বিধায়কের বিরুদ্ধে কর্মক্ষেত্রে হেনস্থা, হুমকি দেওয়ার অভিযোগ মহিলা বি এম ও এইচ!
নিজস্ব সংবাদদাতা : সরকারি হাসপাতালে কর্মক্ষেত্রে কর্তব্যরত চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্য কর্মী সহ অন্যান্য স্বাস্থ্য কর্মীদের নিরাপত্তা দিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর একগুচ্ছ ব্যবস্থার কথা ঘোষণা করেছিল আর জি কর হাসপাতালের ঘটনার পর। এরপর ও স্বাস্থ্য দফতরের এক মহিলা বি এম ও এইচ ( ব্লক মেডিক্যাল হেলথ্ অফিসার) কে তৃণমূল কংগ্রেসের এক প্রভাবশালী নেতা তথা উলুবেড়িয়া উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক , আমতা গ্ৰামীণ হাসপাতাল এর রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান চিকিৎসক নির্মল মাজি - র বিরুদ্ধে নানানভাবে হেনস্তা করার অভিযোগ উঠেছে। বি এম ও এইচ অভিযোগ করে বলেন, ' কর্মক্ষেত্রে হেনস্থা, অপমান, জোর করে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা,র্দুব্যবহার, সরকারি কাজে হস্তক্ষেপ, হুমকি দেওয়া হচ্ছে।এই অবস্থায় নিজের ও সন্তানের নিরাপত্তা চেয়ে সি এম ও এইচ, জেলা শাসক, রাজ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করেছেন। সেই সাথে তার সঙ্গে বিধায়কের অশালীন আচরণ, অশালীন মন্তব্য, কটুক্তির কথা বিস্তারিতভাবে জানিয়ে বিধায়কের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানিয়েছেন।বি এম ও এইচ বিধায়কের বিরুদ্ধে গত সেপ্টেম্বর মাসে অভিযোগ জানালে ও এখনও পর্যন্ত স্বাস্থ্য দফতর বিধায়ক তথা আমতা গ্ৰামীণ হাসপাতাল এর রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান চিকিৎসক নির্মল মাজি - র বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। গ্ৰামীণ হাওড়া জেলার আমতা ১ নং ব্লকের অন্তর্গত আমতা গ্ৰামীণ হাসপাতালের ব্লক মেডিক্যাল হেলথ্ অফিসার (বি এম ও এইচ) পায়েল বিশ্বাস অভিযোগের সুরে বলেন, ' উলুবেড়িয়া উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক তথা আমতা গ্ৰামীণ হাসপাতাল এর রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান চিকিৎসক নির্মল মাজি - র বিরুদ্ধে আমার অভিযোগ আমি সি এম ও এইচ, হাওড়া জেলা শাসক, রাজ্য স্বাস্থ্য সচিব কে লিখিতভাবে জানিয়েছি ' । অপরদিকে চিকিৎসক নির্মল মাজি বি এম ও এইচ এর করা অভিযোগ সম্পুর্ণ নসাৎ করে দিয়ে বি এম ও এইচ এর বিরুদ্ধেই অভিযোগ করেছেন। গত মার্চ মাসে পায়েল বিশ্বাস আমতা গ্ৰামীণ হাসপাতালে বদলি হয়ে আসেন। পায়েল বিশ্বাস বলেন, " আমি বদলি হয়ে আসার আগে থেকেই,বদলি হয়ে আসার পর, হাসপাতালের দায়িত্ব গ্ৰহণের পর থেকে বিধায়ক তথা হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান চিকিৎসক নির্মল মাজি আমার সরকারি কাজে নাক গলাচ্ছেন, কাজে হস্তক্ষেপ করছেন, সময়ে - অসময়ে নানান হুমকি দিচ্ছেন। ওনার বিরুদ্ধে আমার সব থেকে বড় অভিযোগ আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছেন। ওনার এহেন ব্যবহারে প্রতিবাদ করায় আমাকে সরকারি বৈঠকে যোগ দিতে দিচ্ছেন না। ' ফিল্ড ভিজিট ' , ' রিভিউ বৈঠক ' , ' প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে যেতে বাধা দিচ্ছেন।বিধায়ক তথা আমতা গ্ৰামীণ হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান চিকিৎসক নির্মল মাজি - র জন্য হাসপাতালের চিকিৎসকরা পরিষেবা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সর্বসমক্ষে আমাকে অশালীন মন্তব্য করে বদলি করার হুমকিও দিচ্ছেন। আমার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কটুক্তি,কটাক্ষ করছেন " । বি এম ও এইচ পায়েল বিশ্বাস অভিযোগের সুরে বলেন, " রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা বিধায়কের রাতে হাসপাতালের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে পরিদর্শন করার কথা নয়। কিন্তু তিনি প্রায়ই রাত্রি ৮ পর হাসপাতালে এসে আমাকে আমার কোয়াটার থেকে ডেকে পাঠাচ্ছেন, আপত্তিজনক কথা বলছেন, আমার গা - ঘেঁসে বসার চেষ্টা করেন,রাতে আমাকে প্রায়ই ফোন করে বিরক্ত করছেন। এসবের প্রতিবাদ করায় আমাকে হেনস্তা করছেন, ঠিকমতো কাজ ও করতে দিচ্ছেন না " । তিনি অভিযোগের সুরে আরও বলেন," রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান বিধায়ক চিকিৎসক নির্মল মাজি তাঁর পরিচিতদের হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে নানান পরীক্ষা, ঔষধের সুবিধা পাইয়ে দিচ্ছেন।