Skip to content

প্রত্যন্ত গ্রামে আধুনিক শিক্ষার উত্থান, ঝাড়গ্রামের প্রাথমিক স্কুলে এড-টেক বিপ্লব!

ঝাড়গ্রাম, নিজস্ব প্রতিবেদন : শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে হাত মিলিয়ে রাইটওয়াক ফাউন্ডেশন, আধুনিক শিক্ষার পথে এগোচ্ছে ব্লু বার্ড স্কুল। ঝাড়গ্রাম জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রাম খড়িকামাথানি। সেই গ্রামের অন্যতম শিক্ষাকেন্দ্র গোহালডিহা জাতি উপজাতি ব্লু বার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়, যা পরিচালনা করে গোহালডিহা জাতি উপজাতি ব্লু বার্ড নারীকল্যাণ কেন্দ্র। দীর্ঘদিন ধরেই পিছিয়ে পড়া এই অঞ্চলে শিক্ষার প্রসারে নানা বাধা ছিল—যোগাযোগব্যবস্থার অভাব, প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা, এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে ডিজিটাল দক্ষতার ঘাটতি। কিন্তু বর্তমানে স্কুলটি এক অন্যরকম শিক্ষাবিপ্লবের সাক্ষী হচ্ছে।দিল্লিভিত্তিক সংস্থা রাইটওয়াক ফাউন্ডেশন এই স্কুলে প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা চালু করেছে, যার ফলে ছাত্রছাত্রীরা আধুনিক শিক্ষার সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে। ট্যাবলেট-ভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এবং পিয়ার লার্নিং-এর সংমিশ্রণে নতুন এক শিক্ষাদর্শ তৈরি হয়েছে। গত এক বছর ধরে এই পদ্ধতির সুফল মিলছে, আর সারা দেশের অন্যান্য স্কুলের তুলনায় এই স্কুলের শিক্ষার্থীরা বেশ ভালো ফল করছে। বর্তমানে ৮০০-এর বেশি ছাত্রছাত্রী অধ্যয়নরত এই স্কুলে, যাদের ৮৫% অনগ্রসর পরিবারের এবং ৭০% প্রথম প্রজন্মের শিক্ষার্থী। বেশিরভাগের বাড়িতে স্মার্টফোনও নেই, ফলে প্রযুক্তি-ভিত্তিক শিক্ষার সুযোগ তাদের জন্য এক দুর্লভ অভিজ্ঞতা ছিল। রাইটওয়াক ফাউন্ডেশনের এড-টেক প্রোগ্রামের ম্যানেজার অনির্বাণ জানালেন, "আমরা গত দুই বছর ধরে সারা দেশে বিভিন্ন স্কুলে এড-টেক প্রোগ্রাম চালাচ্ছি। কিন্তু এই স্কুলে কাজ করার সময় একাধিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে। ইন্টারনেট সমস্যা, বড় ক্লাসরুমের অভাব, ছাত্রছাত্রীদের প্রযুক্তির সঙ্গে অপরিচয়—সব মিলিয়ে প্রথমদিকে পরিস্থিতি সহজ ছিল না। তবে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সহযোগিতা আর ছাত্রছাত্রীদের আগ্রহের জন্য আমরা সফল হয়েছি।"আই আই টি খড়গপুরের প্রাক্তন ওই কর্মী আরও বলেন, "অনেক সংস্থা দাবি করে তারা প্রত্যন্ত অঞ্চলে কাজ করছে, কিন্তু বাস্তবে তা অর্ধসত্য। আমার উদ্দেশ্য ছিল সত্যিকার অর্থেই সমাজের মূলস্রোত থেকে পিছিয়ে থাকা স্কুলে আধুনিক শিক্ষা পৌঁছে দেওয়া। এখন, এখানে আমাদের প্রজেক্টের আওতায় থাকা শিক্ষার্থীদের শিক্ষার প্রতি আগ্রহ এবং একাগ্রতা বেড়েছে।"

কীভাবে চলছে এই আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা?

প্রযুক্তিনির্ভর এই শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রতিটি শিক্ষার্থী নির্দিষ্ট পিরিয়ডে ট্যাব নিয়ে বসে অঙ্ক কষে, কুইজ খেলে, বা বিভিন্ন শিক্ষামূলক গেমের মাধ্যমে শেখে।

পিয়ার লার্নিং-এর মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীরা একে অপরকে সাহায্য করছে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে প্রতিটি শিক্ষার্থীর শেখার স্তর বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।

শিক্ষকরা ক্লাসে একাধিক শিক্ষাবান্ধব ডিজিটাল কনটেন্ট ব্যবহার করছেন।

ফলস্বরূপ, ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের মধ্যে পড়াশোনা সংক্রান্ত সমস্যা নিজেরাই সমাধান করতে পারছে, যা তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াচ্ছে।

বিষয়টি নিয়ে স্কুলের সম্পাদিকা পুষ্পিতা সাহু জানান,
"প্রথমদিকে শিক্ষকদের কিছুটা সময় লেগেছিল প্রযুক্তির সঙ্গে অভ্যস্ত হতে, কিন্তু এখন আমাদের শিক্ষক-শিক্ষিকারা এই পদ্ধতি ভালোভাবে রপ্ত করে ফেলেছেন। ছাত্রছাত্রীরাও অত্যন্ত আগ্রহী।" গ্লোবাল স্বীকৃতি ও শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অংশীদারিত্ব রাইটওয়াক ফাউন্ডেশনের এই প্রকল্প ইতিমধ্যেই গ্লোবাল রিকগনিশন পেয়েছে। এবার তারা শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সরাসরি কাজ শুরু করতে চলেছে। এই অংশীদারিত্ব প্রসঙ্গে অনির্বাণ জানান, "এই বছর থেকে আমরা শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আরও গবেষণাভিত্তিক কাজ করবো, যাতে শিক্ষাক্ষেত্রে প্রযুক্তির প্রভাব আরও গভীরভাবে বোঝা যায় এবং তা কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা যায়।"একটি নতুন দৃষ্টান্ত শিক্ষাক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার সাধারণত শহর বা উন্নত এলাকার স্কুলগুলিতেই সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু খড়িকামাথানির মতো প্রত্যন্ত গ্রামে আধুনিক শিক্ষা পৌঁছে দেওয়ার এই উদ্যোগ দেশের অন্যান্য পিছিয়ে পড়া অঞ্চলগুলির জন্য একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি এই মডেল সফলভাবে আরও বেশি সংখ্যক স্কুলে ছড়িয়ে দেওয়া যায়, তাহলে ভারতের পিছিয়ে পড়া এলাকাগুলিতে শিক্ষার মানোন্নয়ন সম্ভব হবে। প্রযুক্তির সাহায্যে প্রত্যন্ত গ্রামের শিশুদের শিক্ষার পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার এই অনন্য উদ্যোগ ভবিষ্যতে আরও অনেক স্কুলের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে উঠতে পারে।

Latest