"পতিতাকাহিনী-৩" --শুভঙ্কর সাউ
সেদিন রাতে নিশা ফিরে আসতে সুন্দরী দি..মানে ওই পল্লীরসবার ওপরে যিনি আছেন তিনি নিশাকে আটকে জানতে চাইলেন--এত রাত অবধি তুই ছেলেটার সাথে কোথায় ছিলিস..সময়বুঝিস না...তিন তিন জন ক্ল্যায়েন্ট এসে ফিরে গেছে।আরেঅন্যরা ক্ল্যায়ন্ট পায়না রে..আর তুই...সুন্দরী বলে বেশি উড়িস না হাওয়া।
রূপ বেশিদিন টেকেনা।সুন্দরী দির মুখের ওপর কেউ কোনোদিন কোনো কথা বলেনি।নিশা সেদিন নিজের ঠোঁটকে সামলাতে পারলোনা।বলেবসলো--আমার জন্য ও তোমায় পেমেন্টও তো ভালো মত করেছে।-কী বললি তুই..বলে নিশার গালে টেনে এক চড়।
নিশার ফর্সা গাল মিনিটেলাল হয়ে গেলো।তার হাত থেকে রূপমের দেওয়া শাড়িটামাটিতে পড়ে গেলো।একটা মেয়ে টপ করে মাটি থেকে শাড়িটা তুলে নিয়ে --কী সুন্দর শাড়ি..!নিশা তার হাত থেকে শাড়িটা ছিনিয়ে নিতে চাইলে পর সুন্দরী দি বললো--এই তুই এত দামের শাড়ি কোথায় পেয়েছিস..?-রূপম আমায় দিয়েছে..-ও বাবা,কী মিষ্টি করে আবার বলা হচ্ছে রূপম...দে শাড়িটাবলে নিশার থেকে রূপমের দেওয়া শাড়িটা সুন্দরী দি নিয়েনিলো।নিশা অনেক করে কাকুতি মিনতি করলো শাড়িটাফেরত পেতে কিন্তু তাও সুন্দরী দি শাড়িটা তাকে দিলো না।-যা..আর কাল থেকে তুই ওই ছেলেটার সাথে বেরোবি না।
পিরিতি জমেছে দেখছি খুব।সেদিন রাতে নিশা নিজের ঘর বন্ধ করে শুধু কাঁদলো ওইশাড়িটার জন্য।কেন কাঁদছে সে ওই একটা শাড়ির জন্য!তা কী সেও জানে..?নাকি তার মনে সত্যি রূপমের জন্যএকটা জায়গা তৈরি হয়েছে?পরদিন দুপুরের আগে রূপম পতীতা পল্লীতে আসতে তাকেমুখের ওপর বলে দেওয়া হলো নিশার সাথে তার দেখা হবেনা।সে টাকা দিতে চাইলেও তাকে বের করে দেওয়া হলো।নিশা জানতেই পারলো না রূপম এসেছিলো।সে অপেক্ষায়ছিলো রূপম আসবে।কিন্তু কখন আসবে!নাকি সেও অন্যপুরুষদের মত..কথা দিয়ে কথা রাখে না।আচমকা নিশাররূমে রিমা এসে বললো--দিদি ডাকছে...ক্লায়ন্ট আছে...ক্লায়ন্টের কথা শুনে তার যেতে ইচ্ছে করলো না।কেন জানিনা তার এখন অন্য পুরুষমানুষ এর স্পর্শ ভালো লাগছেনা।-তুমি বলো,আমার শরীর ভালো নেই..আমি পারবোনা..রিমা এবার নিশার একেবারে সামনে এসে বললো--রূপম এসেছিলো তোকে নিতে ..তাকে দিদি বের করে দিয়েছে।রূপম তাই একটা ছেলেকে ক্লায়ন্ট সাজিয়ে এখানেপাঠিয়েছে তোকে নিয়ে যেতে।রিমার মুখে কথাগুলো শুনে নিশার বুক কেঁপে উঠলো।যে রিমা কিনা তার রূপে জ্বলে।তাকে সহ্য করতে পারে না।সেই রিমা তাকে সাহায্য করছে।বিশ্বাস করবে কীকরে তাকেসে..?-বিশ্বাস হচ্ছে না তো আমায়...জানি হবেনা।আর তুই এওভাবছিস রূপম আমায় কীভাবে চিনলো তাই না?আসলেরূপম প্রথম যেদিন এখানে এসেছিলো ও তোর কাছেআসার আগে আমার সাথে আলাপ হয়েছিলো।
আমি ওরসাথে...কিন্তু রূপম প্রথম দেখায় আমায় দিদি বলে ডেকেছিলো।তাই ভাইকে এটুকু সাহায্য করতে পারলে আমারভেতরের পাপ হয়তো কিছুটা ক্ষয় হবে।নিশা রিমার কথাগুলো শুনে তাকে বুকে টেনে নিলো।তারপর দুজনের চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরে পড়লো।রিমা অশ্রুস্নাত সুরে বললো--আমরা তো এই পল্লীতেই পচে মরবো।কিন্ত বিশ্বাস করকেউ একজন যদি এখানের এই নরকের থেকে ভালো একটা জীবন পায় তো সত্যি আমার ভীষন আনন্দ হত।আজ তুই একটা নতুন জীবন পেতে চলেছিস।আমি তোর চেয়েও বেশি খুশি।আর ভাই তোকে ভালোবাসে আমি জানি।যা আর দেরীকরিস না।আর এই যে তোর শাড়িটা।রিমার হাতে যে রূপমের দেওয়া সেই শাড়িটা ছিলো সে এতক্ষনে খেয়াল করেনি।রিমা সেটা তার দিকে বাড়িয়ে দিতেসে--এটা...কীভাবে?
দিদির ঘরে ছিলো।কাল যখন তোকে এই শাড়িটার জন্য কাঁদতে দেখালাম তখন বুঝলাম তুইও রূপমকে ভালো বেসে ফেলেছিস।জীবনে ভালোবাসার মর্ম তো কী কখনও বুঝলাম না।তাই তোর ভালোবাসার মানুষটার দেওয়া এই উপহারটা তোর কাছে ফিরিয়ে দিতে পেরে...যাই হোক এ সব এখন ছাড়...রেডি হয়ে নে...ছেলেটা অপেক্ষা করছে। কেউ কিচ্ছু সন্দেহ করতে পারেনি।নিশা সেই শাড়িটা একটা ব্যাগে নিয়ে পতীতা পল্লীর সেই চেনা ঘরটা ছেড়ে যাওয়ার আগে রিমাকে প্রণাম করলো।রিমা কান্না ভেজা চোখে একটু হেসে বললো--আমাদের পল্লীর সব থেকে অপরূপ মেয়েটা আজ এ পল্লীছেড়ে চলে যাচ্ছে।এখন আমাদেরও অন্য ক্লায়েন্ট পছন্দকরবে বল..?
তোমার মনটা ভীষন সুন্দর রিমা দি..ভালো থেকো গো...আর পারলে যদি কোনো দিন এখান থেকে বেরিয়ে যেতেপারো তো যেও...নিশা চলে গেলো পতীতা পল্লীর চেনা পরিবেশটা ছেড়ে সেএক নতুন জীবনের একবুক আশায়...