ঢাকায় বিএনপির সমাবেশে গণজোয়ার, সংখ্যালঘু সহ সবার নিরাপত্তায় দৃঢ় প্রত্যয় উচ্চারিত হল মানুষের কণ্ঠে!

ঢাকা, জাকির হোসেন : বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার নয়াপল্টনে ৭ আগস্ট বুধবার বিএনপির ডাকা সমাবেশে বিপুল লোক সমাগম হয়েছে। প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনে থেকে শুরু করে নয়াপল্টন–ফকিরেরপুল হয়ে আরামবাগ পর্যন্ত লোকে লোকারণ্য হয় এইদিন৷

বিকেল সাড়ে চারটার কিছু আগে সমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ এই রাজনৈতিক দলের চেয়ারপারসন এবং বাংলাদেশের সাবেক ও প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী 'লৌহমানবী' খালেদা জিয়া বলেছেন, "ছাত্র-তরুণরাই আমাদের ভবিষ্যৎ। তরুণদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। তরুণরা যে স্বপ্ন নিয়ে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছে, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে মেধা, যোগ্যতা, জ্ঞানভিত্তিক এবং গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে৷ আমরা ধ্বংস চাই না, শান্তি চাই। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা ফ্যাসিবাদী ও অবৈধ সরকারের কাছ থেকে মুক্তি পেয়েছি।" খালেদা জিয়া ২০১৮ সালে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে সর্বশেষ রাজনৈতিক সমাবেশে বক্তব্য রেখেছিলেন। এরপর থেকে তিনি আর কোনো সমাবেশে প্রকাশ্যে নেতাকর্মীদের সামনে আসতে পারেননি। এবার বহু বছর বাদে খালেদা জিয়া বক্তব্য দেবেন, এমন কথা শোনার পর জনসমাবেশে অংশ নেওয়া লক্ষাধিক মানুষ আনন্দ-উল্লাসে ফেটে পড়ে৷ খালেদা জিয়া বলেন, "আমি আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই আমাদের বীর সন্তানদের, যারা মরণপণ সংগ্রাম করে এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। শত শত শহীদকে জানাই শ্রদ্ধা।" বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক ও সাবেক রাষ্ট্রপতি মরহুম জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের সহধর্মিণী খালেদা জিয়া আরো বলেন, "এই বিজয় আমাদের নতুন সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে। দীর্ঘদিনের নজিরবিহীন দুর্নীতি এবং গণতন্ত্রের ধ্বংসস্তূপ থেকে আমাদের নির্মাণ করতে হবে এক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।"

ভিডিও বার্তায় ভাষণ দেন 'লৌহমানবী' হিসেবে খ্যাত বাংলাদেশের সাবেক ও প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া৷ ৭ আগস্ট দুপুরে

এর আগে সমাবেশে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান৷ শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর দেশে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সবাইকে বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ না করে মানবিক আচরণ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। তারেক রহমান বলেন, "হিংসা, বিদ্বেষ ও প্রতিহিংসা নয়, সবাই দায়িত্বশীলতা ও মানবাধিকারের দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন।" বিচারের ভার নিজ হাতে তুলে না নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেছেন, "কেউ দয়া করে নিজের হাতে আইন তুলে নেবেন না। বিএনপির নাম ব্যবহার করে অপরাধ করলে বা করতে চাইলে তাকে ধরে আইনের হাতে সোপর্দ করুন।" ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাতে দেশবাসীকে ঢাল হিসেবে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন, "আমাদের মনে রাখতে হবে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে যে যে ধর্মে বিশ্বাস করুন, তাদের নিরাপত্তা দিতে হবে। আমাদের বিশ্বের সঙ্গে তাল দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। জ্ঞানভিত্তিক রাষ্ট্র ও সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে মেধার সর্বোচ্চ মূল্যায়ন করতে হবে।" এসময় উপস্থিত মানুষ 'ঠিক ঠিক' উচ্চারণ করে তাতে সংকল্পবদ্ধ হন৷ সমাবেশ থেকে "ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষ সত্য, মআনুষ হিসেবেই আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে থাকবো" -এই শপথ করা হয়৷ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করা ছাত্র-জনতাকে ধন্যবাদ জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, "ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণহত্যাকারী শেখ হাসিনার পদত্যাগের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ পরাজিত হতে পারে না। কোনো অপশক্তি বাংলাদেশকে দমিয়ে রাখতে পারবে না।" তিনি আরো বলেন, "পুলিশ জনগণের শত্রু নয়। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকতে পুলিশকে ব্যবহার করেছেন। আমরা জানি ভেতরে একটি চক্র ছাড়া অধিকাংশ সদস্য চাকরিবিধি মেনে দায়িত্ব পালন করছে। কিন্তু শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার পর পুলিশের মনোবল ভাঙতে একটা চক্র কাজ করছে।" অন্তবর্তীকালীন সরকারের মাধ্যমে দেশে সবার অংশগ্রহণে গণতান্ত্রিক ধারায় উৎসবমুখর পরিবেশে দ্রুত বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানেরও তাগিদ দেন তারেক রহমান৷

লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান৷

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন৷ এদিকে বিএনপির পূর্বঘোষিত সমাবেশ উপলক্ষে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এইদিন সকাল থেকেই ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। সকাল থেকেই ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে দলে দলে মিছিল নিয়ে আসতে থাকেন দলীয় নেতাকর্মীরা ও সাধারণ মানুষ। এ সময় তারা সদ্য বিদায় নেওয়া স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে মানুষের উপস্থিতি। লক্ষাধিক মানুষ এসে জড়ো হয় দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে। পরে জনসমুদ্র হয়ে ওঠে নয়াপল্টনের সমাবেশ৷