নিমপুরা আর্য বিদ্যাপীঠের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক দুর্নীতি ধামাচাপা দিতে চাইছে শিক্ষা দপ্তর?
পশ্চিম মেদিনীপুর নিজস্ব সংবাদদাতা : ২০১৮ সালে তৎকালীন জেলাশাসক পি মোহন গান্ধীর কাছে নিমপুরা আর্য বিদ্যাপীঠের পরিচালন ব্যবস্থা নিয়ে অভিযোগ জানান দীপক কুমার দাশগুপ্ত। তার অভিযোগ ছিল স্কুলে ভর্তি সংক্রান্ত অনিয়ম, অডিট রিপোর্ট না হওয়া, মিড ডে মিলে দুর্নীতি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে । অভিযোগ পাওয়ার পরে জেলাশাসক সর্বশিক্ষা মিশন এবং স্কুল শিক্ষা দপ্তরকে তদন্তের নির্দেশ দেন। স্কুল শিক্ষা দপ্তর ২ এআইকে তদন্তের জন্য স্কুলে পাঠায়। তারা প্রধান শিক্ষক চণ্ডীচরণ ত্রিপাঠীর সঙ্গে কথা বলে একটি প্রাথমিক রিপোর্ট তৈরি করেন এবং ডি আই এর কাছে জমা দেন। সেই রিপোর্ট কলকাতায় শিক্ষা কমিশনারের কাছে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ২০১৮ সালের বারই অক্টোবর পাঠিয়ে দেন ডিআই। কিন্তু প্রাথমিক রিপোর্টের ভিত্তিতে প্রধান শিক্ষক চণ্ডীচরণ ত্রিপাঠী, দীপকবাবু তার মানহানি করেছেন এই অভিযোগ জানিয়ে দীপকবাবুর কাছে বিশাল অংকের টাকা দাবি করে উকিলের চিঠি পাঠান। পরে মামলাও করেন। কিন্তু বিচারক প্রধান শিক্ষকের সেই মামলা খারিজ করে দেন। শিক্ষা কমিশনারের কাছ থেকে চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত এসেছে কিনা তা জানতে চেয়ে দীপকবাবু বারংবার স্কুলশিক্ষা দপ্তরে যোগাযোগ করার পরেও কোন উত্তর পাননি। তিনি ২০২১ সালের ১৫ই ডিসেম্বর এই বিষয়ে জেলাশাসকের গ্রিভেন্স সেলে অভিযোগ জানান। গ্রিভ্যান্স সেল ডিআইকে ২০২১ সালের ২০ ডিসেম্বর বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর করে রিপোর্ট জমা দিতে বলেন। কিন্তু ডিআই সেই চিঠির প্রত্যুত্তর দেননি অর্থাৎ তদন্ত করে রিপোর্ট দেননি । শেষমেষ দীপকবাবু ২০২৪ সালের ২৪ জানুয়ারি তথ্য জানার অধিকার আইনে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের বিষয়ে ডিআই এর কাছে জানতে চান। ৩ মে ডিআই তাকে জানান তারা বিকাশ ভবন থেকে কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হাতে পাননি।
জেলাশাসকের পাবলিক গ্রিভ্যান্স সেলের নির্দেশ সত্বেও পশ্চিম মেদিনীপুরের ডিআই নিমপুরা আর্য বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে কেন তদন্ত করে রিপোর্ট পাঠালেন না সেই বিষয়ে জানতে মঙ্গলবার সরাসরি ডি আই য়ের কাছে হাজির হন দীপক কুমার দাশগুপ্ত । ডিআই স্বপন সামন্তের বক্তব্য, দীপকবাবুর স্বাক্ষর না থাকায় তারা তদন্ত শুরু করতে পারেননি। দীপকবাবু ফোনে বা হোয়াটসঅ্যাপে একাধিকবার ডিআই স্বপন সামন্তের সঙ্গে কথা বলেছেন। কিন্তু ডিআই এই সামান্য কথাটুকু তাকে কোনদিনই জানাননি। দ্বিতীয়তঃ দীপকবাবুর করা আরটিআই আবেদনের জবাবে ডিআই গত ৩রা মে যে উত্তর দেন সেই উত্তরেও এই সামান্য কথাটুকু তিনি দীপক বাবুকে জানাতে পারতেন। কিন্তু তা তিনি জানাননি । তৃতীয়ত দীপকবাবু অভিযোগ জানানোর পর সেই অভিযোগের ভিত্তিতে ডিআই স্বপন সামন্ত সুয়োমটো তদন্ত শুরু করতে পারতেন কিন্তু দুর্নীতির বিরুদ্ধে তিনি কোন তদন্ত শুরু করেননি। সংবাদ মাধ্যম ডি আই য়ের কাছে এইসব প্রশ্ন তুলে ধরলে মেজাজ হারিয়ে ডিআই স্বপন সামন্ত সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদের তার ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন। তিনি আলাদা করে সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলবেন বলার পরেও এই ব্যবহার কি আদৌ একজন সরকারি আধিকারিকের শিষ্টাচার বহন করে, ভিডিও করলে সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিকে পুলিশে খবর দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেওয়াও কি সরকারি আধিকারীকের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে, এই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে শিক্ষা মহলে। দীপকবাবু দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন । দীপকবাবুর এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রাক্তন জেলাশাসক পি মোহন গান্ধী। কিন্তু ডি আই স্বপন সামন্ত তার ব্যবহারের মাধ্যমে বোঝালেন নিমপুরা আর্য বিদ্যাপীঠের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক চণ্ডীচরণ ত্রিপাঠী র দুর্নীতি নিয়ে কাটাছেড়া তিনি পছন্দ করছেন না ।