বিখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ সঙ্গীতশিল্পী সিরাজ আলী খানের বাংলাদেশের ভয়ঙ্কর স্মৃতি আতঙ্ক হয়ে মনে গেঁথে গিয়েছে!

নিজস্ব সংবাদদাতা : বাংলাদেশের মাটিতেই জন্মেছেন শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের পুরোধা ব্যক্তিত্ব ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ, আয়াত আলী খাঁ, পন্ডিত উদয় শংকর, পন্ডিত রবি শংকর এবং ওস্তাদ আলী আকবর খাঁর মতো গুণী শিল্পীরা। ওস্তাদ আলাউদ্দিন খানের প্রপৌত্র, প্রখ্যাত ধ্রুপদী সংগীতশিল্পী সিরাজ আলী খান ঘোষণা করেছেন যে, শিল্পী, সংগীত এবং সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে “সম্মান ও সুরক্ষা” দেওয়া না হলে তিনি বাংলাদেশে ফিরবেন না। সরোদ বাদক সিরাজ আলি খান। কলকাতায় থাকেন তিনি, তবে বাংলাদেশের মাটিতেই জন্মেছেন।

তিনি উস্তাদ ধ্যানেশ খানের ছেলে, উস্তাদ আলি আকবর খানের পৌত্র এবং বাবা আলাউদ্দিন খানের প্রপৌত্র। ১৯ ডিসেম্বর শো ছিল ছায়ানটে। তার আগেই ভাঙচুর হয় ছায়ানটে। বাদ্যযন্ত্র থেকে শুরু করে সবকিছু ভেঙে, আগুন ধরিয়ে দেয় মৌলবাদীরা।গত ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় পৌঁছন সিরাজ। বনানীতে ১৭ ডিসেম্বর একটি জ্যাজ় কনসার্টে পারফর্ম করেন। ১৯ তারিখ সকালেই খবর পান যে ছায়ানটে হামলা হয়েছে। সিরাজ বলেন, “আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে বিল্ডিংয়ে আমার পারফর্ম করার কথা, তা সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। ছবিগুলো ভীষণ উদ্বেগজনক।”ঢাকা ছেড়ে যখন তিনি বেরিয়ে আসছিলেন, তখন একটি চেকপয়েন্টে তাঁকে আটকানো হয়। প্রশ্ন করা হয় যে কেন তাঁর কাছে বিদেশি মুদ্রা রয়েছে। ভয়ে সিরাজ নিজের ভারতীয় পরিচয় বলেননি। তিনি ব্রাহ্মণবেড়িয়ার টানেই কথা বলেন। গাড়ির চালকের কাছে তিনি নিজের ভারতীয় পাসপোর্ট ও মোবাইল ফোন লুকিয়ে রাখেন। সিরাজ বলেন, “আমি কখনও ভাবতে পারিনি যে আমি কে, সেই পরিচয় লুকাতে হবে।”প্রাণ বাঁচিয়ে কোনো মতে শনিবার কলকাতায় ফেরেন সিরাজ। তাঁর মা এখনও বাংলাদেশে। সঙ্গে থাকা তবলা বাদকরা এখনও ঢাকায় আটকে রয়েছেন। চেষ্টা করছেন এই সপ্তাহে দেশে ফেরার।

তবে বাংলাদেশের ওই ভয়ঙ্কর স্মৃতি আতঙ্ক হয়ে মনে গেঁথে গিয়েছে। ২১শে ডিসেম্বর রবিবার ফেইসবুক পোস্টে তিনি বলেছেন ভারী হৃদয়ে আমাকে স্পষ্ট করে বলতে হচ্ছে—শিল্পী, সংগীত এবং সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিরাপদ ও সম্মানিত না হওয়া পর্যন্ত আমি বাংলাদেশে আর ফিরব না।এই সিদ্ধান্ত রাগ থেকে নয়, বরং দায়িত্ববোধ থেকে—আমার পরিবারের উত্তরাধিকার, আমার শিল্প এবং আমার নিরাপত্তার প্রতি। আমি এখনও বিশ্বাস করি, সংগীতের শক্তি আছে আরোগ্য ও ঐক্য গড়ে তোলার। আমি শুধু আশা করি, একদিন শিল্প ও সংস্কৃতির প্রতি সম্মান এতটাই ফিরে আসবে যে সেই সেতু আবারও গড়ে তোলা যাবে।”