অথচ সে সব রোগীরা আদউ হাসপাতালে ভর্তিই হয় নি। একদিন আমাকে সারারাত হাসপাতালে বসিয়ে রাখা হয়েছিল ওনার পরিচিত এক মুমুর্ষু রোগী আসছে বলে। প্রায়ই উনি দফতরের বাইরে গিয়ে সর্বসমক্ষে আমাকে নানান রকম কটুক্তি, অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ, অকথ্য মন্তব্য করেন। এইসবের প্রতিবাদ করলে তিনি সর্বসমক্ষে আমাকে হাসপাতাল থেকে লাথ মেরে বের করে দেওয়ার ও হুমকি দিচ্ছেন। হাসপাতালে আমার থাকার কোয়াটার আছে।ওনার এই অনৈতিক ব্যবহার - আচরণের, অকথ্য মন্তব্য,অন্যায় আবদার এর জন্য আমার ও আমার সন্তানের নিরাপত্তা কারণে আমি কোয়াটারে না থেকে প্রতিদিন রাতে বাড়ি ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছি।ওনার জন্যই আমতা গ্ৰামীণ হাসপাতাল কার্যত চিকিৎসা পরিষেবা হীনতায় ভুগছে। আমি ও নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছি " ।
রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা স্বপন সোরেন এবং হাওড়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক কিশলয় দত্ত কে গত ১৬ ই সেপ্টেম্বর ২০২৫ সমস্ত বিষয় অবগত করে , নিজে এবং ওনি সন্তান নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছে এই মর্মে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন বি এম ও এইচ পায়েল বিশ্বাস। সেই সঙ্গে তিনি ঘটনার পূঙ্গাঙ্গ তদন্তের আবেদন জানিয়েছেন। তিনি নিজের এবং তার সন্তানের নিরাপত্তা চান। আইনানুসারে কর্মক্ষেত্রে কোনোরকম শারীরিক, মানসিক,যৌন নির্যাতন, হেনস্তার অভিযোগ হলে তৎক্ষণাৎ আইনত হস্তক্ষেপ বাধ্যতামূলক।
সেখানে ২ মাসের ও বেশি সময় অতিবাহিত হলেও এব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ কোনো এক অদৃশ্য কারণে নেওয়া হল না।কেন ? এই প্রশ্ন স্বভাবতই উঠেছে। বি এম ও এইচ পায়েল বিশ্বাস এর গুরুতর অভিযোগ " সি এম ও এইচ এর সামনেই বিধায়ক তথা আমতা গ্ৰামীণ হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান চিকিৎসক নির্মল মাজি আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ, অকথ্য মন্তব্য করেছেন। আমার পারিবারিক অবস্থা নিয়ে অশালীন মন্তব্য করেছেন।সি এম ও এইচ এর কোনো প্রতিবাদ করেন নি।আমি ওনার এই আচরণের প্রতিবাদ করায়, সি এম ও এইচ আমাকেই উল্টে বলেন, " বিধায়ক তথা আমতা গ্ৰামীণ হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান চিকিৎসক নির্মল মাজি - র নামে কোনো অভিযোগ করলে উনি ( সি এম ও এইচ) আমাকে অন্যত্র দূরে বদলী করে দেবেন " ।
রাজ্যের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক স্বপন সোরেন এই প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করলে, উনি কোনো মন্তব্যই করেন নি। হাওড়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক কিশলয় দত্ত কে এই প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করলে উনি বলেন, " বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত হয়েছি। আমার দফতরে এখনো লিখিত অভিযোগপত্র জমা পড়ে নি।ডি এইচ এস এর কাছে লিখিত অভিযোগপত্র গেছে। উনি কর্তৃপক্ষ। ওনার কাছ থেকে কোনো নির্দেশ না এলে, আমি কোনো ব্যবস্থা গ্ৰহণ করতে পারি না " । অপরদিকে বিধায়ক তথা আমতা গ্ৰামীণ হাসপাতাল এর রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান চিকিৎসক নির্মল মাজি তার বিরুদ্ধে বি এম ও এইচ পায়েল বিশ্বাস এর করা সমস্ত অভিযোগ নসাৎ করে দিয়ে তিনি বলেন, " বি এম ও এইচ পায়েল বিশ্বাস সিঙ্গেল মাদার।