কৃষি দপ্তর দ্বারা স্বীকৃত এক কৃতি কৃষক ১৫ দিন বাড়িছাড়া। ঋণগ্রস্ত ফুলচাষীদের ঋন মুকুব সহ ঐ চাষের জন্য সহজ শর্তে ঋন প্রদানের দাবীতে জেলা শাসক ও হটিকালচার দপ্তরের জেলা আধিকারিককে স্মারকলিপি.............
নিজস্ব প্রতিবেদক,পূর্ব মেদিনীপুর: পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ফুলচাষের মানচিত্রে পাঁশকুড়া ব্লকের স্থান প্রথম। ব্লকের মাইশোরা গ্রাম পঞ্চায়েতের পূর্ব ও পশ্চিম গুড়তলা,পারলঙ্কা, মাইশোরা,রাজশহর সহ বেশ কয়েকটি গ্রাম গোলাপ ফুলচাষের জন্য বিখ্যাত। ফুল কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক 'অর্থকরী ফসল' হিসেবে স্বীকৃত না হওয়ার কারণে পায় না,সরকারী ঋণের সুযোগ। বন্যা/পোকামাকড়ের আক্রমণ সহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ফুলচাষের ক্ষতি হলে ক্ষতিপূরণ বা 'ফসল বীমা'র সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। সেজন্য ওই অর্থকরী ফসল চাষ করবার জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ফুলচাষীদের সরকারী ঋনের উপর নির্ভর না করে বেসরকারী ঋন বা মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা ধার করতে হয়। করোনা পরিস্থিতির পর থেকে কয়েক বছর এলাকার ফুলচাষীরা কংসাবতী সৃষ্ট বিধ্বংসী বন্যা সহ নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে ভীষণভাবে আর্থিক দিক থেকে ক্ষতির মুখে পড়ছেন। ফলস্বরূপ চাষের জন্যে নেওয়া ঋন সময়মত শোধ করতে পারছেন না অনেকেই। সে কারণে আরোহন, IIFL,Bharat financial inclusion Limited প্রভৃতি ভুঁইফোর নন ব্যাঙ্কিং সংস্থাগুলির লোকজনেরা চাষীদের চড়া সুদে ঋণ দিয়েছিল,সেই টাকা আদায়ের লক্ষ্যে ফুলচাষীদের নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করছে। ২৭ জুন সন্ধ্যায় পশ্চিম গুড়তলা গ্রামের ফুলচাষী সঙ্গীতা প্রামানিক (বয়স ২৭)কে পাওনাদার এসে চাপ সৃষ্টি করার পর রাত্রিতে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করে। এরকমই ওই গ্রামগুলির বহু চাষী ঋণ পরিশোধ করতে না পারার কারণে বর্তমানে ঘরছাড়া। বাগানে ফুল ফুটে রয়েছে। তোলার কেউ নেই। ওই ক্ষতিগ্রস্ত চাষীদের তালিকায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কৃষি দপ্তরের দ্বারা সম্মানিত একজন কৃতি কৃষক সরোজ দাসও রয়েছেন। যিনি ১৫ দিন বাড়ী ছাড়া,নিখোঁজ। ভয়াবহ এই পরিস্থিতি নিরসনে ওই ঋণগ্রস্ত কৃষকদের ঋণ মুকুব সহ চড়া সুদের কারবারীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও ফুলচাষীদের সহজ শর্তে ঋণ প্রদান এবং হর্টিকালচার ডিপার্টমেন্টের বিভিন্ন প্রকল্পে ওই ক্ষতিগ্রস্ত ফুলচাষীদের সহায়তা দানের দাবীতে ইতিমধ্যে ২৮ জুন পূর্ব মেদিনীপুর জেলা ফুলচাষী ও ফুলব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে মূখ্যমন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রী উদ্যানপালন দপ্তরের মন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে সমিতির সাধারণ সম্পাদক নারায়নবাবুর নেতৃত্বে এক প্রতিনিধিদল ওই গ্রামগুলি পরিদর্শন করেন এবং মৃত ফুলচাষীর বাড়িতে যান। সমিতির পক্ষ থেকে আজ উপরোক্ত দাবীতে জেলা শাসক ও জেলা উদ্যানপালন দপ্তরের আধিকারিককে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। প্রতিনিধিদলে ছিলেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ চন্দ্র নায়ক ও সদস্য নিবাস মানিক। নারায়ণবাবু অভিযোগ করে বলেন,অতি সত্বর উপরিউক্ত বিষয়ে সরকারীভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে আরও অনেক ফুলচাষী আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হবে।
