ঢাকা, জাকির হোসেন: সম্প্রতি বাংলাদেশের ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) আধিকারিক গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদকে নিয়ে একটি ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে, যাতে তাকে উলঙ্গ হয়ে অসংলগ্ন অবস্থায় যৌনকর্ম সম্পর্কিত কিছু করতে দেখা যায়, এ ব্যাপারটি নিয়ে পুলিশ বাহিনীর মধ্যে তুমুল আলোচনা-সমালোচনার জন্ম হয়৷ এই ঘটনার রেশের মধ্যেই এবার হারুনকে বদলি করা হলো৷ তাকে গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) দায়িত্ব থেকে বদলি করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম ও অপারেশন্স)–এর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এদিকে বিরোধী দলের প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধা রাজনীতিবিদ ও নানা সময়ে সাংসদদের ওপর হামলা করে বহুল বিতর্কিত পুলিশের আরেক আধিকারিক বিপ্লব কুমার সরকারকে ডিএমপির (অ্যাডমিন অ্যান্ড গোয়েন্দা- দক্ষিণ) হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আরও ৪ ডিএমপির কর্মকর্তাকে বদলির আদেশ দেওয়া হয়েছে। ৩১ জুলাই রাতে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান স্বাক্ষরিত আদেশে এসব বদলি করা হয়। এ নিয়ে পৃথক দুটি আদেশ দেওয়া হয়। এক আদেশে বদলি হন, ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, সঞ্জিত কুমার রায় ও খোন্দকার নুরুন্নবী। এদের মধ্যে বিপ্লব কুমার সরকারকে অ্যাডমিন অ্যান্ড গোয়েন্দা-দক্ষিণ বিভাগে, সঞ্জিত কুমার রায়কে গোয়েন্দা-উত্তর বিভাগে ও খোন্দকার নুরুন্নবীকে অপারেশনস বিভাগে বদলি করা হয়েছে। এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর করা হবে বলেও আদেশে জানানো হয়।
এর আগে, ৩১ জুলাই বুধবার এক পৃথক আদেশে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (লজিস্টিকস, ফিন্যান্স অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট) মহাম্মদ আশরাফুজ্জামানকে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা), ডিএমপির (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) খোন্দকার মহিদ উদ্দিনকে লজিস্টিকস, ফিন্যান্স অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট বিভাগে এবং গোয়েন্দা বিভাগের মোহাম্মদ হারুন অর রশীদকে ডিএমপির ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স বিভাগে বদলি করা হয়।
এদিকে, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) বাড্ডা থানায় নতুন অফিসার ইনচার্জ হিসেবে পুলিশ পরিদর্শক পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমানের স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ বদলির আদেশ দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে ডিবি প্রধানের দায়িত্ব পালন করতেন হারুন অর রশীদ। সম্প্রতি বাংলাদেশের কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে ডিবি হেফাজতে নিয়ে আলোচনায় ছিলেন তিনি। ওই সমন্বয়কদের মধ্যে তিনজনকে ধরে নেওয়া হয় হাসপাতাল থেকে। তাঁদের সঙ্গে এক টেবিলে বসে খাওয়ার বেশ কয়েকটি ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন ডিবি কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলে ব্যাপক আলোচনার পাশাপাশি হাইকোর্টও উষ্মা প্রকাশ করেন। এমনকি ডিবি অফিসে নিয়ে হারুনের এই আপ্যায়নের একটা নামও দেয় নেটিজেনরা- 'হারুনের ভাতের হোটেল'৷ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনার উন্মেষ হয় দেড় বছর আগে যা এখনও বিদ্যমান৷ গত ২৯ জুলাই সোমবার একটি রিট আবেদনের শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ ছয় সমন্বয়কের কাঁটাচামচ দিয়ে খাওয়ার প্রসঙ্গ তুললে হাইকোর্ট বলেন, "এগুলো করতে আপনাকে কে বলেছে? কেন করলেন এগুলো? জাতিকে নিয়ে মশকরা করবেন না। যাকেই নেন ধরে, একটি খাবার টেবিলে বসিয়ে দেন।"