রাজ্যের ব্যবসায়ীদের সম্মেলনের প্রাক্কালে মুখ্যমন্ত্রীর নিকট ফুলচাষী ও ফুলব্যবসায়ীদের ৮ দফা দাবী সম্বলিত স্মারকলিপি পেশ!
নিজস্ব সংবাদদাতা : রাজ্যের ব্যবসায়ীদের সম্মেলনের প্রাক্কালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিকট ফুলচাষী ও ফুলব্যবসায়ীদের ৮ দফা দাবী সম্বলিত স্মারকলিপি পেশ করল সারা বাংলা ফুলচাষী ও ফুলব্যবসায়ী সমিতি। সমিতির সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ চন্দ্র নায়ক বলেন,দেশের ফুলচাষের মানচিত্রে তামিলনাড়ু,কর্ণাটকের পরই পশ্চিমবঙ্গের স্থান। রাজ্যের পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর,নদীয়া,উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা,দার্জিলিং সহ বেশ কয়েকটি জেলার কয়েক লক্ষাধিক পরিবার ফুলচাষকে নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করে। অথচ ওই ফুলচাষীরা বেশিরভাগই এখনো মান্ধাতা আমলের পদ্ধতিতে মূলতঃ সার ও কীটনাশক ঔষধ কোম্পানিগুলির এজেন্ট বা দোকানদারদের পরামর্শেই ঐ চাষ করে থাকে। বর্তমান সরকারের আমলে ফুলচাষ সংশ্লিষ্ট জেলাগুলিতে হর্টিকালচার দপ্তরের জেলা অফিস গড়ে তোলা হলেও ব্লকগুলিতে নেই,ওই অফিসের শাখা অফিস বা হর্টিকালচারিষ্টের উপস্থিতি। ফুল আজও কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বারা "কৃষিপণ্য" হিসাবে স্বীকৃত নয় বলে,বন্যা সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে চাষের ব্যাপক ক্ষতি হলেও ফুলচাষীরা পায় না কোন ক্ষতিপূরণ বা বিমার সুযোগ। এছাড়াও চাহিদা অনুসারে উৎপাদন যখন বেশি থাকে,বেশিরভাগ চাষী ফুল ফেলে দিতে বাধ্য হয়। এ রাজ্যের ফুল ভারতবর্ষের বিভিন্ন রাজ্যে সুষ্ঠুভাবে পাঠানোর জন্য নেই রেল ও বিমানে 'কোটা' পদ্ধতি।এশিয়ার বৃহত্তম বলে খ্যাত কোলকাতার মল্লিকঘাট ফুলবাজারটি একটি ছোট্ট জায়গায় ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশেই ভোর তিনটে থেকে রাত্রি দশটা পর্যন্ত বসছে। অন্যদিকে রাজ্যের ফুলচাষ সংশ্লিষ্ট জেলাগুলির ফুলবাজারেরও বেশিরভাগেরই প্রায় একই অবস্থা।
নারায়নবাবু জানান,ফুলচাষী ও ফুলব্যবসায়ীদের উপরোক্ত সমস্যা নিরসনে আজকের স্মারকলিপি মারফত আমরা কয়েকটি প্রস্তাব তুলে ধরেছি। সাথে সাথে এও আবেদন করছি,যত শীঘ্র সম্ভব আমাদের এই প্রস্তাবগুলি নিয়ে কথা বলার জন্য খানিক সময় দিয়ে আলোচনার ব্যবস্থা করতে।
প্রস্তাবগুলি হোল-
১) ফুলকে "অর্থকরী কৃষিপণ্য" হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি লেখার পাশাপাশি চাপ সৃষ্টি,যাতে বন্যা সহ সমস্ত রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফুলচাষীরা উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ বা ফসলবিমার সুযোগ পেতে পারে।
২) রাজ্যে ফুলচাষ সংশ্লিষ্ট অন্তত একটি স্থানে সমস্ত রকম সুবিধাযুক্ত ফুলের গবেষণাগার বা 'হাব' নির্মাণ।
৩) রাজ্যের ফুলচাষ সংশ্লিষ্ট সমস্ত ব্লকগুলিতে হর্টিকালচারিষ্টের উপস্থিতি নিশ্চিত।
৪) দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ফুল পাঠানোর জন্য রেল ও বিমানে "কোটা" পদ্ধতি চালু করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি লেখার পাশাপাশি চাপ সৃষ্টি।
৫) নষ্ট হয়ে যাওয়া ফুল থেকে সুগন্ধি,ভেষজ রঙ সহ সমস্ত রকম উপজাত সামগ্রী তৈরীর বন্দোবস্ত।
৬) মল্লিকঘাট ফুলবাজারটিতে ফুল সংরক্ষণাগারের ব্যবস্থা সহ অত্যাধুনিক বিশ্বমানের বাজার হিসাবে গড়ে তোলা। এবং বাজার সংলগ্ন রেল লাইনের উপর পুনরায় ব্রীজ নির্মাণ।
৭) হাওড়া জেলার বাগনানে সরকারী উদ্যোগে নির্মিত ফুলবাজারটি অবিলম্বে চালু। পূর্ব মেদিনীপুরের দেউলিয়া বাজার সংলগ্ন পানশিলায় সরকারি উদ্যোগে নির্মিত ফুলবাজারটি অতি সত্বর চালু।
৮) পূর্ব মেদিনীপুরের জেলার কোলাঘাট স্টেশন সংলগ্ন দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়ের জায়গায় বসা বাজারটিকেও আধুনিক মানের ফুলবাজার হিসেবে গড়ে তুলতে রেল দপ্তরকে চিঠি লেখার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় চাপ সৃষ্টি প্রভৃতি।