বৃদ্ধাশ্রমে জন্মদিন উদযাপন!

পশ্চিম মেদিনীপুর সেখ ওয়ারেশ আলী : বৃদ্ধাশ্রম নামটি শুনলেই চোখের সামনে ধরা দেয় ক্রন্দনরত মায়ের মুখ, ম্রীয়মান মা,বাবার দুর্বল চাহনি। এ যেন জীবনের পরম অভিশাপ। সারাজীবন নিজের ছেলে মেয়েদের বড় করে তুলে শেষ জীবনে সন্তানকে অবলম্বন করে বাঁচার চেষ্টা যেন অন্যায়। আজকের যুগে যেখানে জন্মদিন মানেই সাজসজ্জা, আলো, কেক আর রেস্তোরাঁর জমজমাট পার্টি—সেখানে এক সম্পূর্ণ ভিন্ন, মানবিক উদাহরণ গড়লেন মেদিনীপুর শহরের কর্নারগোলা এলাকার সমাজসেবী অনয় মাইতির একমাত্র পুত্র, শিবম মাইতি। নিজের ২৩ তম জন্মদিন পালন করলেন এক অনন্য রূপে,বৃদ্ধাশ্রমে, অসহায় মানুষদের সঙ্গে। সকালের প্রথম প্রহরেই বাবা অনয় মাইতি, মা স্মৃতিকণা মাইতি এবং বোন সূচি মাইতিকে নিয়ে শিবম পৌঁছে যান শহরের বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন মেদিনীপুর পৌরসভার আরবান হোমলেস সেন্টার-এ, যেখানে আশ্রয় পেয়েছেন সেই সব প্রবীণ নাগরিক, যাদের একসময় ছিল পরিবার, ঘর, সন্তান— কিন্তু আজ তারা একা, ভুলে যাওয়া স্মৃতির ভেতরেই কাটাচ্ছেন জীবনের শেষ প্রান্তের দিনগুলি।

এই বৃদ্ধাশ্রম নিয়ে অসাধারণ এক লেখায় জনপ্রিয় গায়ক নচিকেতা যেন পুরো বিষয়টিকে চোখের সামনে তুলে ধরেছেন এক অদ্ভুত সৃষ্টিতে।

ছেলে আমার মস্ত মানুষ,মস্ত অফিসার
মস্ত ফ্ল্যাটে যায় না দেখা এপার ওপার ।
নানান রকম জিনিস, আর আসবাব দামী দামী
সবচেয়ে কম দামী ছিলাম একমাত্র আমি।
ছেলের আমার,আমার প্রতি অগাধ সম্ভ্রম
আমার ঠিকানা তাই বৃদ্ধাশ্রম!

সেই আশ্রয়েই আজ শিবম ফিরিয়ে দিলেন ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার পরশ। মোমবাতি জ্বেলে কেক কাটা, প্রবীণদের মুখে হাসি, কারও চোখে আনন্দের জল— মুহূর্তেই আবেগে ভরে উঠল গোটা আশ্রম। শিবম নিজের হাতে প্রত্যেক প্রবীণের হাতে নতুন বস্ত্র তুলে দেন। এরপর পাত পেতে সবার সঙ্গে একসঙ্গে মধ্যাহ্ন ভোজন, আর বিজয়ার প্রণাম পর্বে মিলে মিশে একত্রিত হলো ভালোবাসার অমূল্য বন্ধন।অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মেদিনীপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান সৌমেন খান, সি.আই.সি সৌরভ বসু, বিশিষ্ট সমাজসেবী দুলাল দত্ত, সুরজিৎ সরকার, ইমদাদুল খান প্রমুখ। সকলেই মুখে একটি কথা শিবমের এই উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন“এই ধরনের উদ্যোগই সমাজে সত্যিকারের অনুপ্রেরণা জোগায়।” বর্তমানে এম.বি.এ পড়ছেন শিবম, পাশাপাশি বাবার ব্যবসায়ও সহযোগিতা করছেন তিনি। নিজের জীবনের বিশেষ দিনটিকে অন্যের মুখে হাসি ফোটানোর মাধ্যমে স্মরণীয় করে নিজের জন্মদিনটি পালন করলেন শিবম মাইতি।