সবং-এর ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন তুলসী চারার মেলা!

পশ্চিম মেদিনীপুর  অরিন্দম চক্রবর্তী : মকর সংক্রান্তির দিন থেকে শুরু হয়েছে সবং ও পটাশপুর এর মধ্যবর্তী এলাকায় তুলসী চারার মেলা। কেলেঘাই নদীপক্ষে এই মেলা সাত দিন ধরে চলবে । বেশ কয়েক বছর আগেও এই মেলা ১৫দিন ধরে চলতো ।মেলার বয়স আনুমানিক ৫২৮ বছর। কথিত আছে, পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পটাশপুর এর গোকুলপুর গ্রামে বাকসিদ্ধ বৈষ্ণব শ্রী শ্রী গোকুলা নন্দ গোস্বামী বৈষ্ণবাচার্যের সমাধি মন্দির রয়েছে। এলাকাবাসীদের কথায় গোকুলানন্দ সবং এর কলন্দা গ্রামের নামকরা জমিদার পরমানন্দ ভূঁইয়ার ভান্ডারী ছিলেন। বেশিরভাগ সময়েই সাধনভোজনে তিনি ব্যস্ত থাকতেন। গোকুলানন্দ গোস্বামী পৌষ সংক্রান্তিতে রাত বারোটা নাগাদ নদীর মাঝখানে তার যোগ মঞ্চে সাধনা করতে করতে সমাধি প্রাপ্ত হন। দেহ রক্ষার আগে গোকুলানন্দ গোস্বামীর শিষ্য বিপ্র প্রসাদ কে ডেকে বলে যান পৌষ সংক্রান্তিতে তুলসী মঞ্চে তিন মুঠো মাটি দিলে সবার মনস্কামনা পূর্ণ হবে। সেই থেকে এই সংক্রান্তির ভরে পুণ্য স্নান করে গোকুলানন্দ গোস্বামীর তুলসী মঞ্চে কেলেঘাই নদী থেকে তিন মুঠো মাটি দান করেন এবং পুজো দেন দুই মেদিনীপুরের হাজার হাজার মানুষ। পটাশপুর এর গোকুলপুর গ্রামে নদী বক্ষে রয়েছে এই তুলসী মন্দির। এই মন্দির কে কেন্দ্র করেই বসে প্রাচীন এই মেলা। অতীত কাল থেকেই মেলার নামকরণ হয় তুলসী চারার মেলা। মেলায় ছোট বড় মিলিয়ে বেশ কয়েক হাজার স্থায়ী ও অস্থায়ী দোকান রয়েছে। গৃহস্থালির টুকিটাকি থেকে শুরু করে তুলো, শঙ্খ, লোহা, পিতল, কাঁচা, অ্যালুমিনিয়াম এবং বালিশের খোল ,মশারির বিপুল আয়োজন রয়েছে। বয়স্কদের মতে আগে এই তুলসী চারার মেলা এবং ডেবরা ব্লকের কেদার মেলায় গাড়ি নিয়ে বাড়ির প্রয়োজনীয় সমস্ত জিনিস কিনে আনা হতো। বাস রাস্তার ওপর দিহাটি ব্রিজ থেকে তিন কিলোমিটার রাস্তায় মেলায় ঢোকার আগে প্রতিদিন থাকছে হাজার হাজার মানুষের ভিড়। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রয়েছে প্রাইভেট গাড়ি, টোটো, ইঞ্জিন টলি, মোটরসাইকেল ও সাইকেলের ভিড়। মেলায় প্রতিদিন থাকছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও যাত্রাপালা।

গোকুলানন্দ গোস্বামীর সমাধি মন্দির
কেলেঘাই নদী পেরিয়ে ভক্তরা মন্দিরের উদ্দেশ্যে