নিজস্ব সংবাদদাতা : প্রয়াত ভারতীয় সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেতা তথা পরিচালক গোবর্ধন আসরানি । মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন তিনি। গত ২০শে অক্টোবর সোমবার, দীপাবলির দিন বিকেল ৪টে নাগাদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন অভিনেতা। প্রবীণ অভিনেতার মৃত্যুর খবর জানিয়েছেন ভাইপো অশোক আসরানি। তাঁর মৃত্যুতে বলিউড সহ বিনোদন জগতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। এই বিষাদের আবহেই প্রকাশ্যে এসেছে একটি হৃদয়স্পর্শী ভিডিও, যেখানে দেখা যাচ্ছে, মৃত্যুর মাত্র ১০ দিন আগেও অভিনেতা মঞ্চে প্রাণ খুলে নাচছেন।

ভিডিওটি শেয়ার করে পিঙ্কি লেখেন, "মাত্র ১০ দিন আগে তাঁর শেষ ইভেন্ট ছিল। তিনি স্টেজে ছিলেন এবং সিন্ধি সুরের তালে নাচছিলেন। ওয়াও, কী দারুণ জীবনই না তিনি যাপন করলেন! একজন সত্যিকারের রত্নশিল্পী, আমাদের কিংবদন্তি আসরানি সাহেব।" চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, তাঁর বুকে জল জমেছে। তবে শেষ রক্ষা হয়নি জনপ্রিয় এই অভিনেতার। ১৯৪১ সালের ১ জানুয়ারি রাজস্থানের জয়পুরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন আসরানি । পড়াশোনা করেছিলেন সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুল থেকে। আর হিন্দি সিনেমায় তাঁর কৌতুকাভিনয়ের অবদান অনস্বীকার্য। পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে ৩৫০টিরও বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। তাঁর অভিনয় দর্শকের হৃদয়ে চিরস্থায়ী স্থান করে নিয়েছে।প্রসঙ্গত, সত্তরের দশকে অসরানি হয়ে ওঠেন বলিউডের অন্যতম জনপ্রিয় চরিত্র অভিনেতা। ‘মেরে আপনে’, ‘কোশিস’, ‘চুপকে চুপকে’, ‘ছোটি সি বাত’, ‘রফু চক্কর’, ‘অভিমান’, ‘বাবুর্চি’-এর মতো সিনেমায় তাঁর অভিনয় আজও স্মরণীয়। তবে তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত চরিত্র নিঃসন্দেহে রমেশ সিপ্পির কালজয়ী ছবি ‘শোলে’-তে সেই জেলারের ভূমিকায়। যা আজও ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে অনন্য উদাহরণ হয়ে আছে। অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি সফলভাবে পরিচালনা করেছেন ‘চলা মুরারি হিরো বননে’ (১৯৭৭) এবং ‘সালাম মেমসাব’ (১৯৭৯)-এর মতো ছবি। গুজরাটি সিনেমাতেও তিনি নায়ক হিসেবে দারুণ সাফল্য পেয়েছিলেন। জনপ্রিয় ‘ধমাল’ সিরিজের মতো কমেডি ছবিতেও তাঁকে দেখা গিয়েছিল। যেখানে তাঁর অভিনয় দর্শকদের প্রশংসা কুড়িয়েছিল।

১৯৯৮ ভারত বিখ্যাত "বিহারী বাবু র বাঙালী বউ" যাত্রা অভিনয়ও করেছিলেন গোবর্ধন আসরানি-জি এবং এই যাত্রাপালার নির্দেশক এর দায়িত্ব পালন করেছিলেন চিত্রনাট্যকার ও অভিনেতা ও পরিচালক তপন গাঙ্গুলী। তপন গাঙ্গুলী বলেন এই যাত্রাপালার প্রযোজক ছিলেন কার্তিক সামন্ত ও অভিনয় করেছিলেন গোবর্ধন আসরানি-জি। যাত্রার তখন রমরমা চলছে। মুম্বাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি র শক্তি কাপুর, জীনাত আমন (জিনাত আমানুল্লাহ খান), রবীনা ট্যান্ডন, সুধা চন্দ্রন, বিশ্বজিৎ চ্যাটার্জি পর্যন্ত যাত্রা করেছেন।তপন গাঙ্গুলী বলেন তিনি একজন সুন্দর মানুষ ছিলেন, এই কিংবদন্তির কমিক টাইমিং, আমাদের হৃদয়ে চিরকাল থাকবে। আমাদের শিল্পের এটি এক বিরাট ক্ষতি। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুন আসরানি-জি। আমাদের হাসাতে লক্ষ লক্ষ কারণ দিয়েছেন আপনি।

জানা যাচ্ছে, অভিনেতা নিজেই চাননি যে তাঁর শেষযাত্রায় কোনও আড়ম্বড় হোক। পরিবারের ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর, মৃত্যুর আগে স্ত্রী মঞ্জুর কাছে বিশেষ ইচ্ছেপ্রকাশ করেছিলেন গোবর্ধন আসরানি। সে সময়েই স্ত্রীকে বলেছিলেন, পৃথিবী থেকে নীরবে বিদায় নিতে চান তিনি। কারণ প্রবীণ অভিনেতা চেয়েছিলেন, আমজনতা তাঁকে একজন ‘সাধারণ মানুষ’ হিসেবেই মনে রাখুক। তাই তাঁর শেষ ইচ্ছের সম্মান রাখেন স্ত্রী মঞ্জু। তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন, যাতে তাঁর মৃত্যুর পর তাঁকে নিয়ে কোনও রকম হইহট্টগোল না হয়। আসরানি তাঁর অদ্ভুত কমিক টাইমিং ও হৃদয়গ্রাহী চরিত্রচিত্রণের জন্য পরিচিত ছিলেন। দশকের পর দশক ধরে তিনি দর্শকদের হাসিয়েছেন, কাঁদিয়েছেন এবং ভারতীয় সিনেমায় রেখে গেছেন এক অমোচনীয় ছাপ।