আবার শিরোনামে সন্দেশখালিকাণ্ড, বিজেপি নেতার’ ভাইরাল ভিডিয়ো ঘিরে নতুন মোড় !
নিজস্ব সংবাদদাতা : আবার শিরোনামে সন্দেশখালি। কিছুদিন ধরে যা নিয়ে জোরচর্চা শুরু হয়েছিল রাজ্য জুড়ে। এমনকি যার প্রভাব নেমেছিল শাসক ও বিরোধীর রাজনীতির ময়দানে এবার সেই ধর্ষণের অভিযোগ সম্পূর্ণ সাজানো ? গোপন ক্যামেরায় তোলা ভিডিয়োতে স্থানীয় এক বিজেপি নেতাকে এমন কথাই বলতে শোনা যাচ্ছে। প্রকাশিত ভিডিয়োয় শোনা যাচ্ছে, এক ব্যক্তি স্বীকার করে নিচ্ছেন, ধর্ষণ-সহ বিভিন্ন অভিযোগ সাজানো হয়েছে পরিকল্পনা মাফিক। ভিডিয়োতে তাঁকে সন্দেশখালি ২ ব্লকের বিজেপির ‘মণ্ডল সভাপতি’ গঙ্গাধর কয়াল বলে পরিচিত করানো হয়েছে। সন্দেশখালিতে গোপন ক্যামেরা অভিযানের মাধ্যমে এই ভিডিয়ো রেকর্ড করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। স্থানীয় সূত্রে খবর, ভিডিয়োতে যাঁকে দেখা গিয়েছে, সেই গঙ্গাধরের বাড়ি সন্দেশখালির সিংপাড়া এলাকায়। স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম গঙ্গাধরের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা করেছিল। কিন্তু তাঁর ফোন বন্ধ রয়েছে। যোগাযোগ করা হয়েছিল বসিরহাটের বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্রের সঙ্গেও তাঁর পিএ ফোন ধরে জানান, তিনি নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত। ভাইরাল ভিডিয়োর কথা বললে ‘কিছু বলতে পারব না’ বলে ফোন কেটে দেওয়া হয়। আর ফোন ধরেননি।
ভাইরাল ভিডিয়োটিতে দেখা যাচ্ছে, গঙ্গাধর কয়াল একটি ঘরে চেয়ারে বসে আছেন। কেউ বা কারা তাঁকে সন্দেশখালির ঘটনাটি নিয়ে প্রশ্ন করে চলেছেন। তিনি আড্ডার ছলে প্রশ্নকর্তার সঙ্গে কথা বলছেন। বার বার উঠে আসছে শুভেন্দুর নাম। গঙ্গাধর বলছেন, ‘‘এই আন্দোলন এত দিন টিকে আছে কেন? তিনটে ছেলে এ দিক-ও দিক যাচ্ছে, গোটা বিষয়টি পরিচালনা করছে। শুভেন্দুর আমাদের উপরে আস্থা আছে। শুভেন্দু এক বার ঘুরে গিয়েছে, তাতেই আন্দোলন এখনও দাঁড়িয়ে রয়েছে।’’ ভিডিয়োতে তাঁকে স্বীকার করতে শোনা গিয়েছে, শুভেন্দু টাকা এবং মোবাইল ফোন দিয়ে গিয়েছেন তাঁদের। কারণ, এই ধরনের কাজ খালি হাতে হয় না। ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, প্রশ্নকর্তা গঙ্গাধরকে বলছেন, ‘‘দাদা, তোমরা কী লেভেলের কাজ করেছ, বুঝতে পারছ? ধর্ষণ হয় নাই, তাকে ধর্ষণ বলে চালিয়েছ! তোমার বাড়ির বৌকে দিয়ে এই কাজ করাতে পারতে? আমরা তো পারব না।’’ এই প্রশ্ন শুনে সম্মতিসূচক হাসি হেসেছেন গঙ্গাধর। ‘‘কী ভাবে ওদের ‘ব্রেনওয়াশ’ করালেন?’’ উত্তরে গঙ্গাধর বলেন, ‘‘শুভেন্দুদার নির্দেশেই আমরা এই কাজ করেছি। উনি আমাদের সাহায্য করেছেন। শুভেন্দুদা বলেছেন, এটা না করলে, তাবড় তাবড় লোককে গ্রেফতার করানো যাবে না। আমরাও ওখানে দাঁড়াতে পারব না।’’ ভিডিয়োতে গঙ্গাধরকে শুভঙ্কর গিরি নামের এক জনের নাম নিতে শোনা যায়। বলেন, ‘‘শুভঙ্কর ছেলেটা ভাল ছিল। কিন্তু টাকার গোলমালের জন্য ও পরে হঠে গেল।’’ শুভেন্দুর পিএ পীযূষও সন্দেশখালিতে গিয়েছিলেন বলে দাবি করেন গঙ্গাধর। জানান, শুভঙ্করই গ্রামবাসীদের ‘ব্রেনওয়াশ’ করেছিলেন। অসত্য ধর্ষণের অভিযোগ লেখাতে কী ভাবে রাজি হলেন মহিলারা? গঙ্গাধর বলেন, ‘‘আমরা যা বলেছি, ওরা শুনেছে। কেউ না করেনি। ওদের বলেছিলাম, যদি আপনারা অভিযোগ না লেখান, তা হলে আপনাদের এই আন্দোলন সফল হবে না। এখানে আপনাদের টিকতেও দেবে না।’’ রেখা প্রথমে অভিযোগ দায়ের করার পরে তাঁকে দেখে বাকিরাও সাহস পান বলে জানিয়েছেন গঙ্গাধর। সন্দেশখালির আন্দোলন শুরুর পর সেখানে বিভিন্ন কমিশন গিয়ে খোঁজখবর নিয়েছিল। তখন আন্দোলনকারী মহিলারা কেউ কেউ ভয় পেয়ে যান বলে জানান গঙ্গাধর। জবা সিংহ নামে এক মহিলার কথা এ ক্ষেত্রে বলেছেন তিনি। জানান, এসটি কমিশনার তাঁর সঙ্গে কী হয়েছে বিশদে জিজ্ঞাসা করলে জবা কোনও কথা বলতে পারেননি। কারণ, তিনি ‘ঘাবড়ে’ গিয়েছিলেন। গঙ্গাধর এ-ও জানান, জবাকে ‘ট্রেনিং’ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি তা নিতে পারেননি। জবা তিন জনের নাম নিয়েছিলেন নিজের অভিযোগে, তাঁরা হলেন শাহজাহান শেখ, উত্তম সর্দার এবং শিবু হাজরা। ভিডিয়োয় গঙ্গাধর দাবি করেছেন, তিনি এবং শান্তনু নামে এক জন মিলে সন্দেশখালির সম্পূর্ণ আন্দোলন ধরে রেখেছেন। জবার পরে আরও এক মিথ্যা অভিযোগকারিণীর নাম নেন গঙ্গাধর। বলেন, ‘‘বীণা নামের এক জন ছিল। সে-ও অভিযোগ দায়ের করেছিল।’’ভিডিয়োটি ঘিরে ইতিমধ্যে শোরগোল শুরু হয়ে গিয়েছে। এই ভিডিয়োটি দেখিয়ে একের পর এক পোস্ট করতে শুরু করেছেন তৃণমূলের নেতারা। সন্দেশখালির ঘটনাকে ‘সাজানো এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে দাবি করছেন ।