ঢাকা, জাকির হোসেন: গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হল বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এরই সঙ্গে, ১৮ নভেম্বরের মধ্যে হাসিনাকে গ্রেপ্তার করে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইভাবে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে প্রাক্তন সেতুমন্ত্রী ও হাসিনা-ঘনিষ্ঠ ওবায়দুল কাদের সহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে৷ যাঁদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করা হয়েছে তাঁদের মধ্যে অন্যতম, প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, প্রাক্তন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, প্রাক্তন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী দীপু মনি, প্রাক্তন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, প্রাক্তন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, প্রাক্তন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ প্রমুখ৷ পরোয়ানা জারির আবেদনের সময় আওয়ামী লীগ সরকারের আমল এবং জুলাই–আগস্টে তাদের ভূমিকা তুলে ধরা হয়৷ গত ৫ আগস্ট পতন হয় শেখ হাসিনা সরকারের। সেদিনই প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে ভারতে চলে যান তিনি। হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যা এবং হত্যার মামলা দায়ের করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। হাসিনার আমলের বিভিন্ন মন্ত্রী, সংসদ সদস্য এবং আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতার বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের করা হয়। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ আগেই বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছিলেন যে তাঁরা হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে চান। বিচার শুরু হলেই হাসিনাকে ভারত থেকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে বলেও জানিয়েছিলেন ইউনূস। অন্যদিকে, হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় জানান, বাংলাদেশে বিচারের মুখোমুখি হতে প্রস্তুত তার মা শেখ হাসিনা৷ এদিকে, ১৭ অক্টোবর থেকেই জুলাই এবং আগস্ট মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন গণহত্যার বিচারের কাজ শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। এদিন ওই ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান, বিচারপতি গোলাম মর্তুজার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ হাসিনা এবং অন্যদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের চীফ প্রসিকিউটর আইনজীবী তাজুল ইসলাম জানান, 'দেশজুড়ে এই হত্যাগুলি হয়েছিল। যাদের নামে অভিযোগ দায়ের করা হয় তাদের গ্রেপ্তার করা না হলে তদন্ত কাজ ঠিক মতন করা সম্ভব নয়। এই কারণে সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়৷' উল্লেখ্য, চলতি বছরের জুলাই মাসে রাষ্ট্রীয় চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলনের জেরে উত্তাল হয় বাংলাদেশ। এই আন্দোলনে কয়েক হাজার মানুষ শহীদ হন যাতে সরাসরি জড়িত তৎকালীন শাসকদল শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ও এর শরীকরা৷ এই আন্দোলনের জেরেই গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এরপরেই মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার এই আন্দোলনে হত্যার বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করার ঘোষণা দেয়। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়। এই ট্রাইব্যুনালে ইতিমধ্যে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অনেকের বিচার ও সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকর হয়েছে। মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত আরও কয়েকজনের বিচার ট্রাইব্যুনালে চলছিল।