Skip to content

আজ থেকে শুরু অম্বুবাচী!

নিজস্ব সংবাদদাতা : আজ ২২ জুন থেকে শুরু হচ্ছে অম্বুবাচী। এ সময়ে গুয়াহাটির কামাখ্যা মন্দিরের দরজা তিন দিন বন্ধ থাকে। এ সময়ে দেবী ঋতুমতী হন। কামাখ্যা মন্দির চত্বরে আয়োজিত হয় অম্বুবাচী মেলা। পুরাণ অনুযায়ী সতীর আত্মদাহের পর বিরহে আকুল শিব তাঁর দগ্ধ শরীর নিয়ে ভ্রমণ করতে শুরু করেন। ফলে সৃষ্টি সঞ্চালনার কাজ কঠিন হয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে বিষ্ণুর সুদর্শন চক্রের আঘাতে সতীর শরীরের ৫১টি খণ্ড হয়। যেখানে এই খণ্ডগুলি পড়ে, সেগুলি শক্তিপীঠ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। গুয়াহাটির যে স্থানে বর্তমান মন্দির, সেখানে সতীর যোনি অংশ পড়েছিল। সেই শক্তিপীঠ কামাখ্যা সিদ্ধপীঠ নামে প্রসিদ্ধ। ২২ জুন থেকে দেবী রজঃস্বলা হন, এই উপলক্ষে তিন দিন মন্দিরের দ্বার বন্ধ থাকে।

সতীর দেহ একান্নটি খণ্ডে ছড়িয়ে পড়েছিল ভারত ও প্রতিবেশী দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। সেই প্রত্যেকটা জায়গায় গড়ে উঠেছে সতী মায়ের পীঠ। কামরূপ কামাখ্যায় (অসমে) পড়েছিল দেবীর যোনি। তাই এর অন্য নাম যোনিপীঠ। এখানে তন্ত্রসাধনা করলে সিদ্ধিলাভ করা যায়-এমনটাই বিশ্বাস সাধকদের। বিশেষ করে অম্বুবাচীর তিনদিন তন্ত্রসাধনায় বসলে পরম সিদ্ধি আসবেই।

কথিত আছে, প্রতি বছর আষাঢ়ের সাত তারিখ থেকে কামাখ্যা মা ঋতুমতী হন। দেবীর মন্দিরের গর্ভগৃহে একটি ত্রিকোণাকার শিলাখণ্ড আছে। এই সময় সেই শিলাখণ্ডটি ভেদ করে গাঢ় গৈরিক রঙের জলস্রোত প্রবাহিত হতে থাকে। তিনদিন পর এই স্রোত ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায়। এই অলৌকিক ঘটনাটিকেই দেবীর রজঃস্বলা হওয়ার নিদর্শন বলে মনে করা হয়। এমনকী মন্দির সংলগ্ন ব্রহ্মপুত্রের জলেও এই লালচে রঙের স্রোত এসে মেশে। প্রকৃতির কী অদ্ভুত লীলা!

সনাতন ধর্ম মতে প্রতি বছর আষাঢ় মাসে মৃগশিরা নক্ষত্রের তিনটি পদ শেষ হলে পৃথিবী বা ধরিত্রী মা রজস্বলা হন। এই বিশেষ সময়কাল ধরে প্রতি বছর সনাতন ধর্মাবলম্বীরা অম্বুবাচী পালন করেন। গ্রামবাংলার বৃদ্ধা খুড়ি জেঠিরা ছড়া কাটতেন ‘কীসের বার কীসের তিথি, আষাঢ়ের সাত তারিখ অম্বুবাচী।’ হ্যাঁ আষাঢ় মাসের সাত তারিখ থেকে শুরু হয় অম্বুবাচী। সুপ্রাচীন জ্যোতিষ শাস্ত্র বলছে, সূর্য যে বারের যে সময়ে মিথুন রাশিতে গমন করে, তার পরবর্তী সেই বারের সেই সময় থেকে অম্বুবাচী হয়। অর্থাৎ ধরিত্রী মা এই সময়ে ঋতুমতী হন।

অম্বুবাচী শুরুর পর তিন দিন চলে এই উৎসব। চলতি বছরে অম্বুবাচী শুরু হবে ২২ জুন অর্থাৎ ৭ আষাঢ় ভোর সাড়ে ৬টায়। সমাপ্তি হবে ২৫ জুন অর্থাৎ ১০ আষাঢ় রাত ১টার সময়।

অম্বুবাচীর নানা নিয়মকানুন রয়েছে।
১. অম্বুবাচীর তিনদিন কোনও শুভ কাজ নিষিদ্ধ থাকে। মন্ত্র পড়ে পুজোও করা যায় না, কেবল ধূপ জ্বালিয়ে পুজো সারতে হয়। এমনকী চাষবাসও বন্ধ রাখা হয়। অম্বুবাচীর তিনদিন পর থেকে ফের মঙ্গল অনুষ্ঠান বা চাষাবাদ শুরু হয়।
২. এই তিন দিন ব্রহ্মচারী, সাধু, সন্ন্যাসী, এবং বিধবা মহিলারা 'অশুচি' পৃথিবীর উপর আগুনের রান্না করে কিছু খান না। কারণ প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, ঋতুকালে মেয়েরা অশুচি থাকেন। একই ভাবে মনে করা হয়, অম্বুবাচীর সময়ে পৃথিবীও অশুচি থাকে।
৩. বিভিন্ন পরিবারের বয়স্ক বিধবা মহিলারা তিন দিন ধরে অম্বুবাচী উপলক্ষে বিশেষ ব্রত পালন করেন৷ তিনদিন পরে জামাকাপড়, বিছানা সাবান দিয়ে ধুয়ে, নিজেরা সাবান-শ্যাম্পু দিয়ে স্নান করে, তবে রান্নাঘরে ঢোকেন, স্বাভাবিক জীবনে ফেরেন।
৪. অম্বুবাচী চলাকালীন বিভিন্ন মন্দির ও বাড়ির ঠাকুর ঘরের মাতৃ শক্তি যেমন কালী, দুর্গা, জগদ্ধাত্রী, বিপত্তারিণী, শীতলা, চণ্ডীর প্রতিমা বা ছবি কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়।
৫. অম্বুবাচী শেষ হওয়ার পরে দেবীমূর্তি বা ছবির আচ্ছাদন খুলে, ভাল করে স্নান করিয়ে পুজো করতে হয়। দেবীকে আম-দুধ নিবেদন করতে হয়।

Latest