ঢাকা, জাকির হোসেন, ৪ ডিসেম্বর: চট্টগ্রাম আদালতে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও প্রাক্তন ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুরকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় প্রাক্তন দুই সিটি কর্পোরেশন কাউন্সিলর, আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের ২৯ নেতাকর্মীকে আসামি করে আরেকটি মামলা করা হয়েছে৷ মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) রাতে নগরের কোতোয়ালি থানায় মামলাটি করেন মোহাম্মদ উল্লাহ নামে এক ব্যক্তি। মামলায় তিনি নিজেকে ব্যবসায়ী বলে উল্লেখ করেন।
চট্টগ্রামের আদালত ভবনে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় এখন অবধি ছয়টি মামলা হয়েছে। এর আগে হত্যা, পুলিশের কাজে বাধা দেয়াসহ আরও পাঁচটি মামলা হয়েছিল। এরমধ্যে পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি, হত্যার শিকার আইনজীবী আলিফের বাবা ও ভাই বাদী হয়ে দুটি মামলা করেন।
মামলার আসামিরা হলেন: চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৩১ নম্বর আন্দরিকল্লা ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর ও নগর আওয়ামী লীগের উপদফতর সম্পাদক জহুর লাল হাজারী, নগর আওয়ামী লীগের সদস্য ও ২১ নম্বর জামালখান ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর শৈবাল দাশ, নগর যুব মহিলা লীগের নেত্রী ও সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের সমন্বয়ক জিনাত সুহানা চৌধুরী, আওয়ামী লীগ নেতা সমীর কুমার দে, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রিপন কান্তি নাথ, ছাত্রলীগ নেতা শাহাদাত আহমেদ, কাজী তানভীর প্রমুখ। মামলার বাকি আসামিরা সবাই আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মী।
মামলার বাদী মোহাম্মদ উল্লাহর অভিযোগ, গত ২৬ নভেম্বর বিকেল ৩টার দিকে তিনি ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়ে আইনি সহায়তা নিতে চট্টগ্রাম আদালত ভবনের আইনজীবীর চেম্বারে গিয়েছিলেন। বিকেল ৩টা ২৫ মিনিটের দিকে তিনি বাসায় ফেরার পথে সড়কে মামলায় এজাহারভুক্ত ২৯ জন আসামিসহ অজ্ঞাত আরও ৪০ থেকে ৫০ জন দেশীয় অস্ত্রসহ অবস্থান করছিলেন। এ সময় অভিযুক্তরা তার মাথায় টুপি দেখে তাকে ‘শিবির (বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির) ধর’ বলে ধাওয়া দেন। এ ঘটনায় তিনি ভীত হয়ে রঙ্গম কনভেনশন হলের গলিতে ঢুকে পড়েন। এরপর বিকেলে রঙ্গম কনভেনশন হলের পাশে মেথরপট্টির সামনে অভিযুক্তরা তাকে এলোপাতাড়ি মারধর করেন। এ সময় তার পায়জামার পকেটে থাকা ছয় হাজার টাকা অভিযুক্ত দুজন কৌশলে ছিনিয়ে নেন। এরপর তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে তাকে উদ্ধার করেন। নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার কাজী মোহাম্মদ তারেক আজিজ জানান, চিন্ময় কৃষ্ণকে কারাগারে নেয়ার সময় সহিংসতার ঘটনায় এক ব্যবসায়ী বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় ২৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে দুজন প্রাক্তন ওয়ার্ড কাউন্সিলরের নামও আছে।
প্রসঙ্গত, রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুর হওয়াকে কেন্দ্র করে গত ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় সাইফুলের বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেন। এ ছাড়া পুলিশের ওপর হামলা, কাজে বাধাদান এবং আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের ওপর হামলা, ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় আরও চারটি মামলা হয়। পাঁচ মামলায় গ্রেপ্তার হন ৩৯ জন। এর মধ্যে হত্যায় জড়িত অভিযোগে ৯ জন গ্রেপ্তার রয়েছেন। গত সোমবার পুলিশের ওপর হামলা ও কাজে বাধাদানের মামলায় গ্রেপ্তার দুই আসামির জন্য ওকালতনামা দিলে আইনজীবীদের বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করেন অতিরিক্ত চট্টগ্রাম মহানগর সরকারি কৌঁসুলি নেজাম উদ্দীন।