সম্পাদক সমীপেষু: সততার অভাব

সততা মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটায়। সততা মানবজীবনে সফলতা ও আনন্দ বয়ে আনে। সততাই বড় সম্পদ। সত্য মানুষকে মুক্তি দেয়, মিথ্যা মানুষকে ধ্বংস করে। সৎলোক কখনো মিথ্যা কথা বলে না, কারও সম্পদ লুট করে না, তার দ্বারা ঘুষ গ্রহণ ও মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা সম্ভব হয় না। প্রত্যেক সমাজেই সততার জয়জয়কার। সততার সামাজিক মূল্য অপরিসীম, এর মাধ্যমে সমাজে সুখ ও শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। সততার অভাবে সমাজ হয় দুর্নীতিগ্রস্ত, বিশ্বের দরবারে দেশ ও জাতি হয় কলঙ্কিত। বর্তমান বিশ্বে যাবতীয় অশান্তির মূল কারণ হচ্ছে সৎলোকের অভাব। সৎলোকের জীবনবোধ অসৎ লোকের জীবনবোধের চেয়ে বিপরীতধর্মী। সৎলোকের অভাবে জাতিতে জাতিতে সংঘাত-সংঘর্ষ লেগে আছে। ফলে বিশ্বের নানা স্থানে অশান্তির আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে।

সৎলোক বৈষয়িকভাবে দরিদ্র থাকতে পারে। এমন জীবনের আনন্দ কোনো অসৎলোক অনুধাবন করবে না। আমাদের সমাজের অসৎ লোকদের ধারণা হলো, সমাজে সব লোকই অসৎ। আবার অসৎলোক নিজের অসততার পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে বলে বেড়ায়, সমাজে সব লোকই অসৎ। আর সে নিজে যা করছে তাই স্বাভাবিক। কিছু অসৎলোক এমনও বলে যে ওসব পদে বসে সৎ থাকা যায় না। সৎ থাকতে গেলে চাকরি হারাতে হবে। ব্যক্তি পর্যায়ের কিছু লোক বলে ট্যাক্স অফিসে গিয়ে সৎ হতে গেলে ট্যাক্সম্যানরা আপনার কাছ থেকে শুধু বেশি ট্যাক্সই চাইবে। অসৎ ও দুর্নীতিবাজ লোকদের আরেক কৌশল হলো কী করব, ওপরের সবাইকে খুশি করতে হয়! অসৎলোক কাউকে নিয়ম ভেঙে কিছু সুবিধা দিতে গিয়ে বলে, ওপরের নির্দেশ আছে। অসৎলোকেরা আবার সংঘবদ্ধ থাকে। তাদের পাশ কাটিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত কেউ দিতে গেলে তারা তা ঠেকিয়ে দেবে।

দুর্নীতিবাজদের নানাবিধ কৌশল রয়েছে, এর অন্যতম হচ্ছে সৎ লোককেও দুর্নীতিবাজ বলা। তাদের মন্তব্য, লোকটা সৎ কারণ সে দুর্নীতি করার সুযোগ পায়নি। সুযোগ পেলে দেখতেন, সে হতো দুর্নীতির গডফাদার! দুর্নীতিবাজরা সৎলোকদের এসব বলে একটু হলেও গায়ে কাঁদা মেখে দিতে চায়। তবে যারা প্রকৃত অর্থেই সৎ, তারা এসব নিন্দাবাদের পরোয়া করে না।

তারা সৎ থাকে নিজের বিশ্বাসকে মূল্য দেওয়ার জন্য। তাদের বিশ্বাস, সততা তাদের অন্যদের থেকে শুধু আলাদাই করবে না, প্রকৃতপক্ষে তারাই সফল। তাদের সফলতার মাপকাঠি সততা আর পরিশ্রম। তাদের আরেক গুণ হলো তারা বিনয়ী। দুনিয়ার মিথ্যা লোভ তাদের তাড়িয়ে ফিরতে পারে না। তারা এক অনন্য মানুষ। সৎলোকের সুনাম ও সুখ্যাতি চিরদিন অব্যয় অক্ষয় থাকে।