফাইনালে ডিআর কঙ্গোর কাছে রুদ্ধশ্বাস টাইব্রেকারে পরাজয়ের পর ক্ষোভে ফেটে পড়লেন নাইজেরিয়ার কোচ এরিক শেল।

১৬ই নভেম্বর রবিবার কঙ্গোর কাছে পেনাল্টি হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয় তাদের। এরপরই নাইজেরিয়া কোচের দাবি, ‘টাই-ব্রেকার চলাকালীন প্রতিপক্ষ দলের এক কোচিং স্টাফ বারবার বেঞ্চের দিকে দৌড়ে আসেন। সেই সঙ্গে জলের বোতল নিয়ে কিছু একটা করতে থাকেন। এটা কালাজাদু ছাড়া আর কী!’ উল্লেখ্য, পেনাল্টি শ্যুট-আউটে দু’টি শট মিস করেন নাইজেরিয়ান ফুটবলাররা। তাতেই আরও জোরালো হয় এই দাবি। হার মেনে নেওয়ার বদলে তিনি রীতিমতো বিস্ফোরক অভিযোগ তুললেন—প্রতিপক্ষ নাকি ম্যাচে ‘জাদুটোনা’ ব্যবহার করেছে! রবিবার মরক্কোর রাবাতে নির্ধারিত সময় এবং অতিরিক্ত সময় শেষে স্কোর ১-১।

ফলে গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানেই ৪-৩ ব্যবধানে জিতে আন্তঃমহাদেশীয় প্লে–অফে জায়গা করে নেয় ডিআর কঙ্গো। কঙ্গোর অধিনায়ক শঁসেল এমবেম্বা প্রবল বৃষ্টি আর গ্যালারি থেকে নিক্ষিপ্ত জলভর্তি বোতলকে উপেক্ষা করে শেষ পেনাল্টিতে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন ইতিহাসের আরেক ধাপ কাছে—১৯৭৪ সালের পর আবারও বিশ্বমঞ্চ দেখা সম্ভবনার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়াল কঙ্গো, যারা তখন জায়ার নামে পরিচিত ছিল।

ম্যাচশেষে সাংবাদিক সম্মেলনে শেলের অভিযোগে তোলপাড় শুরু হয়। তাঁর বক্তব্য, “ওরা প্রতি মুহূর্তে তুকতাক করছিল। বারবার একই জিনিস। তাই আমি নার্ভাস হয়ে পড়েছিলাম!” তিনি ইশারায় দেখান—ডিআর কঙ্গোর এক সদস্য নাকি নিয়মিত হাত নাড়ে কিছু ছিটোচ্ছিলেন। “ওটা জল কি অন্য কিছু… জানি না,” মন্তব্য কোচের। কিন্তু ফুটবল মহলের অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন—এমন অভিযোগ কি আদৌ যুক্তিযুক্ত নাকি শুধুই অজুহাত? ফেভারিট হয়েও ব্যর্থ সুপার ইগলস ডিআর কঙ্গোর থেকে র‍্যাঙ্কিংয়ে ১৯ ধাপ এগিয়ে থাকা নাইজেরিয়া মাঠে ছিল স্পষ্ট ফেভারিট। ১৯৯৪ সাল থেকে নিয়মিত বিশ্বকাপ খেললেও ২০১৮’র পর এ নিয়ে টানা দু’বার বাদ পড়ল সুপার ইগলস।

এতে ফুটবলপাগল দেশটিতে হতাশার ঢেউ। নাইজেরিয়ান ফুটবল ফেডারেশন আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে ক্ষমা চেয়ে লিখেছে—“এটা আমাদের ফুটবলের জন্য গভীর দুঃখের মুহূর্ত। টানা দু’বার বিশ্বকাপ মিস করা মানসিকভাবে খুব কঠিন।” দেশের প্রেসিডেন্ট বোলা টিনুবু দলকে অনুরোধ করেছেন সামনে তাকাতে এবং আসন্ন আফ্রিকা কাপ অব নেশনস (AFCON ২০২৪–২৫) প্রস্তুতিতে মনোযোগী হতে। ঐতিহাসিক জয় কঙ্গোর, আত্মসমালোচনার সময় নাইজেরিয়ার একদিকে ডিআর কঙ্গো দীর্ঘ অপেক্ষার স্বপ্ন ছুঁতে এগিয়ে যাচ্ছে।

অন্যদিকে নাইজেরিয়া ফুটবলে উঠছে প্রশ্নের ঝড়— ফেভারিট হয়েও কেন বারবার ব্যর্থ?কোচের অভিযোগ কি কেবল ‘অজুহাত’, নাকি হার মানতে না পারার প্রতিক্রিয়া? সময়ই দেবে উত্তর। তবে নিশ্চিত, এই পরাজয় ও অভিযোগ–বিতর্ক আফ্রিকান ফুটবলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে থাকবে আরও অনেক দিন।