দীর্ঘ ২১ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো জমির মূল্য পাননি,মেলেনি জমির ক্ষতিপূরণ!

নিজস্ব প্রতিবেদন : অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। কিন্তু জমির আনুষ্ঠানিক অধিগ্রহণ হয়নি। আবার জমি চাষির হাতেও নেই। ফলে, এক দিকে যেমন থমকে রয়েছে পাথরা এলাকায় মন্দির উন্নয়নের কাজ, অন্য দিকে ক্ষতিপূরণ না মেলায় সমস্যায় চাষিরাও। জমি হাতে না থাকায় তা থেকে কোনও আয় হচ্ছে না জমিদাতাদের। পশ্চিম মেদিনীপুরের মন্দিরময় পাথরা'র 'প্রাণপুরুষ' ইয়াসিন পাঠান। হিন্দুদের মন্দির রক্ষা করতে গোটা জীবন লড়াই চালিয়েছেন। একুশ বছর ধরে 'বঞ্চিত' কৃষকদের স্বার্থে ভগ্ন হৃদয়ে, অসুস্থ শরীরে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রী গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াত-কে উদ্দেশ্য করে ৪ জুলাই বৃহস্পতিবার চিঠি লেখেন ইয়াসিন। প্রসঙ্গত, গত ৫০ বছর ধরে প্রাচীন হিন্দু স্থাপত্য কীর্তির অন্যতম নিদর্শন স্বরূপ পাথরার ৩৪টি মন্দির নিজের 'বুক' দিয়ে আগলে রেখেছেন মেদিনীপুর সদর ব্লকের পাথরা'র বাসিন্দা, ইয়াসিন পাঠান। ১৯৯৪ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি (ড. শঙ্করদয়াল শর্মা) কর্তৃক 'কবীর' পুরস্কারে ভূষিত 'পাথরার প্রাণপুরুষ' ইয়াসিন পাঠানের উদ্যোগেই ২০০৩ সালের ১৬ জুলাই কেন্দ্রীয় সরকারের আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (ASI) 'মন্দিরময় পাথরা'র ২৫ বিঘা (৯ একর ৯৭৫ ডেসিমেল) জমি  অধিগ্রহণ করে। মন্দির সংস্কারের কাজও এগোয়। তবে, ২১ বছর হতে চললো, এখনও জমির মূল্য পাননি 'জমিদাতা' কৃষকরা! কিডনি ও হার্টের অসুখে আক্রান্ত ইয়াসিন তাই চরম হতাশায় ভুগছেন। কারণ, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রক্ষার স্বার্থে, শুধুমাত্র তাঁর আবেদনে সাড়া দিয়েই জমি দান করেছিলেন পাথরা'র দরিদ্র কৃষকরা।১৯৭২ সাল থেকে পাথরা'র ৪২টি মন্দির বাঁচানোর জন্য লড়াই করা মুসলিম । আজ বয়সের ভারে, রোগের প্রকোপে প্রায় শয্যাশায়ী। আর তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রবল মানসিক চাপ আর হতাশা! ২০২৪ সালের শুরুতে তাই আত্মহত্যার হুমকিও দিয়েছিলেন পাথরা'র পাঠান! আর তারপরই, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের হস্তক্ষেপে এবং ASI (Archaeological Survey of India) নির্দেশে রাজ্য সরকারের তরফে জমির সমীক্ষা ও মূল্য নির্ধারণ (প্রায় ২ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা) করা হয়। জেলা ও ব্লক প্রশাসনের সহায়তায় প্রায় ৩৫ জন জমিদাতাকে চিহ্নিত করা হয় এবং এই সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য রাজ্য সরকারের তরফে ASI-র কাছে পাঠানো হয়। কিন্তু, তারপর থেকে প্রায় ৫ মাস হতে চললো এখনও ASI, কলকাতার কাছে অর্থ-প্রদানের 'অনুমোদন' আসেনি দিল্লির সদর দফতর থেকে।ইয়াসিন জানান, ওঁরা এই টাকা না পেলে আমার তো মরেও শান্তি নেই! একদিকে নিজের অসুস্থ শরীর, অন্যদিকে দরিদ্র কৃষকদের চাপ; সবমিলিয়ে আমি জর্জরিত।” এমনই 'হতাশা' থেকে ২০২৪ সালের শুরুতে নিজেকে 'পরাজিত' আখ্যা দিয়ে, আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছিলেন বলে জানান পাথরা'র পাঠান! বৃহস্পতিবার তিনি এও বলেন, "আমার শারীরিক অবস্থা ভালো নেই। কিডনির রক্ত চলাচলের শিরাতে ৮২ শতাংশ ব্লক। মাইক্রো সার্জারি করতে লক্ষাধিক টাকা লাগবে। এত টাকাও নেই যে অস্ত্রোপচার করাবো। মনে হচ্ছে মৃত্যু দুয়ারে! কিন্তু, আমি চলে যাওয়ার আগে ওঁরা যদি টাকা না পান, মরেও শান্তি পাবোনা। তাই, শেষবারের জন্য এই চিঠি লিখলাম।

কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রী গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াত-কে উদ্দেশ্য করে ৪ জুলাই চিঠি