সব জায়গায় এটা ইস্যু করেই ওনি সবার সহানুভূতি আদায় করে দিনের পর দিন কাজে কামাই করেন। হাসপাতালে নিয়মিত আসেন না। হাসপাতালের রোগীরা সঠিক চিকিৎসা পরিষেবা পাচ্ছেন না, বিনা পয়সায় ঔষধ ও পাচ্ছেন না। তাই হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা ঠিকঠাক রাখার জন্য ওই হাসপাতালে আমাকে যেতে হয়।রাতে ও থাকতে হয়। রোগীদের কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা, তাদের সঙ্গে কথা বলে জানতে হয়।বি এম ও এইচ পায়েল বিশ্বাস এর ফাঁকিবাজি নিয়ে রাজ্য স্বাস্থ্য সচিব কে জানিয়েছি। সেই কারণেই পায়েল বিশ্বাস আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ করে অনেকের সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টা করছেন।আমার মনে হয় ওনি বিরোধী দলের রাজনৈতিক নেতা - নেত্রীদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ করছেন " । বি এম ও এইচ পায়েল বিশ্বাস বলেন, " আমি অন্যায়ের প্রতিবাদ করবো। ন্যায়ের জন্য লড়াই করবো। অন্যায়ের সাথে কোনো আপস করবো না।আমি এর শেষ দেখেই ছাড়বো " ।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে " জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও অধিকার মঞ্চ ", " মুক্ত কন্ঠে আমতা ", " জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস ওয়েষ্ট বেঙ্গল " এবং " অভয়া মঞ্চ " - র ডাকে " আমতা চলো " অভিযান হয়। মঞ্চের প্রতিনিধিরা বি এম ও এইচ পায়েল বিশ্বাস এর সঙ্গে কথা বলে সমস্ত বিষয় অবগত হন। মঞ্চের সদস্যরা বলেন, এই ঘটনার আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অবিলম্বে অভিযুক্ত স্থানীয় বিধায়ক ডাঃ নির্মল মাজি - র বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিয়ে গ্ৰেপ্তার করতে হবে।রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান পদ থেকে বহিস্কার করতে হবে। যদি বিধায়কের বিরুদ্ধে আইনি কোনো পদক্ষেপ গ্ৰহণ না করা হয় , তাহলে আমরা খুব শীঘ্রই বৃহত্তর আন্দোলনের পথে যেতে বাধ্য হব " । বিধায়ক তথা আমতা গ্ৰামীণ হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান চিকিৎসক নির্মল মাজি - র অশালীন আচরণ বি এম ও এইচ পায়েল বিশ্বাস প্রতিবাদ করার পর হাসপাতালের অনেক নার্স, মহিলা স্বাস্থ্য কর্মী, অন্যান্য মহিলা কর্মীরা প্রকাশ্যে না বললেও আড়ালে - আবডালে বলছেন," চিকিৎসক নির্মল মাজি তাদের সঙ্গেও এই রকম আচরণ করে থাকেন। উলুবেড়িয়া উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রের বিভিন্ন সংগঠন, সাংস্কৃতিক সংগঠন, পূজা কমিটির সদস্য -সদস্যরা ও বলছেন চিকিৎসক নির্মল মাজি সুন্দরী মেয়ে, সুন্দরী গৃহবধূদের প্রতি দুর্বল। অনুষ্ঠানে এসে কোনো সুন্দরী মেয়ে, সুন্দরী গৃহবধূ দেখলে তাদের ডেকে যেচে আলাপ করেন। তাদের শরীর ছুঁয়ে কথা বলেন। তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করেন। চিকিৎসক নির্মল মাজি একজন প্রভাবশালী নেতা। ওনার বিরুদ্ধে এর আগে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নানান অভিযোগ হয়েছে। সংবাদের শিরোনামে এসেছেন। ওনার এবং ওনার দলের নেতা - নেত্রী, কর্মীদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য, আচরণ, হুমকির জন্য কেহ প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না। প্রতিবাদ করলে প্রতিবাদীর নিজের, তার পরিবারের সদস্যদের উপর অকথ্য অত্যাচার হবে, বাড়ি -ঘর ভাঙচুর হবে - এই ভয়েই কেহ প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না। আমতা গ্ৰামীণ হাসপাতালের বি এম ও এইচ পায়েল বিশ্বাস বিপদের মধ্যে থেকে ও, ভিতরে ভিতরে ভয়ে ভয়ে থেকে ও , নিরাপত্তা হীনতায় ভুগলে ও সাহসের সঙ্গে বিধায়কের আচরণের প্রতিবাদ করে বিধায়কের চরিত্রের মুখোশ খুলে দেওয়ায় ওনার এই সাহসীকতাকে অনেকেই কুর্ণিশ জানাচ্ছেন। বিধান সভা নির্বাচন আসন্ন। বিধান সভা নির্বাচন এর প্রাক্কালে বিধায়কের এই আচরণকে বিরোধী দল গুলি প্রচারের হাতিয়ার করবে বলে অভিজ্ঞ রাজনৈতিক মহলের ব্যক্তিদের অভিমত।