নিজস্ব সংবাদাতা : আর কোনও বেনিয়ম নয়। জেলাশাসকের কড়া হুঁশিয়ারির পর আজ, মঙ্গলবার থেকে ঘড়ি ধরে ভোর সাড়ে ৫টায় সকলের জন্য খুলে দেওয়া হয় তারা মায়ের গর্ভগৃহ। তেমনই ভোগের সময় দেড়ঘণ্টা বন্ধ থাকবে মন্দির। দেবী দর্শনের জন্য আর ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখা যাবে না সাধারণ পুণ্যার্থীদের। ভোরে গর্ভগৃহ খোলার পর প্রথম একঘণ্টা সাধারণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা পুণ্যার্থীদের পুজো গ্রহণ করা হবে। বিশেষ লাইনে পুজো দেওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই মন্দির কমিটির অফিস থেকে কুপন সংগ্রহ করতে হবে। বেশ কিছুদিন ধরেই তারাপীঠ মন্দিরে চরম বিশৃঙ্খলা চলছিল। মোটা টাকার বিনিময়ে সঙ্গে সঙ্গে মিলছিল দেবীর দর্শন। সেক্ষেত্রে সাধারণ লাইনের পুণ্যার্থীদের ঘণ্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করিয়ে রাখা হচ্ছিল। তেমনই পালাদার সেবাইতদের একাংশ মন্দিরটাকে তাদের নিজস্ব সম্পত্তি ভেবে নিয়েছিল। নির্দিষ্ট কোনও সময় ছিল না। তাদের ইচ্ছেতেই গর্ভগৃহ খোলা ও বন্ধ হচ্ছিল। এমনকী লক্ষ লক্ষ টাকায় পালা অন্যকে বিক্রি করে দিচ্ছিল। আর সেই ব্যক্তি টাকা তুলতে দেবী দর্শনে নিজের মতো করে 'রেট' করে দিচ্ছিল। সেক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ের আগে বা পরে মন্দির খোলা হচ্ছিল। টাকা উপার্জনের নেশায় ভোগ ও আরতিরও নির্দিষ্ট সময় ভুলে যাচ্ছিলেন বরাত পাওয়া লোকজনেরা। যেখানে তীর্থভূমির পর্যটন বিকাশের জন্য রাজ্য সরকার কোটি কোটি ব্যয় করে মন্দিরের নবরূপ দিয়ে চলেছেন, সেখানে এক শ্রেণির মানুষের জন্য প্রাচীন এই সাধনাক্ষেত্রের গরিমা নষ্ট হচ্ছিল। এমনই নানা অভিযোগের পাহাড় জমছিল জেলা প্রশাসনিক স্তরে। অবশেষে রবিবার মন্দির কমিটির সঙ্গে বৈঠকে বসেন জেলাশাসক বিধান রায়। তিনি সতর্ক করে বলেন, এমনটা চলতে থাকলে ট্রাস্টি করে দেওয়া হবে। পুণ্যার্থীদের অসুবিধে হয় এমন কোনও কাজ করা যাবে না। সেই সঙ্গে মন্দির খোলা, ভোগ ও আরতি নির্দিষ্ট সময় মেনে যাতে হয় সেব্যাপারে কড়া নির্দেশ দেন তিনি। গর্ভগৃহের ভিতরে মোবাইল, নারকেল ফাটানো, আলতার ব্যবহার বন্ধ করার জন্য বলা হয়। নিয়ম যাতে মানা হয় সেজন্য প্রবীণ সেবাইতদের নিয়ে উপদেষ্টা কমিটি গঠন করার জন্য বলেন তিনি।
সেইমতো সোমবার দুপুরে মন্দির কমিটি বৈঠকে বসেন। বেশকিছু সিদ্ধান্তের পাশাপাশি উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়। মন্দির কমিটির সভাপতি বলেন, জেলা প্রশাসনের নির্দেশ মেনে আজ মঙ্গলবার থেকে শিলামূর্তি স্নানের পর ভোর সাড়ে ৫টায় সকলের জন্য খুলে দেওয়া হবে গর্ভগৃহের দরজা। প্রথম একঘণ্টা সাধারণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা পুণ্যার্থী প্রবেশ করানো হবে। পরে বিশেষ লাইনে থাকা ভক্তদের প্রবেশ করানো হবে। এভাবেই নির্দিষ্ট সময় অন্তর সাধারণ ও বিশেষ লাইনে থাকা ভক্তদের গর্ভগৃহে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে। তবে এবার থেকে গর্ভগৃহ ও বারান্দায় নারকেল ফাটানো, দেবী বিগ্রহে আলতা, অগরু দেওয়া কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে দেবীর চরণে স্পর্শ করিয়ে নিতে পারবেন ভক্তরা। সেই সঙ্গে গর্ভগৃহে মোবাইল বের করে বিগ্রহের ছবি তোলা নিষিদ্ধ। তারাপীঠ মন্দির কমিটির তারামায়ের সেবাইত প্রবোধ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, পালাদার সেবাইত মন্দির কমিটির সহযোগিতায় পুজো পরিচালনা করবেন। নির্দিষ্ট সময় মেনে বিকেল সাড়ে ৫টায় ও
প্রত্যেকদিন দুপুর ১২টায় দেবীকে ভোগ নিবেদন করা হবে। তার আগে ভোগের নামে অন্নপ্রসাদ বিলি করে ভক্তদের প্রতারণা করা চলবে না।বিকেল ৫টা থেকে সাড়ে ৬টার মধ্যে দেবীর সন্ধ্যারতি ও শীতল ভোগ নিবেদন সম্পন্ন করতে হবে। যদিও পুণ্যার্থীরা বলেন, এর আগেও মন্দির কমিটি একাধিক নিয়ম জারি করেছিল। কিন্তু সেবাইতরাই সেই নিয়ম ভেঙে এসেছেন। জেলাশাসক বিধান রায় বলেন, প্রশাসনিক নির্দেশ কার্যকর করা হচ্ছে কি না সেটা দেখতে মহকুমা শাসক ও পুলিস আচমকা মন্দির পরিদর্শনে যাবেন। তারাপীঠ মন্দিরে পুজো দেওয়ার সময়ে গর্ভগৃহের ভিতরে মোবাইল নিয়ে ছবি তোলা নিষিদ্ধ করল প্রশাসন।