জাকির হোসেন: পশ্চিমবঙ্গে এক শিশুর শরীরে বার্ড ফ্লু ভাইরাসের এইচ৯ এন২ ধরন শনাক্ত হয়েছে। শিশুটির বয়স চার বছর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) গতকাল মঙ্গলবার এ তথ্য জানিয়েছে।
ভারতে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার কোনও মানুষের শরীরে এইচ৯এন২ বার্ড ফ্লু ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা গেল। এর আগে ২০১৯ সালে এক ভারতীয়র শরীরে এই বার্ড ফ্লু ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা গিয়েছিল। ৫ বছর পর ফের বাড়ছে উদ্বেগ। ভাইরাসের কথা মাথায় রেখে নজরদারি জারি রেখেছে স্বাস্থ্য ভবন।
ডব্লিউএইচও জানিয়েছে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে শিশুটিকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। শ্বাসকষ্ট, তীব্র জ্বর ও পেটের সমস্যায় ভুগছিল সে। শিশুদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসা নিতে হয়েছিল। মাস তিনেক চিকিৎসার পর বাড়ি ফিরেছে শিশুটি।
ডব্লিউএইচও এর তরফে পাওয়া খবর অনুযায়ী, রোগীর বাড়িতে হাঁস-মুরগির ফার্ম ছিল। সম্ভবত সেখান থেকেই বার্ড ফ্লু ভাইরাসে আক্রান্ত হয় শিশুটি। তবে বিষয়টি যে যথেষ্ট উদ্বেগজনক তা অস্বীকার করছে না বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ইতিমধ্যে এই খবর পাওয়ার পর নড়েচড়ে বসেছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর৷
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে বাবা-মায়ের সঙ্গে কলকাতার বাড়িতে এসেছিল আড়াই বছরের ওই শিশু। ফেব্রুয়ারির শেষে সিঙ্গাপুর হয়ে অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে যায় শিশুর পরিবার। অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছানোর পর তার শরীরে জ্বরের উপসর্গ দেখা দেয় বলে সূত্রের খবর। এরপর নমুনা পরীক্ষা করা হলে ‘বার্ড ফ্লু’ ভাইরাস ধরা পড়ে।
উল্লেখ্য, এই এইচ৯এন২ ভাইরাস এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ড ফ্লু বলেও পরিচিত। এটা প্রাথমিকভাবে পাখিদের আক্রান্ত করে। এই আবহে বার্ড ফ্লুতে আক্রান্ত কোনও পাখির সংস্পর্শে এলে সেই ব্যক্তির শরীরে সেই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটতে পারে। এর জেরে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। তবে মানুষ থেকে মানুষে সাধারণত এটা সংক্রমিত হয় না। তবে একবার যদি কোনও মানুষের থেকে তা অন্য কোনও মানুষের শরীরে সংক্রমিত হয়, তাহলে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই ভাইরাসটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতে উপস্থিত। তবে ভারতে ২০১৯ সালের পর এই প্রথম কেউ আক্রান্ত হল এই ভাইরাসে।
প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে দাবি করা হয়েছিল, কলকাতা থেকে ঘুরে যাওয়া এক শিশু অস্ট্রেলিয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল বার্ড ফ্লু-তে সংক্রমিত হয়ে। সেই ক্ষেত্রে জিন সিকোয়েন্সিং করে ভাইরাসটি এইচ৫এন১-এর সাবটাইপ বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে জানিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া কর্তৃপক্ষ। রিপোর্ট অনুযায়ী, ১ মার্চ কলকাতা থেকে সেই শিশুটি অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে গিয়েছিল। ২ মার্চ সে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল এবং ২২ মে তাকে সুস্থ অবস্থায় হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাম্প্রতিক দাবি এই ঘটনা নিয়েই কি না, তা নিয়ে স্পষ্ট কোনও ধারণা মেলেনি। তবে মনে করা হচ্ছে, এই দুই রিপোর্ট একই ঘটনা নিয়েই হয়ে থাকতে পারে।
চলতি মাসেই বার্ড ফ্লুতে আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে মেক্সিকোতে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, ৫৯ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি গত এপ্রিলে জ্বরে আক্রান্ত হন। তিন সপ্তাহ গুরুতর অসুস্থ থাকার পরেই তাঁর মৃত্যু হয়।